< যাত্রাপুস্তক 4 >

1 মোশি উত্তরে বললেন, “কিন্তু দেখুন, তারা আমাকে বিশ্বাস করবে না ও আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে না, কারণ তারা বলবে, ‘সদাপ্রভু তোমাকে দেখা দেন নি’।”
মোশি উত্তর দিলেন, “তারা যদি আমার কথা বিশ্বাস না করে বা আমার কথা না শোনে ও বলে, ‘সদাপ্রভু তোমার কাছে আবির্ভূত হননি,’ তবে কী হবে?”
2 তখন সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তোমার হাতে ওটা কি?” তিনি বললেন, “লাঠি।” তখন তিনি বললেন, “ওটা মাটিতে ফেল।”
তখন সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তোমার হাতে ওটি কী?” “একটি ছড়ি,” তিনি উত্তর দিলেন।
3 পরে তিনি মাটিতে ফেললে সেটা সাপ হয়ে গেল; আর মোশি তার সামনে থেকে পালিয়ে গেলেন।
সদাপ্রভু বললেন, “সেটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দাও।” মোশি সেটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং সেটি একটি সাপে পরিণত হল ও তিনি সেটির কাছ থেকে পালিয়ে গেলেন।
4 তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “হাত বাড়িয়ে ওটার লেজ ধর, তাতে তিনি হাত বাড়ালেন এবং সেই সাপটি ধরলেন।” তখন এটি তাঁর হাতে লাঠি হয়ে গেল,
তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার হাত বাড়িয়ে দাও ও সেটির লেজ ধরে ফেলো।” অতএব মোশি হাত বাড়িয়ে সাপটি ধরে ফেললেন এবং সেটি আবার তাঁর হাতে ধরা এক ছড়িতে পরিণত হল।
5 “যেন তারা বিশ্বাস করে যে, সদাপ্রভু, তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর যাকোবের ঈশ্বর তোমাকে দেখা দিয়েছেন।”
সদাপ্রভু বললেন, “এরকম করা হল, যেন তারা বিশ্বাস করে যে সদাপ্রভু, তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর—অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর—তোমার কাছে আবির্ভূত হয়েছেন।”
6 পরে সদাপ্রভু তাঁকে আরও বললেন, “তুমি তোমার হাত বুকে দাও,” তাতে তিনি বুকে হাত দিলেন; পরে তা বের করে দেখলেন, তাঁর হাতে তুষারের মত সাদা কুষ্ঠ হয়েছে।
পরে সদাপ্রভু বললেন, “তোমার আলখাল্লায় তোমার হাতটি ঢুকিয়ে নাও।” অতএব মোশি নিজের আলখাল্লায় তাঁর হাতটি ঢুকিয়ে নিলেন, ও তিনি যখন সেটি বের করে আনলেন, তখন তাঁর হাতের চামড়া কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হয়ে—সেটি বরফের মতো সাদা হয়ে গেল।
7 পরে সদাপ্রভু বললেন, “তোমার হাত আবার বুকে দাও।” তিনি আবার বুকে হাত দিলেন, পরে বুক থেকে হাত বের করে দেখলেন, তা পুনরায় তাঁর মাংসের মত হয়ে গেল।
“এখন হাতটি আবার তোমার আলখাল্লায় ঢুকিয়ে নাও।” তিনি বললেন। অতএব মোশি আবার নিজের হাতটি তাঁর আলখাল্লায় ঢুকিয়ে নিলেন, আর যখন তিনি তাঁর হাতটি বের করে আনলেন, তখন সেটি ঠিক হয়ে গেল, তাঁর শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতোই।
