< যিশাইয় ভাববাদীর বই 57 >
1 ১ ধার্মিক বিনষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কেউ সে বিষয়ে বিবেচনা করে না; চুক্তির বিশ্বস্ত লোকদের একত্রিত করা হয়, কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না যে, বিপদের সামনে থেকে ধার্মিকলোকদের একত্রিত করা হয়।
ধার্মিক ব্যক্তিরা বিনষ্ট হয়, কেউ তা বিবেচনা করে না; ভক্তিমান লোকেরা অপসারিত হচ্ছে, কেউ তা বুঝতে পারছে না যে, মন্দ থেকে রক্ষা করার জন্যই ধার্মিক লোকেদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
2 ২ সে শান্তিতে প্রবেশ করে; সরলপথগামীরা প্রত্যেকে নিজেদের বিছানার ওপরে বিশ্রাম করে।
যারা ন্যায়সংগত জীবনযাপন করে, তারা শান্তিতে প্রবেশ করবে; মৃত্যুশয্যায় তারা বিশ্রাম লাভ করবে।
3 ৩ কিন্তু হে জাদুকরীর ছেলেরা, ব্যভিচারী ও বেশ্যার সন্তানেরা, তোমরা এখানে এস।
“কিন্তু তোমরা, যারা মায়াবিনীর সন্তান, যারা ব্যভিচারী ও বেশ্যাদের বংশ, তোমরা এখানে এসো!
4 ৪ তোমরা কাকে উপহাস কর? কাকে দেখে তোমরা মুখ খোল ও জিভ বের কর? তোমরা কি অধর্ম্মের সন্তান ও মিথ্যাবাদীদের বংশ নও?
তোমরা কাকে উপহাস করছ? কাকে দেখে তোমরা মুখ বাঁকাও ও তোমাদের জিভ বের করো? তোমরা কি বিদ্রোহীদের সন্তান ও মিথ্যাবাদীদের বংশ নও?
5 ৫ তোমরা তো এলোন গাছগুলোর মধ্যে, ডালপালা ছড়ানো প্রত্যেকটি সবুজ গাছের নীচে কামনায় জ্বলে থাক; তোমরা নানা উপত্যকায় ও পাহাড়ের ফাটলে তোমাদের ছেলে মেয়েদের হত্যা করে থাক।
তোমরা তো ওক গাছগুলির তলে ও প্রত্যেক ঝোপাল গাছপালার তলে দেবকামে জ্বলতে থাকো; তোমরা তো গিরিখাতে ও উপরে ঝুলে থাকা শৈলের ফাটলে, তোমাদের ছেলেমেয়েদের বলি দিয়ে থাকো।
6 ৬ তুমি উপত্যকার মসৃণ পাথরগুলির মধ্যে তোমার অংশ, সেইগুলি তোমার অধিকার; তাদের উদ্দেশ্যে তুমি পানীয় দ্রব্য ঢেলেছ, নৈবেদ্য উত্সর্গ করেছ। এই সবেতে কি আমি চুপ করে থাকব?
গিরিখাতের মসৃণ পাথরের দেবদেবীর মধ্যেই রয়েছে তোমাদের প্রাপ্য অংশ; সেগুলিতে, হ্যাঁ সেগুলিতেই রয়েছে তোমাদের স্বত্ব। তাদের কাছেই তোমরা ঢেলে দিয়েছ পেয়-নৈবেদ্য এবং উৎসর্গ করেছ যত শস্য-নৈবেদ্য। এগুলির পরিপ্রেক্ষিতে আমার মন কি কোমল হবে?
