< ইয়োবের বিবরণ 1 >
1 ১ ঊষ দেশে ইয়োব নামে একজন লোক ছিলেন; তিনি নির্দোষ এবং সৎ ছিলেন, যিনি ঈশ্বরকে সম্মান করতেন এবং মন্দ থেকে দূরে থাকতেন।
ঊষ দেশে একজন লোক বসবাস করতেন, যাঁর নাম ইয়োব। তিনি ছিলেন অনিন্দনীয় ও ন্যায়পরায়ণ; তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন এবং কুকর্ম এড়িয়ে চলতেন।
2 ২ তাঁর সাত ছেলে এবং তিন মেয়ে জন্মায়।
তাঁর সাত ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল,
3 ৩ তাঁর সাত হাজার মেষ, তিন হাজার উঠ, পাঁচশো জোড়া বলদ এবং পাঁচশো গর্দ্দভী ছিল। তাঁর আরও অনেক দাস দাসী ছিল। পূর্ব দেশের লোকেদের মধ্যে এই লোকটি সব থেকে মহান ছিলেন।
এবং 7,000 মেষ, 3,000 উট, 500 জোড়া বলদ, 500 গাধি ও প্রচুর সংখ্যক দাস-দাসী তাঁর মালিকানাধীন ছিল। প্রাচ্যদেশীয় সব লোকজনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে ধনী মানুষ।
4 ৪ তাঁর নিরুপিত দিনের, তাঁর প্রত্যেক ছেলেরা তাদের নিজের নিজের ঘরে ভোজ দিত এবং লোক পাঠিয়ে তাদের বোনেদের আনাত তাদের সবার সঙ্গে খাবার খাওয়ার এবং পান করার জন্য।
তাঁর ছেলেরা পালা করে তাদের জন্মদিনে নিজেদের বাড়িতে ভোজের আয়োজন করত, এবং তাদের তিন বোনকেও তারা তাদের সঙ্গে ভোজনপান করার জন্য নিমন্ত্রণ করত।
5 ৫ যখন ভোজের দিন গুলো শেষ হত, ইয়োব লোক পাঠিয়ে তাদের আনতেন এবং তাদের আরও একবার ঈশ্বরের কাছে পবিত্র করতেন। তিনি খুব সকালে উঠতেন এবং তাঁর প্রত্যেক সন্তানের জন্য হোমবলি উত্সর্গ করতেন, কারণ তিনি বলতেন, “হয়ত আমার সন্তানেরা পাপ করেছে এবং তাদের হৃদয়ে ঈশ্বরকে অভিশাপ দিয়েছে।” ইয়োব সব দিন এরকম করতেন।
ভোজপর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর, ইয়োব তাদের শুচিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা করতেন। ভোরবেলায় তাদের প্রত্যেকের জন্য তিনি এই ভেবে হোমবলি উৎসর্গ করতেন যে, “হয়তো আমার সন্তানেরা পাপ করেছে ও মনে মনে ঈশ্বরকে অভিশাপ দিয়ে বসেছে।” এই ছিল ইয়োবের বহুদিনের নিয়মিত অভ্যাস।
6 ৬ এমন দিন একদিন যখন ঈশ্বরের পুত্ররা সদাপ্রভুর সামনে নিজেদের উপস্থিত করতে এলেন, শয়তানও তাদের মাঝে এলো।
একদিন স্বর্গদূতেরা সদাপ্রভুর সামনে নিজেদের উপস্থিত করার জন্য এলেন, এবং শয়তানও তাদের সঙ্গে এল।
7 ৭ সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে এসেছ?” তখন শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিল এবং বলল, “পৃথিবীর এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম এবং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিলাম।”
সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে এলে?” শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিল, “পৃথিবীর সর্বত্র এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করে এলাম।”
8 ৮ সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কি আমার দাস ইয়োবের প্রতি লক্ষ্য রেখেছ? কারণ তার মত পৃথিবীতে কেউ নেই, একটি নিখুঁত এবং সৎ লোক, যে ব্যক্তি ঈশ্বরকে ভয় করে এবং মন্দ থেকে দূরে থাকে।”
পরে সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “আমার দাস ইয়োবের দিকে কি তোমার নজর পড়েছে? পৃথিবীতে তার মতো আর কেউ নেই; সে অনিন্দনীয় ও ন্যায়পরায়ণ এমন এক মানুষ, যে ঈশ্বরকে ভয় করে এবং কুকর্ম এড়িয়ে চলে।”
9 ৯ তখন শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিল এবং বলল, “ইয়োব কি ঈশ্বরকে বিনা কারণে ভয় করে?
