< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 24 >

1 আর ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্রভু পুনরায় প্রচণ্ড রেগে গেলেন, তিনি তাদের বিরুদ্ধে দায়ূদকে উস্কানি দিলেন, বললেন, “যাও, ইস্রায়েল ও যিহূদাকে গণনা কর৷”
আরেকবার সদাপ্রভুর ক্রোধ ইস্রায়েলের উপর জ্বলে উঠেছিল, এবং এই বলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে দাউদকে প্ররোচিত করলেন, “যাও, গিয়ে ইস্রায়েল ও যিহূদার জনগণনা করো।”
2 তখন রাজা নিজের সৈন্যদলের সেনাপতি যোয়াব, যিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তাঁকে আদেশ দিলেন, “তুমি দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত ইস্রায়েলের সব বংশের মধ্যে ঘুরে দেখ, তোমরা লোকদেরকে গণনা কর, আমি প্রজাদের সংখ্যা জানব৷”
অতএব রাজামশাই যোয়াব ও তাঁর সঙ্গে থাকা সেনাপতিদের বললেন, “দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত ইস্রায়েলের সব গোষ্ঠীর কাছে যাও ও যোদ্ধাদের এক তালিকা তৈরি করো, যেন আমি জানতে পারি তারা সংখ্যায় ঠিক কতজন।”
3 যোয়াব রাজাকে বললেন, “এখন যত লোক আছে, আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু তার একশো গুণ বৃদ্ধি করুন এবং আমার প্রভু মহারাজ তা নিজের চোখে দেখুন; কিন্তু এই কাজে আমার প্রভু মহারাজের ইচ্ছা কেন হল?”
কিন্তু যোয়াব রাজাকে উত্তর দিলেন, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু যেন সৈন্যসামন্তের সংখ্যা একশো গুণ বাড়িয়ে দেন, ও আমার প্রভু মহারাজ যেন স্বচক্ষে তা দেখতে পান। কিন্তু আমার প্রভু মহারাজ কেন এমনটি করতে চাইছেন?”
4 তবু যোয়াবের উপরে ও সেনাপতিদের উপরে রাজার কথাই ধার্য হল৷ পরে যোয়াব ও সেনাপতিরা ইস্রায়েলের লোকদেরকে গণনা করবার জন্য রাজার সামনে থেকে চলে গেলেন৷
রাজার আদেশে অবশ্য যোয়াব ও সেনাপতিদের কথা নাকচ হয়ে গেল; তাই তারা ইস্রায়েলের যোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করার জন্য রাজার সামনে থেকে চলে গেলেন।
5 তাঁরা যর্দ্দন পার হয়ে, গাদ দেশের উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত নগরের দক্ষিণ পাশে অরোয়েরে এবং যাসেরে শিবির স্থাপন করলেন৷
জর্ডন নদী পার হওয়ার পর, তারা অরোয়ের কাছে, নগরটির দক্ষিণ দিকের গিরিখাতে শিবির স্থাপন করলেন, এবং পরে গাদের মধ্যে দিয়ে যাসেরে গেলেন।
6 পরে তারা গিলিয়দে ও তহতীম-হদশি দেশে আসলেন; তার পর দান-যানে গিয়ে ঘুরে সীদোনে উপস্থিত হলেন৷
তারা গিলিয়দে ও তহতীম-হদশি এলাকায়, ও সেখান থেকে দান-যান হয়ে ঘুরে সীদোনের দিকে চলে গেলেন।
7 পরে সোরদুর্গে এবং হিব্বীয়দের ও কনানীয়দের সমস্ত নগরে গেলেন, আর শেষে যিহূদার দক্ষিণ অঞ্চলে বের-শেবাতে উপস্থিত হলেন৷
পরে তারা সোরের দুর্গের এবং হিব্বীয় ও কনানীয়দের সব নগরের দিকে চলে গেলেন। সবশেষে, তারা যিহূদার নেগেভে অবস্থিত বের-শেবায় চলে গেলেন।
8 এই ভাবে সমস্ত দেশ ঘোরার পর তাঁরা নয় মাস কুড়ি দিনের র শেষে যিরূশালেমে ফিরে আসলেন৷
সম্পূর্ণ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে এসে তারা নয়মাস কুড়ি দিন পর জেরুশালেমে ফিরে এলেন।
9 পরে যোয়াব গণনা লোকেদের সংখ্যা রাজার কাছে দিলেন; ইস্রায়েলে তলোয়ারধারী আট লক্ষ বলবান লোক ছিল; আর যিহূদার পাঁচ লক্ষ লোক ছিল৷
যোয়াব রাজার কাছে যোদ্ধাদের সংখ্যার বিবরণ দিলেন: ইস্রায়েলে তরোয়াল চালাতে সক্ষম ও সুস্বাস্থের অধিকারী আট লক্ষ, এবং যিহূদায় এরকম পাঁচ লক্ষ লোক ছিল।
