< আদিপুস্তক 49 >
1 ১ পরে যাকোব নিজের ছেলেদেরকে ডেকে বললেন, “তোমরা এক জায়গায় জড়ো হও, পরবর্তীকালে তোমাদের প্রতি যা ঘটবে, তা তোমাদেরকে বলছি।”
পরে যাকোব তাঁর ছেলেদের ডেকে বললেন: “তোমরা একত্রিত হও যেন আমি তোমাদের বলে দিতে পারি আগামী দিনগুলিতে তোমাদের প্রতি কী ঘটবে।
2 ২ যাকোবের ছেলেরা, সমবেত হও, শোন, তোমাদের বাবা ইস্রায়েলের বাক্য শোন।
“হে যাকোবের সন্তানেরা, জমায়েত হও ও শোনো; তোমাদের বাবা ইস্রায়েলের কথা শোনো।
3 ৩ রুবেন, তুমি আমার প্রথমজাত, আমার বল আমার শক্তির প্রথম ফল মহিমার প্রাধান্য ও পরাক্রমের প্রাধান্য।
“হে রূবেণ, তুমি আমার প্রথমজাত, আমার বল, আমার শক্তির প্রথম চিহ্ন, সম্মানে উত্তম, পরাক্রমে উত্তম।
4 ৪ তুমি [তপ্ত] জলের মতো চঞ্চল, তোমার প্রাধান্য থাকবে না; কারণ তুমি নিজের বাবার বিছানায় গিয়েছিলে; তখন অপবিত্র কাজ করেছিলে; সে আমার বিছানায় গিয়েছিল।
জলের মতো অদম্য বলে, তুমি আর শ্রেষ্ঠতর হবে না, কারণ তুমি তোমার বাবার বিছানায়, আমার শয্যায় গেলে ও সেটি কলুষিত করলে।
5 ৫ শিমিয়োন ও লেবি দুই ভাই; তাদের খড়গ দৌরাত্ম্যের অস্ত্র।
“শিমিয়োন ও লেবি দুই ভাই— তাদের তরোয়ালগুলি হিংস্রতার অস্ত্রশস্ত্র।
6 ৬ হে আমার প্রাণ! তাঁদের সভায় যেও না; হে আমার গৌরব! তাদের সমাজে যোগ দিও না; করণ তারা রাগে নরহত্যা করল, স্বেচ্ছাচারীতায় ষাঁড়ের শিরা ছেদন করল।
তাদের মন্ত্রণা-সভায় আমি যেন না ঢুকি, তাদের সমাবেশে যেন যোগ না দিই, কারণ তাদের ক্রোধে তারা মানুষজনকে হত্যা করেছিল এবং তাদের খেয়ালখুশি মতো তারা বলদদের পায়ের শিরা কেটে দিয়েছিল।
7 ৭ অভিশপ্ত তাদের রাগ, কারণ তা প্রচণ্ড; তাদের কোপ, কারণ তা নিষ্ঠুর; আমি তাঁদেরকে যাকোবের মধ্যে বিভাগ করব, ইস্রায়েলের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করব।
অভিশপ্ত হোক তাদের ক্রোধ, যা এত প্রচণ্ড, আর তাদের উন্মত্ততা, যা এত নিষ্ঠুর! যাকোবের মধ্যে আমি তাদের ইতস্তত ছড়িয়ে দেব এবং ইস্রায়েলের মধ্যে তাদের বিক্ষিপ্ত করে দেব।
8 ৮ যিহূদা, তোমার ভায়েরা তোমারই স্তব করবে; তোমার হাত তোমার শত্রুদের ঘাড় ধরবে; তোমার বাবার ছেলেরা তোমার সামনে নত হবে।
“হে যিহূদা, তোমার দাদা-ভাইয়েরা তোমার প্রশংসা করবে; তোমার শত্রুদের ঘাড়ে তোমার হাত থাকবে; তোমার বাবার ছেলেরা তোমার কাছে মাথা নত করবে।
9 ৯ যিহূদা সিংহশাবক; বৎস, তুমি শিকার থেকে উঠে আসলে; সে শুয়ে পড়ল, গুঁড়ি মারল, সিংহের মতো ও সিংহীর মতো; কে তাঁকে উঠাবে?