“ইয়োব কি বিনা স্বার্থে ঈশ্বরকে ভয় করে?” শয়তান উত্তর দিল
10 ১০ তুমি কি তার চারিদিকে বেড়া দাও নি, তার বাড়ির চারিদিকে এবং তার সব কিছুর চারিদিকে যা তার আছে? তুমি তার হাতের কাজে আর্শীবাদ করেছ এবং তার সম্পত্তি দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
“তুমি কি তার চারপাশে এবং তার পরিবারের ও তার সবকিছুর চারপাশে বেড়া দিয়ে রাখোনি? তুমি তার হাতের কাজে আশীর্বাদ করেছ, যেন তার মেষপাল ও পশুপাল দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
11 ১১ কিন্তু এখন তোমার হাত বাড়াও এবং তার যা কিছু আছে তাতে আক্রমণ কর এবং সে তোমাকে তোমার মুখের উপরেই ত্যাগ করবে।”
কিন্তু এখন তোমার হাত বাড়াও এবং তার কাছে থাকা সবকিছুকে আঘাত করো, আর সে নিশ্চয় তোমার মুখের উপরেই তোমাকে অভিশাপ দেবে।”
12 ১২ সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “দেখ, তার যা কিছু আছে তা তোমার হাতে আছে; কেবল তোমার হাত তার উপরে রাখবে না।” তাতে শয়তান সদাপ্রভুর সামনে থেকে চলে গেল।
সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “ঠিক আছে, তবে তার সবকিছুর উপরে তোমার অধিকার থাকল, কিন্তু স্বয়ং সেই লোকটির উপরে তুমি হস্তক্ষেপ কোরো না।” পরে শয়তান সদাপ্রভুর কাছ থেকে চলে গেল।
13 ১৩ পরে কোন এক দিন, যখন তাঁর ছেলেরা ও মেয়েরা তাদের বড় ভাইয়ের বাড়িতে খাচ্ছিল এবং আঙ্গুর রস পান করছিল,
একদিন ইয়োবের ছেলেমেয়েরা যখন তাদের বড়দাদার বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করছিল ও দ্রাক্ষারস পান করছিল,
14 ১৪ একজন বার্তাবাহক ইয়োবের কাছে এল এবং বলল, “বলদগুলো হাল দিচ্ছিল এবং গাধীগুলি তাদের পাশে ঘাস খাচ্ছিল;
তখন ইয়োবের কাছে এক দূত এসে বলল, “বলদেরা জমি চাষ করছিল ও পাশেই গাধারা চরছিল,
15 ১৫ শিবায়ীয়েরা তাদের আক্রমণ করল এবং তাদের নিয়ে চলে গেল। সত্যি, তারা তলোয়ারের আঘাতে দাসেদের মেরে ফেলেছে; আমি একা পালিয়ে আপনাকে খবর দিতে এসেছি।”
আর শিবায়ীয়েরা এসে আক্রমণ করে সেগুলি নিয়ে চলে গেল। তারা তরোয়াল চালিয়ে দাসদের মেরে ফেলল, এবং একমাত্র আমিই আপনাকে এই খবর দেওয়ার জন্য পালিয়ে আসতে পেরেছি!”
16 ১৬ যখন সে কথা বলছিল, আরেকজন এল এবং বলল, “ঈশ্বরের আগুন স্বর্গ থেকে পড়েছে এবং মেষপাল ও দাসেদের পুড়িয়ে দিয়েছে এবং আমি একা পালিয়ে আপনাকে খবর দিতে এসেছি।”
সে তখনও কথা বলছিল, ইতিমধ্যে আর এক দূত এসে বলল, “আকাশ থেকে ঈশ্বরের আগুন নেমে এসে মেষপাল ও দাসদের পুড়িয়ে ছারখার করে দিল, আর একমাত্র আমিই আপনাকে এই খবর দেওয়ার জন্য পালিয়ে আসতে পেরেছি!”
