< যিরমিয়ের বই 6 >

1 “হে বিন্যামীনের লোকেরা, রক্ষা পাবার জন্য যিরূশালেম থেকে পালাও। তকোয় শহরে তূরী বাজাও। বৈৎ-হক্কেরমে সংকেত তোলো, কারণ উত্তর দিক থেকে অমঙ্গল ও ভয়ঙ্কর ধ্বংস উঁকি মারছে।
“ওহে বিন্যামীন গোষ্ঠীর লোকেরা, তোমরা সুরক্ষার জন্য পলায়ন করো! তোমরা জেরুশালেম থেকে পালিয়ে যাও! তকোয় নগরে তূরী বাজাও! বেথ-হক্কেরম থেকে সংকেত দেখাও! কারণ বিপর্যয় ও বিধ্বংসের জন্য উত্তর দিক থেকে আসছে এক ভয়ংকর ত্রাস।
2 সুন্দরী ও সুখভোগকারী সিয়োনের মেয়েকে আমি হত্যা করব।
কমনীয় ও সুন্দরী সিয়োন-কন্যাকে আমি ধ্বংস করব।
3 মেষপালক এবং তাদের ভেড়ার পাল তাদের কাছে যাবে; তারা তার বিরুদ্ধে চারিদিকে তাঁবু খাটাবে; প্রত্যেকে নিজের হাতে পাল চরাবে।
মেষপালকেরা তাদের পশুপাল নিয়ে তার বিরুদ্ধে আসবে; তারা তার চারপাশে তাদের তাঁবু স্থাপন করবে, প্রত্যেকে নিজের নিজের অংশে তাদের পশুপাল চরাবে।”
4 সদাপ্রভুর নামে তাকে আক্রমণ কর। ওঠ, আমরা দুপুর বেলায় আক্রমণ করি। এটি খুবই খারাপ বিষয় যে দিনের আলো কমে যাচ্ছে, সন্ধ্যার ছায়া পড়ছে।
“তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। ওঠো, আমরা মধ্যাহ্নেই তাদের আক্রমণ করি। কিন্তু হায়, দিনের আলো ম্লান হয়ে আসছে, আর সন্ধ্যের ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে।
5 তাই ওঠ, আমরা রাতেই আক্রমণ করি এবং তার দুর্গগুলি ধ্বংস করি।”
তাই ওঠো, চলো আমরা রাত্রিবেলা আক্রমণ করি এবং তার দুর্গগুলি ধ্বংস করে দিই!”
6 বাহিনীগনের সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “তার গাছপালা কেটে দাও এবং তা দিয়ে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে ঢিবি তৈরী কর। এটাই আক্রমণ করার সঠিক শহর, কারণ এটি অত্যাচারে ভরে গেছে।
বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “সব গাছ কেটে ফেলো আর জেরুশালেমের বিরুদ্ধে অবরোধ সৃষ্টি করো। এই নগরকে অবশ্য শাস্তি দিতে হবে; এরা উপদ্রবে পূর্ণ হয়েছে।
7 কূয়োর ঠান্ডা জল যেমন এতে ধরা থাকে, তেমন এই শহর তার দুষ্টতা ধরে রাখে। তার মধ্যে হিংস্রতা ও গণ্ডগোলের শব্দ শোনা যায়। তার অসুস্থতা ও আঘাত সব দিন আমার সামনে রয়েছে।
যেভাবে কোনো উৎস বেগে জল নির্গত করে, তেমনই সে ক্রমাগত দুষ্টতা বের করে থাকে। তার মধ্যে হিংস্রতা ও ধ্বংসের বাক্য প্রতিধ্বনিত হয়, তার রোগব্যাধি ও ক্ষতগুলি সবসময়ই আমার সামনে থাকে।
8 হে যিরূশালেম, শাসন গ্রহণ কর, না হলে আমি তোমার কাছ থেকে ফিরে যাব এবং তোমার দেশ ধ্বংস ও জনশূন্য করব।”
ওহে জেরুশালেম, সতর্ক হও, নইলে আমি তোমার কাছ থেকে ফিরে যাব এবং তোমার ভূমিকে উৎসন্ন করব, যেন কেউ এর মধ্যে বসবাস করতে না পারে।”
