< যাত্রাপুস্তক 18 >
1 ১ আর ঈশ্বর মোশির পক্ষে ও তাঁর প্রজা ইস্রায়েলের পক্ষে যে সমস্ত কাজ করেছেন, সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে মিশর থেকে বের করে এনেছেন, এই সব কথা মোশির শ্বশুর মিদিয়নীয় যাজক যিথ্রো শুনতে পেলেন।
ঈশ্বর মোশির ও তাঁর প্রজাদের জন্য যা যা করলেন, এবং কীভাবে সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন, সেসব কথা মিদিয়নীয় যাজক তথা মোশির শ্বশুরমশাই যিথ্রো শুনেছিলেন।
2 ২ তখন মোশির শ্বশুর যিথ্রো মোশির স্ত্রীকে, তার বাড়িতে পাঠানো সিপ্পোরাকে ও তাঁর দুই ছেলেকে সঙ্গে নিলেন।
মোশি তাঁর স্ত্রী সিপ্পোরাকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর, তাঁর শ্বশুরমশাই যিথ্রো সিপ্পোরাকে,
3 ৩ ঐ দুই ছেলের মধ্যে এক জনের নাম গের্শোম [তত্রপ্রবাসী], কারণ তিনি বলেছিলেন, আমি বিদেশের নিবাসী হয়েছি।
এবং তাঁর দুই ছেলেকে গ্রহণ করলেন। এক ছেলের নাম রাখা হল গের্শোম, কারণ মোশি বললেন, “আমি বিদেশে এক বিদেশি হয়ে গিয়েছি”
4 ৪ আর এক জনের নাম ইলীয়েষর [ঈশ্বর-সহকারী], কারণ তিনি বলেছিলেন, আমার পিতার ঈশ্বর আমার সহকারী হয়ে ফরৌণের তরোয়াল থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন।
আর অন্যজনের নাম রাখা হল ইলীয়েষর, কারণ তিনি বললেন, “আমার পৈত্রিক ঈশ্বর আমার সাহায্যকারী হয়েছেন; তিনি আমাকে ফরৌণের তরোয়ালের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।”
5 ৫ মোশির শ্বশুর যিথ্রো তাঁর দুই ছেলে ও তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দূরে নির্জন জায়গায় মোশির কাছে, ঈশ্বরের পর্বতে যে জায়গায় তিনি শিবির স্থাপন করেছিলেন, সেই জায়গায় আসলেন।
মোশির শ্বশুরমশাই যিথ্রো, মোশির ছেলেদের ও স্ত্রীকে নিয়ে সেই মরুভূমিতে তাঁর কাছে এলেন, যেখানে ঈশ্বরের পর্বতের কাছে তিনি শিবির স্থাপন করেছিলেন।
6 ৬ আর তিনি মোশিকে বললেন, তোমার শ্বশুর যিথ্রো আমি এবং তোমার স্ত্রী ও তাঁর সঙ্গে তাঁর দুই ছেলে, আমরা তোমার কাছে এসেছি।
যিথ্রো তাঁর কাছে এই কথা বলে পাঠালেন, “আমি, তোমার শ্বশুর যিথ্রো, তোমার স্ত্রী ও তার দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তোমার কাছে আসছি।”
7 ৭ তখন মোশি নিজের শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করতে বাইরে গেলেন ও প্রণাম করলেন ও তাঁকে চুম্বন করলেন এবং একে অপরের মঙ্গল জিজ্ঞাসা করলেন, পরে তারা তাঁবুর মধ্যে গেলেন।
অতএব মোশি তাঁর শ্বশুরমশাই-এর সাথে দেখা করার জন্য বাইরে গেলেন এবং প্রণত হয়ে তাঁকে চুমু দিলেন। তাঁরা পরস্পরকে অভিবাদন জানালেন ও পরে তাঁবুর ভিতরে চলে গেলেন।
8 ৮ আর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের জন্য ফরৌণের উপর ও মিশরীয়দের উপর যা যা করেছিলেন এবং পথে তাঁদের যে যে কষ্টের ঘটনা ঘটেছিল ও সদাপ্রভু যে ভাবে তাঁদেরকে উদ্ধার করেছিলেন, সেই সব ঘটনা মোশি নিজের শ্বশুরকে বললেন।
ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভু ফরৌণের ও মিশরীয়দের প্রতি যা যা করেছিলেন এবং পথিমধ্যে যেসব কষ্ট তাঁদের সহ্য করতে হয়েছিল ও সদাপ্রভু কীভাবে তাঁদের রক্ষা করেছিলেন, সেসব কথা মোশি তাঁর শ্বশুরমশাইকে বলে শোনালেন।
9 ৯ তাতে সদাপ্রভু মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলকে উদ্ধার করে তাঁদের যে সব মঙ্গল করেছিলেন, তার জন্য যিথ্রো আনন্দিত হলেন।
মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীদের রক্ষা করতে গিয়ে সদাপ্রভু ইস্রায়েলের জন্য যেসব ভালো ভালো কাজ করেছিলেন, তার বৃত্তান্ত শুনে যিথ্রো খুব খুশি হলেন।
10 ১০ আর যিথ্রো বললেন, “ধন্য সদাপ্রভু, যিনি মিশরীয়দের হাত থেকে ও ফরৌণের হাত থেকে তোমাদেরকে উদ্ধার করেছেন, যিনি মিশরিয়দের হাতের নিয়ন্ত্রণ থেকে এই লোকদেরকে উদ্ধার করেছেন।
তিনি বললেন, “সেই সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক, যিনি মিশরীয়দের ও ফরৌণের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন এবং যিনি মানুষজনকে মিশরীয়দের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
11 ১১ এখন আমি জানি, সব দেবতা থেকে সদাপ্রভু মহান্; সেই বিষয়ে মহান্, যে বিষয়ে ওরা এদের বিরুদ্ধে গর্ব করত।”
এখন আমি জানলাম যে সদাপ্রভু অন্য সব দেবতার চেয়ে মহত্তর, কারণ তিনি তাদেরই প্রতি এরকম করেছেন, যারা ইস্রায়েলের প্রতি অহংকারী আচরণ দেখিয়েছিল।”
12 ১২ পরে মোশির শ্বশুর যিথ্রো ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে হোম উত্সর্গ ও বলি উপস্থিত করলেন এবং হারোণ ও ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনরা এসে ঈশ্বরের সামনে মোশির শ্বশুরের সঙ্গে খাবার খেলেন।
পরে মোশির শ্বশুরমশাই যিথ্রো, সদাপ্রভুর কাছে এক হোমবলি ও অন্যান্য নৈবেদ্য নিয়ে আসলেন, এবং হারোণ ইস্রায়েলের সব প্রাচীনকে সঙ্গে নিয়ে ঈশ্বরের উপস্থিতিতে মোশির শ্বশুরমশাই যিথ্রোর সঙ্গে এক ভোজ খেতে এলেন।
13 ১৩ পরদিন মোশি লোকদের বিচার করতে বসলেন, আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকেরা মোশির চারিদিকে দাঁড়িয়ে থাকলো।
পরদিন মোশি লোকদের বিচারক হয়ে তাঁর আসন গ্রহণ করলেন, এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকেরা তাঁর চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকল।
14 ১৪ তখন লোকদেরকে মোশি যা যা করছেন, তাঁর শ্বশুর তা দেখে বললেন, “তুমি লোকদের উপর এ কেমন ব্যবহার করছ? কেন তুমি একা বসে থাক, আর সমস্ত লোক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে?”
মোশি লোকজনের জন্য যা কিছু করছিলেন, তাঁর শ্বশুরমশাই যখন সেসবকিছু দেখলেন, তখন তিনি বললেন, “লোকজনের জন্য তুমি এ কী করছ? একা তুমিই কেন বিচারক হয়ে বসে আছ, যখন এইসব লোক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে?”
15 ১৫ মোশি নিজের শ্বশুরকে বললেন, “লোকেরা ঈশ্বরের নির্দেশ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে আমার কাছে আসে;
মোশি তাঁকে উত্তর দিলেন, “কারণ লোকেরা ঈশ্বরের ইচ্ছার খোঁজ নেওয়ার জন্য আমার কাছে আসে।
16 ১৬ যখন তাঁদের মধ্যে কোন তর্ক বিতর্ক হয় তখন তারা আমার কাছে আসে; আমি একজন এবং অন্য জনের মধ্যে বিচার করি এবং ঈশ্বরের নিয়ম ও ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁদেরকে শিক্ষা দিই।”
যখনই তারা এক দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়, তা আমার কাছে আনা হয়, এবং আমি দুই দলের মধ্যে মীমাংসা করি এবং ঐশ্বরিক হুকুমাদি ও নির্দেশাবলি তাদের জানিয়ে দিই।”
17 ১৭ তখন মোশির শ্বশুর তাঁকে বললেন, “তুমি যে কাজ করছ তা ভাল নয়।
মোশির শ্বশুরমশাই তাঁকে উত্তর দিলেন, “তুমি যা করছ তা ঠিক নয়।
18 ১৮ এতে তুমি এবং তোমার সঙ্গী এই লোকেরাও দুর্বল হবে, কারণ এ কাজ তোমার জন্য খুবই ভারী এবং গুরুতর; তুমি একা নিজে এই কাজ সম্পন্ন করতে পারবে না।
তুমি ও এই যেসব লোক তোমার কাছে আসছে, তোমরা সবাই অবসন্ন হয়ে পড়বে। তোমার পক্ষে এ কাজটি অত্যন্ত গুরুভার; একা তুমি এটি সামলাতে পারবে না।