17 ১৭ যখন সে কথা বলছিল, আরেকজন এল এবং বলল, “কলদীয়েরা তিন দল হয়ে উটের দলকে আক্রমণ করে এবং তাদের নিয়ে যায়। সত্যি এবং তারা তলোয়ারের আঘাতে দাসেদের মেরে ফেলেছে এবং আমি একা পালিয়ে আপনাকে খবর দিতে এসেছি।”
সে তখনও কথা বলছিল, ইতিমধ্যে আর এক দূত এসে বলল, “কলদীয়রা তিনটি হানাদার দল গড়ে এসে আপনার উটগুলির উপর আক্রমণ চালাল ও সেগুলি নিয়ে চলে গেল। তারা তরোয়াল চালিয়ে দাসদের মেরে ফেলল, আর একমাত্র আমিই আপনাকে এই খবর দেওয়ার জন্য পালিয়ে আসতে পেরেছি!”
18 ১৮ যখন সে কথা বলছিল, আরেকজন এল এবং বলল, “আপনার ছেলেরা এবং মেয়েরা তাদের বড় ভাইয়ের বাড়িতে খাচ্ছিল এবং আঙ্গুর রস পান করছিল।
সে তখনও কথা বলছিল, ইতিমধ্যে আর এক দূত এসে বলল, “আপনার ছেলেমেয়েরা তাদের বড়দাদার বাড়িতে বসে খাওয়াদাওয়া করছিল ও দ্রাক্ষারস পান করছিল,
19 ১৯ একটা মহা ঝড় মরুভূমি থেকে এল এবং বাড়ির চার কোনে আঘাত করল আর এটা যুবকদের উপরে পড়ল এবং তারা মারা গেল আর আমি একা পালিয়ে আপনাকে খবর দিতে এসেছি।”
এমন সময় হঠাৎ করে মরুভূমি থেকে প্রচণ্ড এক ঝড় এসে আছড়ে পড়ল এবং সেই বাড়ির চার কোনায় আঘাত হানল। সেই বাড়িটি তাদের উপরে ভেঙে পড়ল ও তারা মারা গেল, আর একমাত্র আমিই আপনাকে এই খবর দেওয়ার জন্য পালিয়ে আসতে পেরেছি!”
20 ২০ তখন ইয়োব উঠে দাঁড়ালেন, নিজের কাপড় ছিঁড়লেন, মাথা নেড়া করলেন, মাটিতে মুখ নত করে শুয়ে ঈশ্বরকে আরাধনা বা উপাসনা করলেন।
একথা শুনে, ইয়োব উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন ও তাঁর মাথা কামিয়ে ফেললেন। পরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তিনি আরাধনা করে
21 ২১ তিনি বললেন, “আমি আমার মায়ের গর্ভ থেকে উলঙ্গ এসেছি এবং আমি উলঙ্গ হয়েই সেখানে ফিরে যাব। আমার কাছে যা ছিল তা সদাপ্রভু দিয়েছেন আর সদাপ্রভুই তা নিয়েছেন; সদাপ্রভুর নাম ধন্য হোক।”
বললেন: “মায়ের গর্ভ থেকে আমি উলঙ্গ হয়ে এসেছি, আর উলঙ্গ অবস্থাতেই আমি চলে যাব। সদাপ্রভু দিয়েছেন আর সদাপ্রভুই ফিরিয়ে নিয়েছেন; সদাপ্রভুর নাম প্রশংসিত হোক।”
22 ২২ এই সমস্ত বিষয়ে, ইয়োব কোন পাপ করলেন না, না তিনি বোকার মত ঈশ্বরকে দোষী করলেন।
এসব কিছুতে, ইয়োব অন্যায়াচরণের দোষে ঈশ্বরকে দোষী সাব্যস্ত করে পাপ করলেন না।