9 বাহিনীগনের সদাপ্রভু বলেন, “আঙ্গুরের মত যারা ইস্রায়েলে ছড়িয়ে আছে তাদের তারা জড়ো করবে। আঙ্গুর গাছ থেকে আঙ্গুর তোলার জন্য তোমার হাত বাড়াও।
বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “যেভাবে আঙুর খুঁটে খুঁটে চয়ন করা হয়, ইস্রায়েলের অবশিষ্ট লোকদেরও তারা তেমনই চয়ন করবে; আঙুর শাখাগুলিতে তোমরা আবার হাত দাও, যেন অবশিষ্ট আঙুরগুলিও তুলে নেওয়া যায়।”
10 ১০ আমি কাকে বললে ও কাকে সাবধান করলে তারা আমার কথা শুনবে? দেখ! তাদের কান বন্ধ হচ্ছে, তাই তারা মনোযোগ দেয় না। দেখ! সদাপ্রভুর বাক্য তাদের কাছে শোধরানোর জন্য এসেছে, কিন্তু তারা তা চায় না।
কার সঙ্গে আমি কথা বলব, কাকে সতর্কবাক্য দেব? কে শুনবে আমার কথা? তাদের কান বন্ধ হয়েছে তাই তারা পায় না শুনতে। সদাপ্রভুর বাক্য তাদের কাছে আপত্তিকর; তারা তাতে কোনও আনন্দ পায় না।
11 ১১ তাই আমি সদাপ্রভুর ক্রোধে পূর্ণ হয়েছি। আমি তা ভিতরে ধরে রাখতে রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। রাস্তার লোকেদের উপরে ও যুবকদের সভার উপরে একসঙ্গে তা ঢেলে দাও। প্রত্যেক স্বামীকে তার স্ত্রীর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে, প্রত্যেক প্রাচীনদেরও খুব বয়ষ্কদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে।
কিন্তু আমি সদাপ্রভুর ক্রোধে পূর্ণ, আমি আর তা ধরে রাখতে পারছি না। “রাস্তায় জড়ো হওয়া ছেলেমেয়েদের উপরে এবং একসঙ্গে একত্র হওয়া যুবকদের উপরে তা ঢেলে দাও। ঢেলে দাও তা স্বামী-স্ত্রীর উপরে এবং তাদের উপরে, যারা বৃদ্ধ ও বয়সের ভারে জর্জরিত।
12 ১২ আর ভূমি ও স্ত্রী সমেত তাদের বাড়ি পরের অধিকারে চলে যাবে। কারণ আমি এই দেশের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে শাস্তির হাত বাড়াব। এটি সদাপ্রভুর ঘোষণা।
তাদের খেতের জমি ও স্ত্রীদের সঙ্গে তাদের বসতবাড়িগুলিও আমি অন্যদের হাতে তুলে দেব, যখন আমি আমার হাত প্রসারিত করব, তাদের বিরুদ্ধে, যারা দেশের মধ্যে করবে বসবাস,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
13 ১৩ কারণ তারা ছোট ও বড় সবাই লাভের জন্য লোভ করে; এমন কি, ভাববাদী ও যাজকেরাও ছলনা করে।
“নগণ্যতম জন থেকে মহান ব্যক্তি পর্যন্ত, সকলেই লোভ-লালসায় লিপ্ত; ভাববাদী ও যাজকেরা সব এক রকম, তারা সকলেই প্রতারণার অনুশীলন করে।
14 ১৪ কিন্তু তারা অবহেলার সঙ্গে আমার লোকদের ভগ্নতা সুস্থ করে, যখন তারা বলে, ‘শান্তি! শান্তি!’ কিন্তু সেখানে শান্তি নেই।
তারা আমার প্রজাদের ক্ষত এভাবে নিরাময় করে, যেন তা একটুও ক্ষতিকর নয়। যখন কোনো শান্তি নেই, তখন ‘শান্তি, শান্তি,’ বলে তারা আশ্বাস দেয়।
15 ১৫ তারা কি তাদের সেই জঘন্য কাজের জন্য লজ্জিত? তাদের কোন লজ্জা নেই; তারা নম্রতা জানে না। তাই তারা তাদের সাথে পড়বে, যাদের আমি শাস্তি দেব। তাদের নত করা হবে।” সদাপ্রভু বলেন।
