< যিশাইয় ভাববাদীর বই 40 >

1 তোমাদের ঈশ্বর বলছেন, “আমার লোকদের সান্ত্বনা দাও, সান্ত্বনা দাও।
সান্ত্বনা দাও, আমার প্রজাদের সান্ত্বনা দাও তোমাদের ঈশ্বর বলছেন।
2 যিরূশালেমের লোকদের সঙ্গে নরমভাবে কথা বল, আর তাদের কাছে এই কথা ঘোষণা কর যে, তাদের লড়াইয়ের দিন শেষ হয়েছে, তাদের পাপের ক্ষমা হয়েছে, যা সে তার সমস্ত পাপ প্রভুর হাত থেকে দ্বিগুন পেয়েছে।”
কোমলভাবে জেরুশালেমের সঙ্গে কথা বলো ও তার কাছে ঘোষণা করো যে, তার কঠোর পরিশ্রমের সময় সম্পূর্ণ হয়েছে, আর তার পাপের মূল্য চোকানো হয়েছে, কারণ সে সদাপ্রভুর হাত থেকে তার সমস্ত পাপের দ্বিগুণ শাস্তি পেয়েছে।
3 এক জনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে, “তোমরা মরুপ্রান্তে সদাপ্রভুর পথ প্রস্তুত কর; অরাবাতে আমাদের ঈশ্বরের জন্য একটা সোজা রাস্তা তৈরী কর।
একজনের কণ্ঠস্বর ঘোষণা করছে: তোমরা মরুভূমিতে সদাপ্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত করো; তোমরা মরুপ্রান্তরে আমাদের ঈশ্বরের জন্য রাজপথগুলি সরল করো।
4 প্রত্যেক উপত্যকাকে তোলা হবে এবং প্রত্যেক পাহাড় ও পর্বতকে সমান করা হবে, উঁচু নিচু জায়গা সমান মাপের করা হবে, আর অসমান জমি সমান করা হবে।
প্রত্যেক উপত্যকাকে উপরে তোলা হবে, প্রত্যেক পর্বত ও উপপর্বতকে নিচু করা হবে; এবড়োখেবড়ো জমিকে সমান করা হবে, অমসৃণ স্থানগুলি সমতল হবে।
5 এবং সদাপ্রভুর গৌরব প্রকাশিত হবে, আর সমস্ত মানুষ তা একসঙ্গে দেখবে; কারণ সদাপ্রভু এই সব কথা বলেছেন।”
তখন সদাপ্রভুর মহিমা প্রকাশিত হবে, সমস্ত মানবকুল একসঙ্গে তা প্রত্যক্ষ করবে। কারণ সদাপ্রভুর মুখ একথা বলেছেন।
6 এক জনের কণ্ঠস্বর বলছে, “ঘোষণা কর।” আমি বললাম, “আমি কি ঘোষণা করব?” “সব মানুষই ঘাসের মত, মাঠের ফুলের মতই তাদের চুক্তির বিশ্বস্ততা।
একজনের কণ্ঠস্বর বলছে, “ঘোষণা করো।” আমি বললাম, “আমি কী ঘোষণা করব?” “সব মানুষই ঘাসের মতো আর তাদের সমস্ত বিশ্বস্ততা মাঠের ফুলের মতো।
7 ঘাস শুকিয়ে যায় আর ফুলও ঝরে পড়ে, যখন সদাপ্রভুর নিঃশ্বাস সেগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যায়। অবশ্যই মানুষ ঘাসের মত।
ঘাস শুকিয়ে যায় আর ফুল ঝরে পড়ে, কারণ সদাপ্রভুর নিশ্বাস তাদের উপরে বয়ে যায়। সত্যিই সব মানুষ ঘাসের মতো।
8 ঘাস শুকিয়ে যায় আর ফুলও ঝরে পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য অনন্তকালস্থায়ী।”
ঘাস শুকিয়ে যায় ও ফুলগুলি ঝরে পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য থাকে চিরকাল।”
9 হে তুমি যে সুখবর সিয়োনে যিরূশালেম থেকে নিয়ে আসছ, তুমি উঁচু পাহাড়ে গিয়ে ওঠো। হে ইউমী কে সুখবর নিয়ে আসছি যিরূশালেমে, তুমি জোরে চিৎকার কর, চিৎকার কর, ভয় কোরো না; যিহূদার শহরগুলোকে বল, “এই তো তোমাদের ঈশ্বর!”
