< বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ 3 >

1 এখন ইস্রায়েলের মধ্যে যাদের কনানের সমস্ত যুদ্ধের বিষয়ে জানা ছিল না, সেই লোকদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য
যেসব ইস্রায়েলী কনানে কোনও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা লাভ করেনি, তাদের পরীক্ষা করার জন্য সদাপ্রভু এসব জাতিকে অবশিষ্ট রেখেছিলেন:
2 এবং ইস্রায়েল সন্তানদের পুরুষপরম্পরাকে শিক্ষা দেবার জন্যে, অর্থাৎ যারা আগে যুদ্ধ জানত না; তাদেরকে তা শেখাবার জন্য সদাপ্রভু এই সব জাতিকে অবশিষ্ট রেখেছিলেন তারা হল
(ইস্রায়েলীদের সেই বংশধরদের যুদ্ধবিগ্রহ শিক্ষা দেওয়ার জন্যই শুধুমাত্র তিনি এরকম করলেন, ইতিপূর্বে যাদের যুদ্ধের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না)
3 পলেষ্টীয়দের পাঁচ রাজা, বাল হর্ম্মোণ পর্বত থেকে লিব হমাত ঢোকার রাস্তা পর্যন্ত লিবানোন পর্বতে বসবাসকারী সমস্ত কনানীয়, সীদোনীয় ও হিব্বীয়রা।
ফিলিস্তিনীদের পাঁচজন শাসনকর্তা, বায়াল-হর্মোণ পর্বত থেকে লেবো-হমাৎ পর্যন্ত বিস্তৃত লেবাননের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী সমস্ত কনানীয়, সীদোনীয় এবং হিব্বীয় জাতি।
4 এরা ইস্রায়েলের পরীক্ষার জন্য, অর্থাৎ সদাপ্রভু তাদের পিতৃপুরুষদেরকে মোশি মাধ্যমে যে সব আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সে সব তারা পালন করে কি না, তা যেন জানা যায়।
মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েলীদের পূর্বপুরুষদের সদাপ্রভু যে আদেশগুলি দিয়েছিলেন, সেগুলি তারা পালন করে কি না, তা জানার জন্যই এই জাতিদের অবশিষ্ট রাখা হল।
5 ফলে ইস্রায়েলীয়রা কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের মধ্যে বাস করল;
ইস্রায়েলীরা কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়দের মধ্যে বসবাস করল।
6 আর তারা তাদের মেয়েদের বিয়ে করত, তাদের ছেলেদের সঙ্গে নিজেদের মেয়েদের বিয়ে দিত ও তাদের দেবতাদের সেবা করত।
ইস্রায়েলীরা তাদের মেয়েদের বিয়ে করে আনত ও নিজেদের মেয়েদের সঙ্গে তাদের ছেলেদের বিয়ে দিত, এবং তাদের দেবতাদের সেবা করত।
7 আর ইস্রায়েলীয়রা সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যেটা মন্দ, তাই করল ও নিজেদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে গেল। তারা বাল দেবতাদের ও আশেরা দেবীদের সেবা করল।
সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা মন্দ ইস্রায়েলীরা তাই করল; তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে গিয়ে বায়াল-দেবতাদের ও আশেরা-দেবীদের সেবা করল।
8 অতএব ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হল, আর তিনি অরাম-নহরয়িমের রাজা কূশন রিশিয়াথয়িমের হাতে তাদেরকে বিক্রি করলেন, আর ইস্রায়েলীয়রা আট বছর পর্যন্ত কূশন রিশিয়াথয়িমের দাসত্ব করল।