7 ৭ তুমি উঁচু পাহাড়ের ওপরে তোমার বিছানা পেতেছ, সেই জায়গাতেও তুমি বলিদান করতে উঠেছিলে।
তুমি উঁচু ও উন্নত এক পাহাড়ের উপরে তোমার শয্যা পেতেছ; সেখানে তোমার বলিদান উৎসর্গের জন্য তুমি উঠে গিয়েছিলে।
8 ৮ দরজা ও দরজার চৌকাঠের পিছনে তুমি তোমার চিহ্ন স্থাপন করেছ; তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছ, নিজেকে উলঙ্গ করেছ এবং উঠে গিয়েছ; তুমি তোমার বিছানা প্রশস্ত করেছ; তুমি তাদের সঙ্গে এক চুক্তি করেছ; তুমি তাদের বিছানা ভালোবেসেছ; তুমি তাদের গোপন অংশ দেখেছ।
তোমার দরজা ও চৌকাঠের পিছনে তুমি তোমার পৌত্তলিক স্মৃতিচিহ্নগুলি রেখেছ। আমাকে ভুলে গিয়ে, তুমি তোমার বিছানার চাদর তুলেছ, তুমি তার উপরে উঠে বিছানাটি চওড়া করেছ; তুমি যাদের বিছানা ভালোবাসো, তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছ, সেই সঙ্গে তুমি তাদের নগ্নতা দেখেছ।
9 ৯ তুমি তেল মলেখ দেবতার কাছে গিয়েছ আর প্রচুর পরিমাণে সুগন্ধি ব্যবহার করেছ। তোমার দূতদের তুমি দূরে পাঠিয়েছ, তুমি মৃতস্থানে গিয়েছিলে। (Sheol )
তুমি জলপাই তেল মেখে রাজার কাছে গিয়েছ ও প্রচুর সুগন্ধিদ্রব্য ব্যবহার করেছ। তুমি তোমার রাজদূতদের বহুদূরে পাঠিয়েছ; তুমি স্বয়ং পাতাল পর্যন্ত নেমে গিয়েছ! (Sheol )
10 ১০ তোমার যাতায়াতের ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছ, তবুও “আশা নেই।” এই কথা বলনি; তোমার হাতের নাড়ি খুঁজে পেয়েছ; এই জন্য তুমি দুর্বল হওনি।
তোমার সমস্ত জীবনাচরণে তুমি ক্লান্ত হয়েছিলে, কিন্তু তবুও তুমি বলোনি, ‘এসব অর্থহীন।’ তুমি তোমার শক্তি নবায়িত হতে দেখেছ, তাই তুমি মূর্ছিত হওনি।
11 ১১ বল দেখি কার থেকে এমন ত্রাসযুক্ত ও ভীত হয়েছ যে, মিথ্যা কথা বলেছ? তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছ, মনে জায়গা দেওনি। আমি কি চিরকাল ধরে নীরব থাকি নি? কিন্তু তুমি আমাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করনি।
“কার প্রতি তুমি এত ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছ যে আমার কাছে মিথ্যা কথা বলেছ, তুমি আমাকে স্মরণও করোনি কিংবা নিজের মনে এসব বিষয় বিবেচনাও করোনি? এজন্য নয় যে আমি দীর্ঘ সময় নীরব থেকেছি, তাই কি তুমি আমাকে ভয় করো না?
12 ১২ আমি তোমার ধার্ম্মিকতা ঘোষণা করব, কিন্তু তোমার কাজের জন্য, তারা তোমাকে সাহায্য করবে না।
আমি তোমার ধার্মিকতা ও তোমার কাজগুলি প্রকাশ করে দেব, সেগুলি তোমার কোনো উপকারে আসবে না।
13 ১৩ যখন তুমি চিত্কার কর, তখন তোমার জড়ো করা মূর্তিগুলোই তোমাকে উদ্ধার করুক। পরিবর্তে বাতাস তাদের সবাইকে বয়ে নিয়ে যাবে; একটা নিঃশ্বাস সে সবকে নিয়ে যাবে। তবু যে লোক আমার আশ্রয় নেয় সে দেশের এবং আমার পবিত্র পাহাড়ের অধিকার পাবে।