তুমি এক সিংহশাবক, হে যিহূদা; বাছা, তুমি শিকার করে ফিরে এলে। এক সিংহের মতো সে গুড়ি মারে ও শুয়ে থাকে, এক সিংহীর মতো—কে তাকে জাগাতে সাহস করে?
10 ১০ যিহূদা থেকে রাজদণ্ড যাবে না, তার পায়ের মধ্যে থেকে বিচারদন্ড যাবে না, যে পর্যন্ত শীলো না আসেন; জাতিরা তাঁরই আজ্ঞাবহতা স্বীকার করবে।
যিহূদা থেকে রাজদণ্ড বিদায় নেবে না, তার দুই পায়ের ফাঁক থেকে শাসকের ছড়িও সরে যাবে না, যতদিন না তিনি আসছেন সেটি যাঁর অধিকারভুক্ত আর জাতিদের সেই আনুগত্য তাঁরই হবে।
11 ১১ সে আঙ্গুর গাছে নিজের গাধী বাঁধবে, ভালো আঙ্গুর গাছে নিজের বাচ্চা ঘোড়া বাঁধবে; সে আঙ্গুর রসে নিজের পরিচ্ছদ কেচেছে, আঙ্গুরের রক্তে নিজের কাপড় কেচেছে।
সে এক দ্রাক্ষালতায় তার গাধা বেঁধে রাখবে, তার অশ্বশাবক সেই পছন্দসই ডালে বেঁধে রাখবে; দ্রাক্ষারসে সে তার জামাকাপড় ধোবে, তার আলখাল্লাগুলি ধোবে দ্রাক্ষারসের রক্তে।
12 ১২ তার চোখ আঙ্গুর রসে রক্তবর্ণ, তার দাঁত দুধে সাদা রঙের।
তার চোখদুটি দ্রাক্ষারসের থেকেও বেশি রক্তবর্ণ হবে, তার দাঁতগুলি দুধের থেকেও বেশি সাদা হবে।
13 ১৩ সবূলূন সমুদ্রতীরে বাস করবে, তা জাহাজের জন্য বন্দর হবে, সীদোন পর্যন্ত তার সীমা হবে।
“সবূলূন সমুদ্রতীরে বসবাস করবে আর জাহাজগুলির জন্য এক পোতাশ্রয় হবে; তার সীমানা সীদোনের দিকে প্রসারিত হবে।
14 ১৪ ইষাখর বলবান গাধা, সে দুটি ভেড়ার খোঁয়াড়ের মধ্যে শয়ন করে।
“ইষাখর এক কঙ্কালসার গাধা মেষ-খোঁয়াড়ের মধ্যে যে পড়ে আছে।
15 ১৫ সে দেখল, বিশ্রামের জায়গা ভালো, দেখল, এই দেশ আনন্দময়, তাই ভার বহন করতে কাঁধ পেতে দিল, আর করাধীন দাস হল।
যখন সে দেখবে তার বিশ্রামস্থান কত সুন্দর ও তার দেশ কত সুখকর, তখন ভারবহনের জন্য সে তার কাঁধ নত করবে ও কষ্টকল্পিত পরিশ্রমের প্রতি সমর্পিত হবে।
16 ১৬ দান নিজের প্রজাদের বিচার করবে, ইস্রায়েলের এক বংশের মতো।
“ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলির মধ্যে এক গোষ্ঠীরূপে দান তার লোকজনের জন্য ন্যায় প্রদান করবে।
17 ১৭ দান পথে অবস্থিত সাপ, সে মার্গে অবস্থিত বিষাক্ত সাপ, যে ঘোড়ার পায়ে দংশন করে, আর আরোহী পিছনে পড়ে যায়।
দান পথের পাশে পড়ে থাকা এক সাপ, সেই পথ বরাবর এমন এক বিষধর সাপ হবে, যে ঘোড়ার গোড়ালিতে ছোবল মারে যেন সেটির সওয়ার পিছন-পানে ডিগবাজি খায়।
18 ১৮ সদাপ্রভু আমি তোমার পরিত্রানের অপেক্ষায় আছি।