সদাপ্রভুর ক্রোধ ইস্রায়েলীদের বিরুদ্ধে প্রজ্বলিত হল, আর তিনি তাদের অরাম-নহরয়িমের রাজা সেই কূশন-রিশিয়াথয়িমের হাতে বিক্রি করে দিলেন, ইস্রায়েলীরা আট বছর যাঁর শাসনাধীন হয়ে থাকল।
9 পরে ইস্রায়েলীয়রা সদাপ্রভুর কাছে কাঁদল এবং সদাপ্রভু এক জনকে উঠালেন যে ইস্রায়েলীয়দের সাহায্য ও উদ্ধার করতে পারেন। সে অৎনীয়েল (কনসের ছেলে), কালেবের ছোট ভাই।
কিন্তু তারা যখন সদাপ্রভুর কাছে কেঁদে উঠল, তিনি তাদের জন্য এক রক্ষাকর্তাকে—কালেবের ছোটো ভাই কনসের ছেলে অৎনীয়েলকে—উত্থাপিত করলেন, যিনি তাদের রক্ষা করলেন।
10 ১০ সদাপ্রভুর আত্মা তাঁর উপরে আসলেন, আর তিনি ইস্রায়েলের বিচার করতে লাগলেন এবং তিনি যুদ্ধের জন্য গেলেন, আর সদাপ্রভু অরাম-রাজ কূশন রিশিয়াথয়িমকে তাঁর হাতে সমর্পণ করলেন; এটা ছিল অৎনীয়েলের ক্ষমতা যা কূশন রিশিয়াথয়িমকে পরাজিত করেছিল।
সদাপ্রভুর আত্মা অৎনীয়েলের উপর নেমে এলেন, আর তিনি ইস্রায়েলীদের বিচারক হলেন এবং যুদ্ধযাত্রা করলেন। সদাপ্রভু অরামের রাজা কূশন-রিশিয়াথয়িমকে সেই অৎনীয়েলের হাতে সমর্পণ করলেন, যিনি তাঁকে পরাজিত করলেন।
11 ১১ এই ভাবে চল্লিশ বছর পর্যন্ত দেশ শান্তিতে থাকল; পরে কনসের ছেলে অৎনীয়েলের মৃত্যু হল।
অতএব কনসের ছেলে অৎনীয়েলের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত চল্লিশ বছরের জন্য দেশে শান্তি বজায় থাকল।
12 ১২ পরে ইস্রায়েলীয়রা সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যেটা মন্দ, আবার তাই করল; অতএব সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যেটা মন্দ, তা করায় সদাপ্রভু ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে মোয়াব-রাজ ইগ্লোনকে শক্তিশালী করলেন।
আবার ইস্রায়েলীরা সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা মন্দ তাই করল, এবং যেহেতু তারা এরকম মন্দ কাজ করল, তাই সদাপ্রভু মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে ইস্রায়েলের উপর শক্তিপ্রদর্শন করতে দিলেন।
13 ১৩ রাজা ইগ্লোন অম্মোনলেকীয়দেরকে ও অমালেককে একত্র করলেন এবং তারা গিয়ে ইস্রায়েলকে পরাজিত করলেন ও খর্জ্জূরপুর অধিকার করলেন।
অম্মোনীয় ও অমালেকীয়দের সঙ্গে নিয়ে এসে ইগ্লোন ইস্রায়েলকে আক্রমণ করলেন, এবং খর্জুরপুর অধিকার করে নিলেন।
14 ১৪ ইস্রায়েলীয়রা আঠার বছর পর্যন্ত মোয়াব-রাজ ইগ্লোনের দাসত্ব করল।
ইস্রায়েলীরা আঠারো বছর যাবৎ মোয়াবের রাজা ইগ্লোনের শাসনাধীন হয়ে থাকল।
15 ১৫ কিন্তু যখন ইস্রায়েলীয়রা সদাপ্রভুর কাছে কাঁদল; তখন সদাপ্রভু তাদের জন্য একজন উদ্ধারকর্তাকে, বিন্যামীনীয় গেরার ছেলে এহূদকে উঠালেন; তিনি বাঁ হাতে সব কাজ করতেন। ইস্রায়েলীয়রা তাঁর দ্বারা মোয়াব-রাজ ইগ্লোনের কাছে উপহার পাঠালেন।
ইস্রায়েলীরা আবার সদাপ্রভুর কাছে কেঁদে উঠল, এবং তিনি তাদের এক রক্ষাকর্তা দিলেন—যিনি হলেন বিন্যামীনীয় গেরার ছেলে ন্যাটা এহূদ। ইস্রায়েলীরা তাঁকে রাজস্ব-অর্থ সমেত মোয়াবরাজ ইগ্লোনের কাছে পাঠাল।