8 “যদি তারা তোমাকে বিশ্বাস না করে এবং যদি আমার শক্তির প্রথম চিহ্নেও মনোযোগ না করে অথবা বিশ্বাস না করে, তবে তারা দ্বিতীয় চিহ্নে বিশ্বাস করিবে।
পরে সদাপ্রভু বললেন, “তারা যদি তোমার কথা বিশ্বাস না করে বা প্রথম চিহ্নটিতে মনোযোগ না দেয়, তবে তারা হয়তো দ্বিতীয়টি বিশ্বাস করবে।
9 এবং তারা যদি আমার বিশ্বাসের এই দুই চিহ্নেও বিশ্বাস না করে অথবা তোমার কথায় যদি মনোযোগ না করে, তবে তুমি নদী থেকে কিছু জল নিয়ে শুকনো মাটিতে ঢেলে দিও; তাতে তুমি নদী থেকে যে জল তুলবে, তা শুকনো মাটিতে রক্ত হয়ে যাবে।”
কিন্তু তারা যদি এই দুটি চিহ্নই বিশ্বাস না করে বা তোমার কথা না শোনে, তবে তুমি নীলনদ থেকে খানিকটা জল নিয়ে তা শুকনো মাটিতে ঢেলে দিয়ো। যে জল তুমি নদী থেকে আনবে তা মাটিতে রক্ত হয়ে যাবে।”
10 ১০ পরে মোশি সদাপ্রভুকে বললেন, হায় প্রভু! আমি ভালো করে কথা বলতে পারি না, এর আগেও বলতে পারতাম না, বা তোমার সঙ্গে এই দাসের আলাপ করার পরেও নই; কারণ আমি আসতে আসতে কথা বলি ও তোতলা।
মোশি সদাপ্রভুকে বললেন, “হে প্রভু, আপনার এই দাসকে ক্ষমা করবেন। আমি কখনোই বাক্যবাগীশ ছিলাম না, না ছিলাম অতীতে আর না তখন, যখন আপনি আপনার এই দাসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কথাবার্তায় ও জিভে আমার জড়তা আছে।”
11 ১১ সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “মানুষের মুখ কে তৈরী করেছে? আর বোবা, কালা, চোখে দেখতে পায় বা অন্ধকে কে তৈরী করে?
সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “মানুষকে কে মুখ দিয়েছে? কে তাদের কালা বা বোবা তৈরি করেছে? কে তাদের দৃষ্টিশক্তি দিয়েছে বা তাদের অন্ধ তৈরি করেছে? সে কি আমি, এই সদাপ্রভু নই?
12 ১২ আমি সদাপ্রভুই কি করি নি? এখন তুমি যাও; আমি তোমার মুখের সহায় হব ও কি বলতে হবে, তোমাকে শেখাব।”
এখন যাও; আমি তোমাকে কথা বলতে সাহায্য করব ও কী বলতে হবে তা শেখাব।”
13 ১৩ তিনি বললেন, “হে আমার প্রভু, অনুরোধ করি, অন্য কারো হাতে এই বার্তা পাঠাও, যাকে তুমি পাঠাতে চাও।”
কিন্তু মোশি বললেন, “হে প্রভু, আপনার এই দাসকে ক্ষমা করবেন। দয়া করে অন্য কাউকে পাঠান।”
14 ১৪ তখন মোশির উপর সদাপ্রভু রেগে গেলেন; তিনি বললেন, “তোমার ভাই লেবীয় হারোণ কি নেই? আমি জানি সে ভালো কথা বলে; আরও দেখ, সে তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসছে; তোমাকে দেখে খুব আনন্দিত হবে।
তখন সদাপ্রভুর ক্রোধ মোশির বিরুদ্ধে জ্বলে উঠল ও তিনি বললেন, “তোমার দাদা, সেই লেবীয় হারোণ নেই নাকি? আমি জানি সে বেশ ভালোই কথা বলতে পারে। সে এখনই তোমার সাথে দেখা করতে আসছে এবং তোমার দেখা পেয়ে সে খুশিই হবে।