“হে সদাপ্রভু, আমি তোমার উদ্ধারের প্রত্যাশা করছি।
19 ১৯ গাদকে সৈন্যদল আঘাত করবে; কিন্তু সে তাদের পিছন দিকে আঘাত করবে।
“গাদ এক আক্রমণকারী দল দ্বারা আক্রান্ত হবে, কিন্তু সে তাদের গোড়ালি লক্ষ্য করে তাদের আক্রমণ করবে।
20 ২০ আশের থেকে অতি ভালো খাবার জন্মাবে; সে রাজার সুস্বাদু খাদ্য জুগিয়ে দেবে।
“আশেরের খাদ্যদ্রব্য হবে সমৃদ্ধ; সে এমন সুস্বাদু খাদ্য জোগাবে যা এক রাজার পক্ষে মানানসই।
21 ২১ নপ্তালি মুক্ত হরিণী, সে মনোহর বাক্য বলে।
“নপ্তালি এমন এক বাঁধনমুক্ত হরিণী যা সুন্দর সুন্দর হরিণশিশু গর্ভে ধারণ করে।
22 ২২ যোষেফ ফলবান গাছের শাখা, জলপ্রবাহের পাশে অবস্থিত ফলবান গাছের শাখা; তার শাখা সকল পাঁচিল অতিক্রম করে।
“যোষেফ এক ফলবান দ্রাক্ষালতা, এক নির্ঝরিণীর কাছে স্থিত এক ফলবান দ্রাক্ষালতা, যার শাখাপ্রশাখাগুলি এক দেয়াল বেয়ে ওঠে।
23 ২৩ ধনুকধারীরা তাকে কঠিন কষ্ট দিয়েছিল, বাণের আঘাতে তাকে উৎপীড়ন করেছিল;
তিক্ততা সমেত তিরন্দাজরা তাকে আক্রমণ করেছিল; শত্রুতা দেখিয়ে তারা তার দিকে তির ছুঁড়েছিল।
24 ২৪ কিন্তু তার ধনুক দৃঢ় থাকল, তার হাতের বাহুযুগল বলবান থাকল, যাকোবের একবীরের হাতের মাধ্যমে, যিনি ইস্রায়েলের পালক ও শৈল, তাঁর মাধ্যমে,
কিন্তু তার ধনুক অবিচলিত থেকেছিল, তার শক্তিশালী হাত দুটি নমনীয় হয়েই ছিল, যাকোবের সেই শক্তিমান-জনের সেই হাতের কারণে, ইস্রায়েলের সেই মেষপালকের, সেই শৈলের কারণে,
25 ২৫ তোমার পিতার সেই ঈশ্বরের মাধ্যমে, যিনি তোমাকে সাহায্য করবেন, সেই সর্বশক্তিমানের মাধ্যমে, যিনি তোমাকে আশীর্বাদ করবেন, উপরে অবস্থিত আকাশ থেকে নিঃসৃত আশীর্বাদে, অধোবিস্তীর্ণ জলধি থেকে নিঃসৃত আশীর্বাদে, স্তন ও গর্ভ থেকে নিঃসৃত আশীর্বাদে।
তোমার পৈত্রিক সেই ঈশ্বরের কারণে, যিনি তোমাকে সাহায্য করবেন, সেই সর্বশক্তিমানের কারণে, যিনি তোমাকে আশীর্বাদ করবেন ঊর্ধ্বস্থিত আকাশের আশীর্বাদসহ, নিচস্থ গভীর নির্ঝরিণীর আশীর্বাদসহ, স্তন ও গর্ভের আশীর্বাদসহ।
26 ২৬ আমার পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ অপেক্ষা তোমার পিতামহর আশীর্বাদের থেকে উৎকৃষ্ট। তা চিরন্তন গিরিমালার সীমা পর্যন্ত ব্যাপ্ত; তা আসবে যোষেফের মাথায়, ভাইদের থেকে পৃথককৃতের মাথার তালুতে।
তোমার পৈত্রিক আশীর্বাদগুলি সেই প্রাচীন পাহাড়-পর্বতের আশীর্বাদগুলির চেয়েও মহত্তর, শতাব্দী-প্রাচীন পাহাড়গুলির দানশীলতার চেয়েও মহত্তর। এসব কিছু যোষেফের মাথায় স্থির হোক, তার দাদা-ভাইদের মধ্যে যে নায়ক, তার ললাটে গিয়ে পড়ুক।