16 ১৬ এহূদ নিজের জন্য একহাত লম্বা একটা দুই দিকে ধারযুক্ত তরোয়াল তৈরী করে নিজের ডান উরুর কাপড়ের ভিতরে বেঁধে রাখলেন।
এহূদ প্রায় 45 সেন্টিমিটার লম্বা এবং উভয় দিকে ধারবিশিষ্ট একটি ছোরা তৈরি করলেন, ও সেটি তিনি তাঁর পোশাকের নিচে তাঁর ডান ঊরুতে বেঁধে রাখলেন।
17 ১৭ তিনি মোয়াব-রাজ ইগ্লোনের কাছে উপহার নিয়ে গেলেন; (এই ইগ্লোন অত্যন্ত মোটা লোক ছিলেন।)
তিনি মোয়াবের রাজা সেই ইগ্লোনের কাছে সেই রাজস্ব-অর্থ পেশ করলেন, যিনি অত্যন্ত স্থূলকায় এক ব্যক্তি ছিলেন।
18 ১৮ এহূদের উপহার দেওয়া হয়ে গেলে তিনি ঐ উপহার বহনকারীদের বিদায় দিলেন।
সেই রাজস্ব-অর্থ পেশ করার পর এহূদ তাদের বিদায় করে দিলেন, যারা তা বহন করে এনেছিল।
19 ১৯ তিনি নিজে গিল্‌গলে পাথরের তৈরী মূর্তির কাছ থেকে ফিরে এলেন এবং বললেন, “হে রাজা, আপনার জন্য আমার কাছে একটি গোপন কথা আছে।” ইগ্লোন বললেন, “চুপ চুপ!” এবং তাঁর সব সেবকেরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কিন্তু গিল্‌গলের নিকটবর্তী সেই পাথর-প্রতিমাগুলির কাছে পৌঁছানোর পর আবার তিনি ইগ্লোনের কাছে ফিরে এসে বললেন, “হে মহারাজ, আপনার জন্য আমার কাছে এক গোপন সংবাদ আছে।” রাজামশাই তাঁর সেবকদের বললেন, “আমাদের একা ছেড়ে দাও!” আর তারা সবাই বাইরে চলে গেল।
20 ২০ আর এহূদ তাঁর কাছে এলেন; রাজা একাকী নিজের উপর তলার ঠান্ডা ঘরে বসেছিলেন; এহূদ বললেন, আমার কাছে আপনার জন্য ঈশ্বরের একটি বাক্য বলার আছে; রাজা তাঁর নিজের আসন থেকে উঠলেন।
রাজামশাই যখন তাঁর প্রাসাদের উপরতলার ঘরে একা বসেছিলেন, তখন এহূদ তাঁর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “আপনার জন্য আমার কাছে ঈশ্বরের এক বাণী আছে।” রাজামশাই যেই না তাঁর আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন,
21 ২১ তখন এহূদ নিজের বাঁ হাত বাড়িয়ে ডান ঊরু থেকে সেই খড়গ নিয়ে তাঁর শরীরে বিদ্ধ করলেন,
এহূদ তাঁর বাঁ হাত বাড়িয়ে ডান ঊরু থেকে সেই ছোরাটি টেনে বের করে সোজা রাজামশাই-এর পেটে ঢুকিয়ে দিলেন।
22 ২২ আর খড়গের সঙ্গে বাঁটও শরীরে ঢুকে গেল ও খড়গ মেদে আটকে গেল, সেইজন্য তিনি শরীর থেকে খড়গ বের করলেন না; আর তা পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেল।
এমনকি ছোরার সঙ্গে বাঁটটিও ভিতরে ঢুকে গেল, এবং তাঁর নাড়িভুঁড়ি বাইরে বেরিয়ে এল। এহূদ ছোরাটি টেনে বের করলেন না, এবং সেটি চর্বিতে আটকে থাকল।
23 ২৩ পরে এহূদ বারান্দায় বেরিয়ে এলেন এবং উপরের ঘরের দরজা বন্ধ করে খিল দিয়ে দিলেন।
পরে এহূদ বাইরে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন; তিনি উপরতলার ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে তাতে তালা লাগিয়ে দিলেন।
24 ২৪ পরে এহূদ চলে গেলে রাজার দাসেরা এল; তারা দেখল উপরের ঘরের দরজা বন্ধ। তারা ভাবল, তিনি নিজে অবশ্যই উপরের ঘরে আরাম করছেন।