তাদের এই জঘন্য আচরণের জন্য তারা কি লজ্জিত? না, তাদের কোনও লজ্জা নেই; লজ্জারুণ হতে তারা জানেই না। তাই, পতিতদের মধ্যে তারাও পতিত হবে; আমি যখন তাদের শাস্তি দেব, তখন তাদেরও ভূপাতিত করব,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
16 ১৬ সদাপ্রভু এই কথা বলেন: রাস্তার চৌমাথায় দাঁড়াও ও দেখ; পুরানো পথের কথা জিজ্ঞাসা কর। ভাল পথ কোথায়? তখন সেই পথে চল এবং তোমরা নিজের অন্তরে বিশ্রাম পাবে। কিন্তু লোকেরা বলে, আমরা যাব না।
সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “তোমরা চৌমাথায় গিয়ে দাঁড়াও ও তাকিয়ে দেখো; পুরোনো পথের কথা জিজ্ঞাসা করো, জেনে নাও, উৎকৃষ্ট পথ কোন দিকে এবং সেই পথে চলো, তাহলে তোমরা নিজের নিজের প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাবে। কিন্তু তোমরা বললে, ‘আমরা এই পথ মাড়াব না।’
17 ১৭ আমি তোমাদের উপরে তূরীর ধ্বনি শোনার জন্য পাহারাদার নিযুক্ত করেছি। কিন্তু তারা বলেছে, আমরা শুনব না।
আমি তোমাদের উপরে প্রহরী নিযুক্ত করে বললাম, ‘তোমরা তূরীর ধ্বনি শোনো!’ কিন্তু তোমরা বললে, ‘আমরা শুনব না।’
18 ১৮ অতএব, হে জাতিরা, শোন! দেখ, তোমরা সাক্ষী, তাদের প্রতি কি হবে।
সেই কারণে ওহে জাতিবৃন্দের লোকেরা, তোমরা শোনো, সাক্ষীরা, তোমরা লক্ষ্য করো তাদের প্রতি কী ঘটবে।
19 ১৯ শোন, হে পৃথিবী! দেখ, আমি এই লোকেদের উপর বিপদ ডেকে আনব, যা তাদের পরিকল্পনার ফল। তারা আমার বাক্য বা ব্যবস্থায় মনোযোগ দেয়নি, কিন্তু তার পরিবর্তে তারা অগ্রাহ্য করেছে।
ও পৃথিবী শোনো, আমি এই জাতির উপরে বিপর্যয় নামিয়ে আনছি, তা হবে তাদের পরিকল্পনার ফল, কারণ তারা আমার কথা শোনেনি এবং তারা আমার বিধান অগ্রাহ্য করেছে।
20 ২০ শিবা থেকে আমার কাছে কেন ধূপ আসে? কিংবা দূর দেশ থেকে যে মিষ্টি সুগন্ধি আসে? তোমাদের হোমবলি আমার গ্রহণযোগ্য নয়, তোমাদের বলিদানও আমাকে সন্তুষ্ট করে না।
আমার কাছে শিবা দেশ থেকে আনা ধূপ বা দূরবর্তী দেশ থেকে আনা মিষ্টি বচ উৎসর্গ করা অর্থহীন। আমি তোমাদের হোমবলি সব গ্রাহ্য করব না, তোমাদের বলিদানগুলি আমাকে সন্তুষ্ট করে না।”
21 ২১ তাই সদাপ্রভু বলেন, “দেখ, আমি এই লোকেদের বিরুদ্ধে নানা বাধা স্থাপন করব। বাবারা ও ছেলেরা একসঙ্গে তাতে হোঁচট খাবে। প্রতিবেশীরা ও বন্ধুরা বিনষ্ট হয়ে যাবে।”
সেই কারণে সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “আমি এই লোকেদের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করব। বাবারা ও পুত্রেরা একসঙ্গে তাতে হোঁচট খাবে; প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবেরা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