যারা সিয়োনের কাছে সুসংবাদ বয়ে আনো, তোমরা উঁচু পাহাড়ে উঠে যাও। যারা জেরুশালেমের কাছে সুসংবাদ বয়ে আনো, তোমরা জোর গলায় চিৎকার করো, কণ্ঠস্বর উচ্চে তোলো, ভয় পেয়ো না; যিহূদার নগরগুলিকে বলো, “তোমাদের ঈশ্বর এখানে!”
10 ১০ দেখ, প্রভু সদাপ্রভু শক্তির সঙ্গে আসছেন, তাঁর শক্তিশালী হাত তাঁর হয়ে রাজত্ব করছে। দেখ, পুরষ্কার তাঁর সঙ্গে আছে, তাঁর পাওনা তাঁর কাছেই আছে।
দেখো, সার্বভৌম সদাপ্রভু পরাক্রমের সঙ্গে আসছেন, তাঁর বাহু তাঁর হয়ে শাসন করে। দেখো, তাঁর দেয় পুরস্কার তাঁর কাছে আছে, তাঁর দেয় প্রতিদান তাঁর সঙ্গেই থাকে।
11 ১১ তিনি রাখালের মত তাঁর ভেড়ার পাল চরাবেন, ভেড়ার বাচ্চাদের তিনি হাতে তুলে নেবেন আর কোলে করে তাদের বয়ে নিয়ে যাবেন; বাচ্চা আছে এমন ভেড়ীদের তিনি আস্তে আস্তে চালিয়ে নিয়ে যাবেন।
মেষপালকের মতোই তিনি তাঁর পালকে চরান: মেষশাবকদের তিনি তাঁর কোলে একত্র করেন ও তাঁর বুকের কাছে তিনি তাদের বহন করেন; যাদের ছোটো বাচ্চা আছে, তাদের তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যান।
12 ১২ কে তার হাতের তালুতে পৃথিবীর সব জল মেপেছে কিম্বা তার বিঘত দিয়ে আকাশের সীমানা মেপেছে? কে পৃথিবীর ধুল মাপের ঝুড়িতে ভরেছে কিম্বা দাঁড়িপাল্লায় পাহাড়-পর্বত ওজন করেছে?
কে তার করতলে সমুদ্রের জলরাশি পরিমাপ করেছে, কিংবা তার বিঘত দিয়ে আকাশমণ্ডল নিরূপণ করেছে? কে বালতিতে ধারণ করেছে পৃথিবীর সব ধুলো, কিংবা দাঁড়িপাল্লায় ওজন করেছে পর্বতসকল এবং তরাজুতে যত পাহাড়?
13 ১৩ কে সদাপ্রভুর মন মাপতে পেরেছে কিম্বা তাঁর পরামর্শদাতা হিসাবে তাঁকে উপদেশ দিয়েছে?
সদাপ্রভুর মন কে বুঝতে পেরেছে, কিংবা মন্ত্রণাদাতা হয়ে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছে?
14 ১৪ কারো থেকে কি তিনি কখনো পরামর্শ নিয়েছেন? আর কাজ করার সঠিক পথ কে তাঁকে দেখিয়ে দিয়েছে, কে তাঁকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে কিম্বা বোঝার রাস্তা দেখিয়েছেন?
উপদেশ গ্রহণের জন্য তিনি কার সঙ্গে পরামর্শ করেছেন এবং কে তাঁকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছে? কে তাঁকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে কিংবা দেখিয়েছে বিচারবুদ্ধির পথ?
