< যাত্রাপুস্তক 3 >
1 ১ মোশি তাঁর শ্বশুর যিথ্রোর ভেড়ার পাল চরাতেন যিনি মিদিয়নীয় যাজক ছিলেন। এক দিন তিনি মরুপ্রান্তের পিছনের দিকে ভেড়ার পাল নিয়ে গিয়ে হোরেবে, ঈশ্বরের পর্বতে উপস্থিত হলেন।
মোশি এক সময় তাঁর শ্বশুর, মিদিয়নীয় যাজক যিথ্রোর মেষপাল চরাচ্ছিলেন, এবং সেই পালকে দূরে মরুপ্রান্তরের এক প্রান্তে চরাতে চরাতে তিনি হোরেবে সদাপ্রভুর পর্বতে পৌঁছে গেলেন।
2 ২ আর ঝোপের মধ্যে থেকে আগুনের শিখাতে সদাপ্রভুর দূত তাঁকে দেখা দিলেন; তখন তিনি তাকালেন, আর দেখো, ঝোপ আগুনে জ্বলছে, তবুও ঝোপ পুড়ে যাচ্ছে না।
সেখানে এক ঝোপের মধ্যে থেকে সদাপ্রভুর দূত আগুনের শিখায় মোশির কাছে আবির্ভূত হলেন। মোশি দেখলেন যে যদিও ঝোপটি জ্বলছে তবুও তা পুড়ে শেষ হচ্ছে না।
3 ৩ তাই মোশি বললেন, “আমি এক পাশে গিয়ে এই মহা আশ্চর্য্য দৃশ্য দেখি, ঝোপ পুড়ছে না, এর কারণ কি?”
অতএব মোশি ভাবলেন, “আমি পরিদর্শনে যাব ও এই অদ্ভুত ঘটনাটি দেখব—কেন ঝোপটি পুড়ে শেষ হচ্ছে না।”
4 ৪ কিন্তু সদাপ্রভু যখন দেখলেন যে, তিনি দেখবার জন্য এক পাশে যাচ্ছেন, তখন ঝোপের মধ্য থেকে ঈশ্বর তাঁকে ডেকে বললেন, “মোশি, মোশি।” তিনি বললেন, “দেখুন, এই আমি।”
সদাপ্রভু যখন দেখলেন যে মোশি দেখার জন্য পরিদর্শনে গিয়েছেন, তখন ঈশ্বর সেই ঝোপের মধ্যে থেকে মোশিকে ডেকে বললেন, “মোশি, মোশি!” আর মোশি বললেন, “আমি এখানে।”
5 ৫ তখন তিনি বললেন, “এই জায়গার কাছে এস না, তোমার পা থেকে জুতো খুলে ফেলো; কারণ যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে আছ, ওটা পবিত্র জায়গা।”
“আর কাছে এসো না,” ঈশ্বর বললেন। “তোমার চটিজুতো খুলে ফেলো, কারণ তুমি যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছ সেটি পবিত্র ভূমি।”
6 ৬ তিনি আরও বললেন, “আমি তোমার বাবার ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর।” তখন মোশি তাঁর মুখ ঢেকে দিলেন, কারণ তিনি ঈশ্বরের দিকে চেয়ে থাকতে ভয় পাচ্ছিলেন।
পরে তিনি বললেন, “আমি তোমার পৈত্রিক ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর।” তখন মোশি তাঁর মুখ আড়াল করলেন, কারণ তিনি ঈশ্বরের দিকে তাকাতে ভয় পেয়েছিলেন।
7 ৭ পরে সদাপ্রভু বললেন, “সত্যিই আমি মিশরের আমার প্রজাদের কষ্ট দেখেছি এবং শাসকদের জন্য তাদের কান্না শুনেছি; তার ফলে আমি তাদের দুঃখ জানি।”
সদাপ্রভু বললেন, “আমি সত্যিই মিশরে আমার প্রজাদের দুর্দশা দেখেছি। তাদের উপর নিযুক্ত ক্রীতদাস পরিচালকদের কারণে তারা যে কান্নাকাটি করছে তা আমি শুনেছি, এবং তাদের কায়ক্লেশের বিষয়ে আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি।
8 ৮ আর মিশরীয়দের হাত থেকে তাদেরকে উদ্ধার করবার জন্য এবং সেই দেশ থেকে উঠিয়ে নিয়ে ভালো ও বড় এক দেশে, অর্থাৎ কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয় লোকেরা যেখানে থাকে, সেই দুধ ও মধু প্রবাহিত দেশে তাদেরকে আনবার জন্য নেমে এসেছি।
তাই মিশরীয়দের হাত থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য এবং সেদেশ থেকে মনোরম ও প্রশস্ত এক দেশে, দুধ ও মধু প্রবাহিত এক দেশে—কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের স্বদেশে তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি নেমে এসেছি।