15 ১৫ তুমি তাকে বলবে ও তাঁর মুখে বাক্য দেবে এবং আমি তোমার মুখের ও তার মুখের সহায় হব ও কি করতে হবে, তোমাদেরকে জানাব।
তুমি তার সাথে কথা বলবে এবং তার মুখে শব্দ বসিয়ে দেবে; আমি তোমাদের দুজনকেই কথা বলতে সাহায্য করব ও কী করতে হবে তা শিখিয়ে দেব।
16 ১৬ তোমার পরিবর্তে সে লোকদের কাছে বক্তা হবে; তার ফলে সে তোমার মুখের মত হবে এবং তুমি তার ঈশ্বরের মত হবে।
সে তোমার হয়ে লোকজনের কাছে কথা বলবে, এবং সে তোমার মুখ হবে, ও তুমি তার কাছে ঈশ্বরস্বরূপ হবে।
17 ১৭ আর তুমি এই লাঠি হাতে ধরবে, এর মাধ্যমেই তোমাকে সে সমস্ত চিহ্ন কাজ করতে হবে।”
কিন্তু এই ছড়িটি তোমার হাতে নাও যেন তুমি এটি দিয়ে চিহ্নকাজ করতে পারো।”
18 ১৮ পরে মোশি তাঁর শ্বশুর যিথ্রোর কাছে ফিরে এসে বললেন, “অনুরোধ করি, আমাকে যেতে দিন যেন আমি মিশরে থাকা আমার ভাইদের কাছে ফিরে যেতে পারি এবং তারা এখনও জীবিত আছে কি না, তা দেখতে পাই।” যিথ্রো মোশিকে বললেন, “শান্তিতে যাও।”
পরে মোশি তাঁর শ্বশুর যিথ্রোর কাছে ফিরে গেলেন এবং তাঁকে বললেন, “আমাকে মিশরে আমার নিজস্ব লোকজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখতে দিন যে তাদের মধ্যে কেউ এখনও বেঁচে আছে কি না।” যিথ্রো বললেন, “যাও, ও আমি তোমার মঙ্গলকামনা করছি।”
19 ১৯ আর সদাপ্রভু মিদিয়নে মোশিকে বললেন, “তুমি মিশরে ফিরে যাও; কারণ যে লোকেরা তোমাকে হত্যা করার চেষ্টা করছিল, তারা সবাই মারা গেছে।”
মিদিয়নে থাকাকালীনই মোশিকে সদাপ্রভু বললেন, “মিশরে ফিরে যাও, কারণ যারা তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা সবাই মারা গিয়েছে।”
20 ২০ তখন মোশি তাঁর স্ত্রী ও ছেলেদেরকে গাধায় চাপিয়ে মিশর দেশে ফিরে গেলেন এবং মোশি তাঁর হাতে ঈশ্বরের সেই লাঠি নিলেন।
অতএব মোশি তাঁর স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে, তাদের গাধার পিঠে চাপিয়ে মিশরে ফেরার জন্য রওনা হলেন। আর তিনি ঈশ্বরের সেই ছড়িটি নিজের হাতে তুলে নিলেন।
21 ২১ আর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি যখন মিশরে ফিরে যাবে, দেখো, আমি তোমার হাতে যে সব অদ্ভুত কাজের ভার দিয়েছি, ফরৌণের সামনে সে সব কোরো; কিন্তু আমি তার হৃদয় কঠিন করব, সে লোকদেরকে ছাড়বে না।
সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি যখন মিশরে ফিরে যাবে, তখন দেখো আমি তোমাকে যেসব আশ্চর্য কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছি, সেগুলি যেন তুমি ফরৌণের সামনে করে দেখাও। কিন্তু আমি তার হৃদয় এমন কঠিন করব যে সে লোকদের যেতে দেবে না।
22 ২২ আর তুমি ফরৌণকে বলবে, ‘সদাপ্রভু এই কথা বলেন, ইস্রায়েল আমার ছেলে, আমার প্রথমজাত।’
পরে তুমি ফরৌণকে বোলো, ‘সদাপ্রভু একথাই বলেন: ইস্রায়েল আমার প্রথম সন্তান,