15 ১৫ দেখ, দেশ গুলো যেন কলসীর মধ্যে জলের একটা ফোঁটা; দাঁড়িপাল্লায় ধূলিকণার মতই তাদের মনে করা হয়। দেখ দ্বীপপুঞ্জকে তিনি ক্ষুদ্র কনার মতন পরিমাপ করেন।
জাতিগুলি নিশ্চয়ই কলসের এক ফোঁটা জলের মতো; তাদের মনে করা হয় দাঁড়িপাল্লায় লাগা ধূলিকণার মতোই; তিনি সূক্ষ্ম ধূলিকণার মতোই ওজন করেন সব দ্বীপ।
16 ১৬ আগুন জ্বালাবার জন্য লিবানোনের কাঠ আর হোমবলি উৎসর্গের জন্য লিবানোনের পশু যথেষ্ট নয়।
বেদির আগুনের জন্য লেবাননের সব কাঠ, কিংবা হোমবলির জন্য তার পশুসকল পর্যাপ্ত নয়।
17 ১৭ সমস্ত জাতি তাঁর সামনে যথেষ্ট নয়; সেগুলোকে তিনি কিছু বলেই মনে করেন না; সেগুলো তাঁর কাছে অসার।
তাঁর সামনে সব জাতি কোনো কিছুর মধ্যেই গণ্য নয়; তিনি তাদের নিকৃষ্ট এবং সবকিছু থেকে অসার মনে করেন।
18 ১৮ তবে কার সঙ্গে তোমরা ঈশ্বরের তুলনা করবে? তুলনা করবে কিসের সঙ্গে?
তাহলে, তোমরা কার সঙ্গে ঈশ্বরের তুলনা করবে? কোন মূর্তির সঙ্গে তাঁর তুলনা দেবে?
19 ১৯ প্রতিমা, কারিগরেরা যা ছাঁচে ঢেলে বানায়; স্বর্ণকার তা সোনা দিয়ে মোড়ে আর তার জন্য রূপোর শিকল তৈরী করে।
কোনো মূর্তির তৈরির সময়, শিল্পকর তা ছাঁচে ঢালে, স্বর্ণকার তার উপরে সোনার প্রলেপ দেয় এবং রুপোর শৃঙ্খল দিয়ে তাকে সুশোভিত করে।
20 ২০ একজন উত্সর্গের জন্য যে কাঠ পচবে না সেই কাঠই বেছে নেয়। যাতে না পড়ে যায় এমন প্রতিমা তৈরীর জন্য সে একজন পাকা কারিগরের খোঁজ করে।
যে মানুষ ভীষণ দরিদ্র ও এরকম উপহার দিতে পারে না, সে এমন কাঠ বেছে নেয়, যা সহজে পচে যায় না; সে, টলবে না এমন এক প্রতিমার জন্য, এক কুশলী শিল্পকারের অন্বেষণ করে।
21 ২১ তোমরা কি জান না? তোমরা কি শোন নি? শুরু থেকেই কি তোমাদের সে কথা বলা হয়নি? পৃথিবী স্থাপনের দিন থেকে কি তোমরা বোঝ নি?
তোমরা কি একথা জানো না? তোমরা কি তা কখনও শোনোনি? প্রথম থেকেই কি একথা তোমাদের বলা হয়নি? পৃথিবীর গোড়াপত্তন থেকে তোমরা কি তা বুঝতে পারোনি?
22 ২২ পৃথিবীর দিগন্তের উপরে তিনিই সিংহাসনে বসে আছেন, আর পৃথিবীবাসী তার সম্মুখে গঙ্গাফড়িংয়ের মত। চাঁদোয়ার মত করে তিনি আকাশকে বিছিয়ে দিয়েছেন, বসবাসের তাঁবুর মত করে তা খাটিয়ে দিয়েছেন।
তিনি পৃথিবীর সীমাচক্রের উপরে উপবেশন করেন, এর অধিবাসীরা সকলে ফড়িংয়ের মতো। তিনি চন্দ্রাতপের মতো আকাশমণ্ডলকে প্রসারিত করেন, বসবাসের জন্য সেগুলিকে তাঁবুর মতো খাটিয়ে দেন।
23 ২৩ তিনি রাজাদের ক্ষমতাশূন্য করেন আর এই জগতের শাসনকর্ত্তাদের তুচ্ছ করেন।
তিনি রাজন্যবর্গকে বিলুপ্ত করেন এবং জগতের শাসকদের শূন্য করেন।
24 ২৪ দেখ, যেই তাদের লাগানো হয়, যেই তাদের বোনা হয়, যেই তারা মাটিতে শিকড় বসায়, অমনি তিনি তাদের উপর ফুঁ দেন আর তারা শুকিয়ে যায়; একটা ঘূর্ণিবাতাস খড়কুটোর মত করে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়।
তাদের রোপণ করা মাত্র এবং যেই তাদের বপন করা হয়, যে মুহূর্তে তারা মাটিতে মূল বিস্তার করে, তিনি তাদের উপরে ফুঁ দেন ও তারা শুকিয়ে যায়, ঘূর্ণিঝড় তুষের মতোই তাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়।
25 ২৫ সেই পবিত্রজন বলছেন, “তোমরা কার সঙ্গে আমার তুলনা করবে? কে আমার সমান?”