তিনি চলে যাওয়ার পর দাসেরা এসে দেখল যে উপরতলার ঘরের দরজা তালাবন্ধ। তারা বলল, “রাজামশাই নিশ্চয় প্রাসাদের শৌচাগারে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছেন।”
25 ২৫ পরে তারা লজ্জিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল কিন্তু রাজা উপরের ঘরের দরজা খুলল না। তাই তারা চাবি নিয়ে এসে দরজা খুলল, দেখল তাদের প্রভু মারা গিয়ে মাটিতে পড়ে আছেন।
তারা বিব্রত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে গেল, কিন্তু রাজামশাই দরজা খুলছেন না দেখে তারা একটি চাবি নিয়ে দরজাটি খুলে ফেলল। সেখানে তারা দেখল যে তাদের মনিব মৃত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছেন।
26 ২৬ তারা যখন অপেক্ষা করছিল, তখন এহূদ পালিয়ে গেল এবং সেই পাথরের তৈরী মূর্ত্তি ছিল সেখান থেকে সিয়ীরাতে পালিয়ে গেল।
তারা যখন অপেক্ষা করছিল, তখন এহূদ পালিয়ে গেলেন। তিনি পাথর-প্রতিমাগুলি পার করে গেলেন ও পালিয়ে সিয়ীরাতে গিয়ে পৌঁছালেন।
27 ২৭ তিনি উপস্থিত হয়ে পাহাড়ী অঞ্চল ইফ্রয়িম প্রদেশে তূরী বাজালেন। ইস্রায়েলীয়রা তাঁর সঙ্গে পাহাড়ী অঞ্চল থেকে নেমে গেল, তিনি তাদের নেতৃত্ব দিলেন।
সেখানে পৌঁছে তিনি ইফ্রয়িমের পার্বত্য অঞ্চলে শিঙা বাজালেন, এবং ইস্রায়েলীরা তাঁর সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে গেল, ও এহূদ তাদের নেতৃত্ব দিলেন।
28 ২৮ তিনি তাদেরকে বললেন, “আমার পিছন পিছন এস, কারণ সদাপ্রভু তোমাদের শত্রু মোয়াবীয়দেরকে পরাজিত করেছেন।” তখন তারা তাঁর পিছন পিছন নেমে এল এবং মোয়াবের বিরুদ্ধে যর্দ্দনের পারঘাটা সব দখল করে নিল এবং কাউকেও নদী পার হতে দিল না।
“আমার অনুগামী হও,” তিনি আদেশ দিলেন, “কারণ সদাপ্রভু তোমাদের শত্রু মোয়াবকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করে দিয়েছেন।” অতএব তারা এহূদের অনুগামী হল এবং জর্ডনের হাঁটুজলবিশিষ্ট সেই স্থানগুলি অধিকার করে নিল, যেগুলি মোয়াবের দিকে উঠে যায়; তারা কাউকেই ওপারে যেতে দিল না।
29 ২৯ ঐ দিনের তারা মোয়াবের অনুমান দশহাজার লোককে হত্যা করল; তারা সব শক্তিশালী এবং সক্ষম পুরুষ ছিল। কেউই রক্ষা পেল না।
সেই সময় তারা প্রায় 10,000 মোয়াবীয়কে আঘাত করল, যারা সবাই ছিল সবল ও শক্তিশালী; একজনও পালাতে পারল না।
30 ৩০ সেই দিন থেকে মোয়াব ইস্রায়েলের শক্তির কাছে পরাজিত হল এবং আশী বছর দেশ শান্তিতে থাকল।
সেদিন মোয়াবকে ইস্রায়েলের শাসনাধীন করা হল, এবং আশি বছরের জন্য দেশে শান্তি বজায় থাকল।
31 ৩১ এহূদের পরে শম্‌গর (অনাতের ছেলে) পরবর্তী শাসক ছিল, তিনি পশুপালন করার লাঠি দিয়ে পলেষ্টীয়দের ছয়শো লোককে হত্যা করলেন; ইনিও ইস্রায়েলকে বিপদ থেকে মুক্ত করলেন।
এহূদের পর এলেন অনাতের ছেলে শম্‌গর, যিনি বলদের অঙ্কুশ দিয়ে 600 ফিলিস্তিনীকে আঘাত করলেন। তিনিও ইস্রায়েলকে রক্ষা করলেন।

< বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ 3 >