22 ২২ সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “দেখ, উত্তর দেশ থেকে একদল লোক আসছে। কারণ দূর দেশ থেকে একটি বড় জাতি উত্তেজিত হয়ে আসছে।
সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “দেখো, উত্তরের দেশ থেকে এক সৈন্যদল আসছে; পৃথিবীর প্রান্তসীমা থেকে এক মহাজাতিকে উত্তেজিত করা হয়েছে।
23 ২৩ তারা ধনুক ও বর্শা নেবে। তারা নিষ্ঠুর এবং কোন দয়া নেই। সমুদ্রের গর্জনের মত তাদের শব্দ এবং তারা ঘোড়ায় চড়ে যোদ্ধার মত প্রস্তুত হয়ে আসছে, হে সিয়োনের মেয়ে।”
তাদের হাতে আছে ধনুক ও বর্শা; তারা নিষ্ঠুর, মায়ামমতা প্রদর্শন করে না। তারা ঘোড়ায় চড়লে সমুদ্রগর্জনের মতো শব্দ শোনায়; সিয়োন-কন্যা, তোমাকে আক্রমণ করার জন্য তারা যুদ্ধের সাজ পরে আসছে।”
24 ২৪ আমরা তাদের সম্বন্ধে খবর পেয়েছি। আমাদের হাত অবশ হয়ে গেল। প্রসবকারিণী স্ত্রীলোকদের মত যন্ত্রণা আমাদের ধরেছে।
আমরা তাদের বিষয়ে সংবাদ শুনেছি, আমাদের হাত যেন অবশ হয়ে ঝুলে পড়ছে। প্রসববেদনাগ্রস্ত নারীর মতো মনস্তাপে আমরা জর্জরিত হয়েছি।
25 ২৫ তোমরা মাঠে যেয়ো না ও রাস্তায় হেঁটো না, কারণ শত্রুর তরোয়াল এবং চারিদিকে ভীষণ ভয় রয়েছে।
তোমরা মাঠে যেয়ো না, বা রাস্তায়ও হাঁটাচলা কোরো না, কারণ শত্রুর কাছে অস্ত্র আছে, আর চতুর্দিকেই আছে আতঙ্কের পরিবেশ।
26 ২৬ হে আমার প্রজাদের মেয়েরা, একমাত্র ছেলের মৃত্যুশোকে চট পর এবং ছাইয়ের মধ্যে গড়াগড়ি দাও। নিজেদের জন্য প্রচণ্ড শোক কর। কারণ আমাদের উপরে হঠাৎ ধ্বংসকারী এসে পড়বে।
আমার প্রজারা, চটের পোশাক পরে নাও এবং ছাইয়ের মধ্যে গড়াগড়ি দাও; একমাত্র পুত্রবিয়োগের মতো শোক ও তিক্ত বিলাপ করো, কারণ ধ্বংসকারী হঠাৎই আমাদের উপরে এসে পড়বে।
27 ২৭ যিরমিয়, আমি তোমাকে আমার লোকেদের যাচাইকারী করেছি, তাই তুমি তাদের পথ বিচার করবে এবং পরীক্ষা করবে।
“আমি তোমাকে ধাতু যাচাইকারীর পরীক্ষক এবং আমার প্রজাদের আকরিক করেছি, যেন তুমি তাদের পথসকল নিরীক্ষণ ও পরীক্ষা করতে পারো।
28 ২৮ তারা সবাই খুব একগুঁয়ে লোক, যারা অন্য লোকের নিন্দা করে চলে। তারা সবাই ব্রোঞ্জ আর লোহার মত; খুব খারাপ আচরণ করে।
তারা হল কঠিন হৃদয় বিশিষ্ট বিদ্রোহী, তারা কেবলই নিন্দা করে বেড়ায়। তারা পিতল আর লোহার মতো; তারা সবাই ভ্রষ্টাচার করে।
29 ২৯ জাঁতা তাদের আগুনে পুড়েছে, সীসা আগুনের শিখায় বিনষ্ট হয়েছে। অনর্থক তারা শুদ্ধ করার চেষ্টা করছে, কারণ দুষ্টদেরকে বের করা যাচ্ছে না।
হাপরগুলি ভীষণভাবে বাতাস দিচ্ছে, যেন আগুনে সীসা গলে যায়, কিন্তু এই পরিশোধন প্রক্রিয়া বিফল হয়, দুষ্টদের শোধন হয় না।
30 ৩০ তাদের বাতিল রূপা বলা হবে, কারণ সদাপ্রভু তাদের অগ্রাহ্য করেছেন।
তাদের বাতিল করা রুপো বলা হয়, কারণ সদাপ্রভু তাদের বাতিল গণ্য করেছেন।”

< যিরমিয়ের বই 6 >