“তোমরা কার সঙ্গে আমার তুলনা করবে? কিংবা, আমার সমতুল্য কে?” বলেন সেই পবিত্রতম জন।
26 ২৬ চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ; কে ঐ সব তারাদের সৃষ্টি করেছেন? তিনিই তারাগুলোকে এক এক করে বের করে এনেছেন; তিনিই তাদের প্রত্যেকের নাম ধরে ডাকেন। তাঁর মহাক্ষমতা ও মহাশক্তির জন্য তাদের একটাও হারিয়ে যায় না।
তোমরা চোখ তুলে আকাশমণ্ডলের দিকে তাকাও: এগুলি কে সৃষ্টি করেছে? তিনি তারকারাজিকে এক এক করে বের করে আনেন এবং তাদের প্রত্যেকটির নাম ধরে ডাকেন। তাঁর মহাপরাক্রম ও প্রবল শক্তির কারণে তাদের একটিও হারিয়ে যায় না।
27 ২৭ হে যাকোব, কেন তুমি বলছ, হে ইস্রায়েল, কেন তুমি এই নালিশ করছ, “আমার পথ সদাপ্রভুর কাছ থেকে লুকানো রয়েছে, আমার ন্যায়বিচার পাবার অধিকার আমার ঈশ্বর অগ্রাহ্য করেছেন”?
ওহে যাকোব, তুমি কেন অভিযোগ করো? ওহে ইস্রায়েল, তুমি কেন বলো, “আমার পথ সদাপ্রভুর কাছ থেকে গুপ্ত; আমার অধিকার আমার ঈশ্বরের কাছে অবজ্ঞার বিষয়?”
28 ২৮ তোমরা কি জান না? তোমরা কি শোননি? সদাপ্রভু, যিনি চিরকাল স্থায়ী ঈশ্বর, যিনি পৃথিবীর শেষ সীমার সৃষ্টিকর্ত্তা, তিনি দুর্বল হন না, ক্লান্তও হন না; তাঁর জ্ঞানের কোনো সীমা নেই।
তুমি কি জানো না? তুমি কি কখনও শোনোনি? সদাপ্রভুই সনাতন ঈশ্বর, তিনি পৃথিবীর প্রান্তসীমার সৃষ্টিকর্তা। তিনি শ্রান্ত হবেন না, ক্লান্ত হবেন না, তাঁর বুদ্ধির গভীরতা কেউ পরিমাপ করতে পারে না।
29 ২৯ তিনি ক্লান্তকে শক্তি দেন আর দুর্বলদের আবার শক্তিমান করেন।
তিনি ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, দুর্বলের শক্তিবৃদ্ধি করেন।
30 ৩০ অল্পবয়সীরা পর্যন্ত দুর্বল হয় ও ক্লান্ত হয় আর যুবকেরা হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়,
এমনকি, যুবকেরাও শ্রান্ত ও ক্লান্ত হয়, তরুণেরা হোঁচট খেয়ে পতিত হয়;
31 ৩১ কিন্তু যারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে তারা আবার নতুন শক্তি পাবে। তারা ঈগল পাখীর মত ডানা মেলে উঁচুতে উড়বে; তারা দৌড়ালে ক্লান্ত হবে না, তারা হাঁটলে দুর্বল হবে না।
কিন্তু যারা সদাপ্রভুতে প্রত্যাশা রাখে, তারা তাদের শক্তি নবায়িত করবে। তারা ঈগল পাখির মতোই ডানা মেলবে, তারা দৌড়াবে, কিন্তু ক্লান্ত হবে না, তারা চলাফেরা করবে, কিন্তু মূর্ছিত হবে না।

< যিশাইয় ভাববাদীর বই 40 >