9 ৯ এখন দেখ, ইস্রায়েলের লোকদের কান্না আমার কাছে উপস্থিত হয়েছে এবং মিশরীয়েরা তাদের ওপর যে নির্যাতন করে, তা আমি দেখেছি।
আর এখন ইস্রায়েলীদের কান্না আমার কাছে পৌঁছে গিয়েছে এবং আমি দেখেছি কীভাবে সেই মিশরীয়রা তাদের নিগৃহীত করছে।
10 ১০ অতএব এখন এস, আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে পাঠাব, তুমি মিশর থেকে আমার লোক ইস্রায়েলীয়দেরকে বের কোরো।
অতএব এখন, যাও। মিশর থেকে আমার প্রজা ইস্রায়েলীদের বের করে আনার জন্য আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে পাঠাচ্ছি।”
11 ১১ কিন্তু মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “আমি কে, যে ফরৌণের কাছে যাই ও মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দেরকে বের করি?”
কিন্তু মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “আমি কে যে আমাকে ফরৌণের কাছে যেতে হবে ও মিশর থেকে ইস্রায়েলীদের বের করে আনতে হবে?”
12 ১২ তিনি বললেন, “নিশ্চয় আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকব এবং আমি যে তোমাকে পাঠালাম, তোমার জন্য তার এই চিহ্ন হবে; তুমি মিশর থেকে লোকেদেরকে বের করে এনে তোমরা এই পর্বতে ঈশ্বরের সেবা করবে।”
আর ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমার সঙ্গে থাকব। আর আমিই যে তোমাকে পাঠিয়েছি তার চিহ্ন হবে এই: তুমি যখন মিশর থেকে লোকদের বের করে আনবে, তখন এই পর্বতে তোমরা ঈশ্বরের আরাধনা করবে।”
13 ১৩ পরে মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “দেখ, আমি যখন ইস্রায়েলীয়দের কাছে গিয়ে বলব, ‘তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর তোমাদের কাছে আমাকে পাঠিয়েছেন’, তখন যদি তারা জিজ্ঞাসা করে, ‘তাঁর নাম কি’? তবে তাদেরকে কি বলব?”
মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “ধরে নিন আমি ইস্রায়েলীদের কাছে গেলাম ও তাদের বললাম, ‘তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন,’ এবং তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘তাঁর নাম কী?’ তখন আমি তাদের কী বলব?”
14 ১৪ ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “আমি যা আছি তাই আছি,” আরও বললেন, “ইস্রায়েল সন্তানদের এই ভাবে বোলো, ‘আমি সেই যিনি তোমাদের কাছে আমাকে পাঠিয়েছেন’।”
ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “আমি যে আছি, সেই আছি। ইস্রায়েলীদের তোমাকে একথাই বলতে হবে: ‘আমি আছি আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন।’”
15 ১৫ ঈশ্বর মোশিকে আরও বললেন, “তুমি ইস্রায়েল সন্তানদের এই কথা বোলো, ‘যিহোবাঃ [সদাপ্রভু], তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর তোমাদের কাছে আমাকে পাঠিয়েছেন; আমার নাম এই অনন্তকালস্থায়ী এবং এর দ্বারা আমি সমস্ত বংশে স্মরণীয়’।”
এছাড়াও ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীদের বোলো, ‘সদাপ্রভু, তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর—অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর—আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন।’ “এটিই আমার অনন্তকালীন নাম, যে নামে তোমরা আমায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ডাকবে।