যখন তুমি সাহায্যের জন্য কাঁদতে থাকবে, তখন তোমার সঞ্চিত প্রতিমারাই যেন তোমাকে রক্ষা করে! বাতাস তাদের সবাইকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, সামান্য এক শ্বাসের ফুৎকারে তারা উড়ে যাবে। কিন্তু যে মানুষ আমার শরণাপন্ন হয়, সে দেশের অধিকার পাবে এবং আমার পবিত্র পর্বতের অধিকারী হবে।”
14 ১৪ সদাপ্রভু বলবেন, “তৈরী কর, তৈরী কর, আমার লোকদের সামনে থেকে সমস্ত বাধা সরিয়ে ফেল।”
আর এরকম বলা হবে, “তৈরি করো, তৈরি করো, তোমরা রাস্তা তৈরি করো! আমার প্রজাদের চলা পথ থেকে সমস্ত বাধা অপসারিত করো।”
15 ১৫ কারণ যিনি উচ্চ ও উন্নত, যিনি অনন্তকালনিবাসী, যাঁর নাম পবিত্র, তিনি বলছেন, “আমি উন্নত ও পবিত্র জায়গায় বাস করি, চূর্ণ নম্রতা মানুষের সঙ্গে বাস করি যেন নম্রদের আত্মাকে সঞ্জীবিত করি ও চূর্ণ লোকদের হৃদয়কে সঞ্জীবিত করি।
কারণ যিনি উচ্চ ও উন্নত, যিনি চিরকাল জীবিত থাকেন ও যাঁর নাম পবিত্র, তিনি এই কথা বলেন, “আমি এক উচ্চ ও পবিত্রস্থানে বাস করি, আবার যে ভগ্নচূর্ণ ও নতনম্র আত্মা বিশিষ্ট, তার মধ্যেও বাস করি, যেন নম্র ব্যক্তিদের আত্মা সঞ্জীবিত করি এবং ভগ্নচূর্ণমনা ব্যক্তিদের হৃদয়কেও সঞ্জীবিত করি।
16 ১৬ কারণ আমি চিরকাল অভিযোগ করব না, সবসমসয় ক্রোধ করব না; করলে আত্মা এবং আমার তৈরী করা প্রাণীরা আমার সামনে দুর্বল হবে।
আমি চিরকাল অভিযোগ করব না, আবার সবসময় ক্রুদ্ধও হব না, তা না হলে, মানুষের আত্মা, যে মানুষের শ্বাসবায়ু আমি সৃষ্টি করেছি, সে আমারই সামনে মূর্ছিত হবে।
17 ১৭ কারণ তাদের লোভরূপ অপরাধে আমি ক্রুদ্ধ হলাম ও তাকে শাস্তি দিলাম, নিজের মুখ লুকিয়ে ক্রোধ করলাম, তবু সে ফিরে গিয়ে হৃদয়ের পথে চলল।
আমি তার পাপিষ্ঠ লোভের জন্য ক্রুদ্ধ হয়েছিলাম; আমি তাকে শাস্তি দিয়েছিলাম এবং ক্রোধে আমার মুখ লুকিয়েছিলাম, তবুও সে তার ইচ্ছামতো জীবনযাপন করা ছাড়েনি।
18 ১৮ আমি তার পথগুলি দেখেছি, কিন্তু আমি তাকে সুস্থ করব। আমি তাদের পথপ্রদর্শক হব এবং তাকে ও তার শোকাকুলদেরকে সান্ত্বনা দান করব।
আমি তার জীবনাচরণ দেখেছি, কিন্তু আমি তাকে সুস্থ করব; আমি তাকে পথ দেখাব ও পুনরায় ইস্রায়েলে শোককারীদের সান্ত্বনা দেব,
19 ১৯ আমি ঠোঁটের ফল সৃষ্টি করি; শান্তির কাছাকাছি ও দূরবর্তী উভয়েরই শান্তি,” এটা সদাপ্রভু বলেন। “আমি তাদেরকে সুস্থ করব।”
তাদের মুখে প্রশংসার স্তব সৃষ্টি করব। শান্তি, শান্তি হোক যারা দূরে বা নিকটে থাকে, আর আমি তাদের রোগনিরাময় করব,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
20 ২০ কিন্তু দুষ্টেরা আন্দোলিত সমুদ্র এবং এর জল পাঁক ও কাদা ওপরে ওঠায়।
কিন্তু দুষ্ট মানুষেরা তরঙ্গবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের মতো, যা কখনও স্থির থাকে না, যার তরঙ্গগুলি কেবলই পঙ্ক ও কর্দম নিক্ষেপ করে।
21 ২১ ঈশ্বর বলছেন, “দুষ্টদের কোনো শান্তি নেই।”
আমার ঈশ্বর বলেন, “দুষ্ট লোকেদের কোনো কিছুতেই শান্তি নেই।”