19 ১৯ এখন আমার কথা শোন; আমি তোমাকে পরামর্শ দিই, আর ঈশ্বর তোমার সহবর্ত্তী হোন; তুমি ঈশ্বরের সামনে লোকদের প্রতিনিধি হও এবং তাঁদের বিচার ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আস,
এখন আমার কথা শোনো ও আমি তোমাকে কিছু পরামর্শ দেব, এবং ঈশ্বর তোমার সহবর্তী হোন। তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের সামনে লোকজনের প্রতিনিধি হতে হবে এবং তাঁর কাছে তাদের দ্বন্দ্বগুলি নিয়ে আসতে হবে।
20 ২০ আর তুমি অবশ্যই তাঁদেরকে নিয়ম ও ব্যবস্থার শিক্ষা দেবে এবং তাঁদের যাওয়ার পথ ও কি কাজ করতে হবে তা অবশ্যই দেখাবে।
তাঁর হুকুমাদি ও নির্দেশাবলি তাদের শিক্ষা দাও, এবং তাদের দেখিয়ে দাও কীভাবে তাদের জীবনযাপন করতে হবে ও তাদের কেমন আচরণ করতে হবে।
21 ২১ এছাড়া তুমি এই লোকদের মধ্য থেকে কাজে দক্ষ লোকদের, যারা ঈশ্বরকে ভয় পায়, সত্যবাদী লোক যারা অন্যায় উপায়ে লাভকে ঘৃণা করে এমন লোকদের মনোনীত করে লোকদের ওপরে সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশৎপতি ও দশপতি করে অবশ্যই নিযুক্ত করবে।
কিন্তু সব লোকজনের মধ্যে থেকে যোগ্য লোকদের মনোনীত করো—যারা ঈশ্বরকে ভয় করে, বিশ্বস্ত এমন সব লোক যারা অসাধু মুনাফা ঘৃণা করে—এবং কয়েক হাজার, কয়েকশো, পঞ্চাশ-পঞ্চাশ ও দশ-দশ জনের উপর তাদের কর্মকর্তারূপে নিযুক্ত করো।
22 ২২ তারা সব দিন লোকদের বিচার করবেন; বড় বড় বিচারগুলি তোমার কাছে নিয়ে আসবেন, কিন্তু ছোট বিচারগুলি তাঁরাই করবেন; তাতে তোমার কাজ সহজ হবে, আর তাঁরা তোমরা সঙ্গে ভার বইবেন।
সবসময় এদেরই লোকজনের বিচারক হয়ে থাকতে দিয়ো, কিন্তু প্রত্যেকটি দুরূহ মামলা তাদের তোমার কাছে আনতে দিয়ো; সহজ মামলাগুলির নিষ্পত্তি তারা নিজেরাই করে নিতে পারবে। এতে তোমার বোঝা হালকা হয়ে যাবে, কারণ তারা তোমার সঙ্গে তা ভাগাভাগি করে নেবে।
23 ২৩ যদি তুমি এরকম কর এবং ঈশ্বর যদি তোমাকে এইরকম আজ্ঞা দেন, তবে তুমি সহ্য করতে পারবে এবং এই সব লোকেরাও শান্তিতে নিজেদের জায়গায় যেতে পারবে।”
তুমি যদি এরকম করো ও ঈশ্বরও যদি এরকম আদেশ দেন, তবে তুমি ধকলটি সামলাতে সক্ষম হবে, এবং এইসব লোক তৃপ্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাবে।”
24 ২৪ তাতে মোশি নিজের শ্বশুরের কথা শুনলেন এবং তিনি যা কিছু বললেন, সেই অনুসারে সব কাজ করলেন।
মোশি তাঁর শ্বশুরমশাই যিথ্রোর কথা শুনলেন এবং তিনি যা যা করতে বললেন সেসবকিছু করলেন।
25 ২৫ কাজেই মোশি সমস্ত ইস্রায়েল থেকে কাজে দক্ষ এমন পুরুষদের মনোনীত করে লোকদের ওপরে প্রধান, অর্থাৎ সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশৎপতি ও দশপতি করে নিযুক্ত করলেন।
সমগ্র ইস্রায়েলের মধ্যে থেকে তিনি যোগ্য লোকদের মনোনীত করলেন এবং লোকজনের নেতারূপে, কয়েক হাজার, কয়েকশো, পঞ্চাশ-পঞ্চাশ ও দশ-দশ জনের উপর কর্মকর্তারূপে তাঁদের নিযুক্ত করে দিলেন।
26 ২৬ তারা সব দিন লোকদের সাধারণ বিচারগুলি করতেন; আর কঠিন বিচারগুলি মোশির কাছে নিয়ে আসতেন, কিন্তু ক্ষুদ্র বিচারগুলি নিজেরাই করতেন।
সবসময় তাঁরা লোকজনের জন্য বিচারক হয়ে বিচার করতেন। দুরূহ মামলাগুলি তাঁরা মোশির কাছে আনতেন, কিন্তু সহজ মামলাগুলির নিষ্পত্তি তাঁরা নিজেরাই করতেন।
27 ২৭ পরে মোশি নিজের শ্বশুরকে বিদায় করলে তিনি নিজের দেশে ফিরে গেলেন।
পরে মোশি তাঁর শ্বশুরমশাইকে বিদায় দিলেন, এবং যিথ্রো তাঁর নিজের দেশে ফিরে গেলেন।