16 ১৬ তুমি যাও, ইস্রায়েলের প্রাচীনদেরকে জড়ো কর, তাদেরকে এই কথা বল, সদাপ্রভু, তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের, ইস্হাকের ও যাকোবের ঈশ্বর আমাকে দেখা দিয়ে বললেন, সত্যিই আমি তোমাদের পর্যবেক্ষণ করেছি, মিশরে তোমাদের প্রতি যা হয়েছে, তা দেখেছি।
“যাও, ইস্রায়েলের প্রাচীনদের সমবেত করো ও তাদের বলো, ‘সদাপ্রভু, তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর—অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর—আমাকে দর্শন দিয়ে বললেন: আমি তোমাদের পাহারা দিয়েছিলাম এবং দেখেছিলাম মিশরে তোমাদের প্রতি কী করা হয়েছে।
17 ১৭ আর আমি বলেছি, আমি মিশরের কষ্ট থেকে তোমাদেরকে উদ্ধার করে কনানীয়দের, হিত্তীয়দের, ইমোরীয়দের, পরিষীয়দের, হিব্বীয়দের ও যিবূষীয়দের দেশে, দুধ ও মধু প্রবাহিত দেশে, নিয়ে যাব।
আর আমি তোমাদের মিশরের দুর্দশা থেকে বের করে এনে কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশে—দুধ ও মধু প্রবাহিত সেই দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করলাম।’
18 ১৮ তারা তোমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে; তখন তুমি ও ইস্রায়েলের প্রাচীনেরা মিশরের রাজার কাছে যাবে, তাকে বলবে, সদাপ্রভু, ইব্রীয়দের ঈশ্বর আমাদেরকে দেখা দিয়েছেন; অতএব অনুরোধ করি, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বলিদান করার জন্য আমাদেরকে তিন দিনের পথ মরুপ্রান্তে যাবার অনুমতি দিন।
“ইস্রায়েলের প্রাচীনেরা তোমার কথা শুনবে। পরে তোমাকে ও সেই প্রাচীনদের মিশররাজের কাছে গিয়ে তাকে বলতে হবে, ‘সদাপ্রভু, হিব্রুদের ঈশ্বর, আমাদের দেখা দিয়েছেন। মরুপ্রান্তরে তিনদিনের পথযাত্রা করে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমাদের বলি উৎসর্গ করে আসতে দিন।’
19 ১৯ কিন্তু আমি জানি, মিশরের রাজা তোমাদেরকে যেতে দেবে না, এমনকি শক্তিশালী হাত দিয়েও নয় (যতক্ষণ না তাকে বাধ্য করা হচ্ছে)।
কিন্তু আমি জানি যে মিশররাজ ততক্ষণ তোমাদের যেতে দেবে না, যতক্ষণ না এক বলশালী হাত তাকে বাধ্য করবে।
20 ২০ আমি হাত তুলব এবং দেশের মধ্যে যে সব আশ্চর্য্য কাজ করে, তা দিয়ে মিশরকে আঘাত করব, তারপরে সে তোমাদেরকে যেতে দেবে।
অতএব আমি আমার হাত বাড়িয়ে দেব ও সেইসব আশ্চর্য কাজের মাধ্যমে মিশরীয়দের আঘাত হানব, যেগুলি আমি তাদের মধ্যে সম্পন্ন করতে চলেছি। পরে, সে তোমাদের যেতে দেবে।
21 ২১ পরে আমি মিশরীয়দের চোখে এই লোকদেরকে দয়ার পাত্র করব; তাতে তোমরা যাবার দিন খালি হাতে যাবে না;
“আর এই জাতির প্রতি মিশরীয়দের আমি এত অনুগ্রহকারী হতে দেব, যে যখন তোমরা দেশ ছেড়ে যাবে, তখন তোমাদের খালি হাতে যেতে হবে না।
22 ২২ কিন্তু প্রত্যেক স্ত্রী নিজেদের প্রতিবেশীনী কিংবা প্রতিবেশীর বাড়িতে বসবাসকারী স্ত্রীর কাছে রূপা ও সোনার গয়না এবং পোশাক চাইবে। তোমরা তা তোমাদের ছেলে মেয়েদের গায়ে পরাবে; এই ভাবে তোমরা মিশরীয়দের জিনিসপত্র লুট করবে।
প্রত্যেকটি মহিলাকে তার প্রতিবেশিনী ও তার বাড়িতে বসবাসকারী যে কোনো মহিলার কাছ থেকে রুপো ও সোনার গয়নাগাটি এবং পোশাক-পরিচ্ছদ চেয়ে নিতে হবে, যেগুলি তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের গায়ে পরিয়ে দেবে। আর এইভাবে তোমরা মিশরীয়দের উপর লুঠতরাজ চালাবে।”