23 ২৩ আর আমি তোমাকে বলেছি, আমার সেবা করার জন্য আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও; কিন্তু তুমি তাঁকে ছেড়ে দিতে রাজি না হলে; দেখ, আমি তোমার সন্তানকে, তোমার প্রথমজাতকে, হত্যা করব।”
আর আমি তোমাকে বলেছি, “আমার ছেলেকে যেতে দাও, যেন সে আমার আরাধনা করতে পারে।” কিন্তু তুমি তাকে যেতে দিতে অস্বীকার করলে; তাই আমি তোমার প্রথমজাত ছেলেকে হত্যা করব।’”
24 ২৪ পরে পথে সরাইখানায় সদাপ্রভু তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন।
পথিমধ্যে এক পান্থশালায়, সদাপ্রভু মোশির সাথে দেখা করলেন এবং তাঁকে প্রায় হত্যা করেই ফেলেছিলেন।
25 ২৫ তখন সিপ্পোরা একটি পাথরের ছুরি নিয়ে তাঁর ছেলের ত্বক্‌ ছেদ করলেন ও তা মোশির পায়ে স্পর্শ করে বললেন, “তুমি আমার রক্তের বর।”
কিন্তু সিপ্পোরা চকমকি পাথরের একটি ছুরি নিয়ে, তাঁর ছেলের লিঙ্গাগ্রত্বক কেটে সেটি মোশির পায়ে ঠেকিয়ে দিলেন। “নিশ্চয় তুমি আমার কাছে রক্তের এক বর,” তিনি বললেন।
26 ২৬ আর ঈশ্বর তাঁকে ছেড়ে দিলেন; তখন সিপ্পোরা বললেন, “ত্বক্‌ছেদের কারণে তুমি রক্তের বর।”
অতএব সদাপ্রভু মোশিকে নিষ্কৃতি দিলেন। (সেই সময় সিপ্পোরা সুন্নতের উল্লেখ করে বললেন, “রক্তের বর।”)
27 ২৭ আর সদাপ্রভু হারোণকে বললেন, “তুমি মোশির সঙ্গে দেখা করতে মরুপ্রান্তে যাও।” তাতে তিনি গিয়ে ঈশ্বরের পর্বতে তাঁর দেখা পেলেন ও তাঁকে চুম্বন করলেন।
সদাপ্রভু হারোণকে বললেন, “মোশির সঙ্গে দেখা করার জন্য মরুপ্রান্তরে যাও।” তাই তিনি ঈশ্বরের পর্বতে মোশির সঙ্গে দেখা করলেন ও তাঁকে চুমু দিলেন।
28 ২৮ তখন মোশি তাঁকে যিনি পাঠিয়েছেন সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্য ও তাঁর আদেশ মত সমস্ত চিহ্নের বিষয় হারোণকে জানালেন।
পরে সদাপ্রভু মোশিকে যা যা বলতে পাঠালেন, ও এছাড়াও যেসব চিহ্নকাজ তিনি তাঁকে সম্পাদন করার আদেশ দিয়েছিলেন, সেসবকিছু মোশি হারোণকে বললেন।
29 ২৯ পরে মোশি ও হারোণ গিয়ে ইস্রায়েল সন্তানদের সমস্ত প্রাচীনকে জড়ো করলেন।
মোশি ও হারোণ ইস্রায়েলীদের সব প্রাচীনকে একত্রিত করলেন,
30 ৩০ আর হারোণ মোশির প্রতি সদাপ্রভুর বলা সমস্ত বাক্য তাদেরকে জানালেন এবং তিনি লোকদের চোখের সামনে সেই সব চিহ্ন কাজ করলেন।
এবং সদাপ্রভু মোশিকে যা যা বলেছিলেন সেসবকিছু হারোণ তাঁদের বললেন। এছাড়াও তিনি লোকজনের সামনে সেই চিহ্নকাজগুলি সম্পাদন করলেন,
31 ৩১ তাতে লোকেরা বিশ্বাস করল এবং ঈশ্বর সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের যত্ন নিয়েছেন ও তাদের দুঃখ দেখেছেন শুনে তারা মাথা নিচু করলেন এবং তাঁর আরাধনা করলেন।
এবং তাঁরা বিশ্বাস করলেন। আর তাঁরা যখন শুনলেন যে সদাপ্রভু তাঁদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছেন ও তাঁদের দুর্দশা দেখেছেন, তখন তাঁরা মাথা নত করে আরাধনা করলেন।

< যাত্রাপুস্তক 4 >