27 ২৭ বিন্যামীন ক্ষুধার্ত নেকড়ের সমান; সকালে সে শিকার খাবে, সন্ধ্যাকালে সে লুটের জিনিস ভাগ করবে।
“বিন্যামীন এক বুভুক্ষু নেকড়ে; সকালবেলায় সে শিকার গ্রাস করে, সন্ধ্যাবেলায় সে লুন্ঠিত জিনিসপত্র ভাগবাঁটোয়ারা করে।”
28 ২৮ এরা সবাই ইস্রায়েলের বারো বংশ; এদের বাবা আশীর্বাদ করবার দিনের এই কথা বললেন; এদের প্রত্যেক জনকে বিশেষ বিশেষ আশীর্বাদ করলেন।
এরা সবাই ইস্রায়েলের সেই বারো বংশ, এবং তাঁদের বাবা প্রত্যেককে যথাযথ আশীর্বাদ দিয়ে তাঁদের আশীর্বাদ করার সময় তাঁদের এই কথাগুলিই বললেন।
29 ২৯ পরে যাকোব তাঁদেরকে আদেশ দিয়ে বললেন, আমি নিজের লোকদের কাছে সংগৃহীত হতে প্রস্তুত। হেতীয় ইফ্রোণের ক্ষেতে অবস্থিত গুহাতে আমার পূর্বপুরুষদের কাছে আমার কবর দিও;
পরে তিনি তাঁদের এইসব নির্দেশ দিলেন: “আমি আমার পরিজনবর্গের সঙ্গে একত্রিত হতে যাচ্ছি। আমাকে আমার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে হিত্তীয় ইফ্রোণের ক্ষেতের সেই গুহায় কবর দিয়ো,
30 ৩০ সেই গুহা কনান দেশে মম্রির কাছে মকপেলা ক্ষেত্রে অবস্থিত; আব্রাহাম হেতীয় ইফ্রোণের কাছে তা কবরস্থানের অধিকারের জন্য কিনেছিলেন।
যে গুহাটি কনানে মম্রির পার্শ্ববর্তী মক্পেলার ক্ষেতে অবস্থিত, যেটি অব্রাহাম হিত্তীয় ইফ্রোণের কাছ থেকে ক্ষেতসহ এক কবরস্থানরূপে কিনেছিলেন।
31 ৩১ সেই জায়গায় অব্রাহামের ও তাঁর স্ত্রী সারার কবর হয়েছে, সেই জায়গায় ইসহাকের ও তাঁর স্ত্রী রিবিকার কবর হয়েছে এবং সেই স্থানে আমিও লেয়ার কবর দিয়েছি;
সেখানে অব্রাহাম এবং তাঁর স্ত্রী সারাকে কবর দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ইস্হাক ও তাঁর স্ত্রী রিবিকাকে কবর দেওয়া হয়েছিল, এবং সেখানেই আমি লেয়াকে কবর দিয়েছি।
32 ৩২ সেই ক্ষেত্রে ও তাঁর মধ্যবর্ত্তী গুহা হেতের লোকদের কাছে কেনা হয়েছিল।
সেই ক্ষেত ও সেই গুহাটি হিত্তীয়দের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল।”
33 ৩৩ যাকোব নিজের ছেলেদের প্রতি আদেশ শেষ করলে পর শয্যাতে দুই পা জড়ো করলেন ও প্রাণত্যাগ করে নিজের লোকদের কাছে ফিরে গেলেন।
যাকোব তাঁর ছেলেদের নির্দেশদান সমাপ্ত করার পর, তিনি তাঁর পা-দুটি বিছানায় টেনে আনলেন, শেষনিশ্বাস ত্যাগ করলেন এবং তাঁর পরিজনবর্গের সঙ্গে একত্রিত হলেন।