10 ১০ দায়ূদ লোকদেরকে গণনা করার পর তাঁর হৃদয় ধুকধুক করতে লাগল৷ দায়ূদ সদাপ্রভুকে বললেন, “এই কাজ করে আমি মহাপাপ করেছি; এখন, হে সদাপ্রভু, অনুরোধ করি, নিজ দাসের অপরাধ ক্ষমা কর, কারণ আমি বড়ই অজ্ঞানের কাজ করেছি৷”
যোদ্ধাদের সংখ্যা গণনা করার পর দাউদ বিবেকের দংশনে বিদ্ধ হলেন, ও তিনি সদাপ্রভুকে বললেন, “এ কাজ করে আমি মহাপাপ করে ফেলেছি। এখন, হে সদাপ্রভু, আমি মিনতি জানাচ্ছি, তোমার দাসের অপরাধ ক্ষমা করো। আমি মহামূর্খের মতো কাজ করেছি।”
11 ১১ পরে যখন দায়ূদ খুব ভোরে উঠলেন, তখন দায়ূদের দর্শক গাদ ভাববাদীর কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হল,
পরদিন সকালে দাউদ ঘুম থেকে ওঠার আগেই সদাপ্রভুর বাক্য দাউদের দর্শক ভাববাদী গাদের কাছে উপস্থিত হল:
12 ১২ “তুমি গিয়ে দায়ূদকে বল, সদাপ্রভু এই কথা বলেন, ‘আমি তোমার সামনে তিনটি শাস্তি রাখি, তার মধ্যে তুমি একটা মনোনীত কর, আমি তাই তোমার প্রতি করব৷’”
“যাও, দাউদকে গিয়ে বলো, ‘সদাপ্রভু একথাই বলেন: আমি তোমার সামনে তিনটি বিকল্প রাখছি। সেগুলির মধ্যে একটিকে তুমি বেছে নাও, যেন আমি সেটিই তোমার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে পারি।’”
13 ১৩ পরে গাদ দায়ূদের কাছে এসে তাঁকে জানালেন, বললেন, “আপনার দেশে সাত বছর ধরে কি দূর্ভিক্ষ হবে? না আপনার শত্রুরা যতদিন আপনার পিছন পিছন তাড়া করবে, ততদিন আপনি তিনদিন পর্যন্ত তাদের আগে আগে পালিয়ে বেড়াবেন? না তিনমাস পর্যন্ত আপনার দেশে মহামারী হবে? যিনি আমাকে পাঠালেন, তাঁকে কি উত্তর দেবো, তা এখন বিবেচনা করে দেখুন৷”
অতএব গাদ দাউদের কাছে গিয়ে তাঁকে বললেন, “আপনার দেশে কি তিন বছর ধরে দুর্ভিক্ষ চলবে? অথবা আপনার শত্রুরা যখন আপনার পশ্চাদ্ধাবন করবে, তখন তিন মাস ধরে আপনি কি তাদের হাত থেকে পালিয়ে বেড়াবেন? বা আপনার দেশে কি তিন দিন ধরে মহামারি চলবে? তবে এখন এ বিষয়ে ভাবুন ও সিদ্ধান্ত নিন, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকে আমি কী উত্তর দেব।”
14 ১৪ দায়ূদ গাদকে বললেন, “আমি বড়ই বিপদে পড়লাম; আসুন, আমরা সদাপ্রভুর হাতে পড়ি, কারণ তাঁর করুণা প্রচুর; কিন্তু আমি মানুষের হাতে পড়তে চাইনা৷”
দাউদ গাদকে বললেন, “আমি খুব বিপদে পড়েছি। সদাপ্রভুর হাতেই পড়া যাক, কারণ তাঁর দয়া সুমহান; তবে আমরা যেন মানুষের হাতে না পড়ি।”
15 ১৫ পরে সকালে থেকে নির্ধারিত দিন পর্যন্ত সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপরে মহামারী পাঠালেন; আর দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত লোকেদের মধ্যে সত্তর হাজার লোক মারা গেল৷
অতএব সেদিন সকাল থেকে শুরু করে নিরূপিত সময়ের সমাপ্তি পর্যন্ত সদাপ্রভু ইস্রায়েলে এক মহামারি পাঠালেন, এবং দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত সত্তর হাজার লোক মারা গেল।
16 ১৬ আর যখন দূত যিরূশালেম বিনষ্ট করতে তারপ্রতি হাত তুললেন, তখন সদাপ্রভু এই বিপদের জন্য অনুশোচনা করে সেই লোকবিনাশকারী দূতকে বললেন, “যথেষ্ট হয়েছে, এখন তোমার হাত গুটিয়ে নাও৷” তখন সদাপ্রভুর দূত যিবূষীয় অরৌণার খামারের কাছে ছিলেন৷
স্বর্গদূত যখন জেরুশালেম ধ্বংস করার জন্য হাত বাড়িয়েছিলেন, তখন সেই দুর্বিপাকের বিষয়ে সদাপ্রভু দয়ার্দ্র হলেন ও লোকজনকে যিনি যন্ত্রণা দিচ্ছিলেন, সেই স্বর্গদূতকে তিনি বললেন, “যথেষ্ট হয়েছে! তোমার হাত সরিয়ে নাও।” সদাপ্রভুর দূত তখন যিবূষীয় অরৌণার খামারে ছিলেন।
17 ১৭ পরে দায়ূদ সেই লোকঘাতী দূতকে দেখে সদাপ্রভুকে বললেন, “দেখ, আমিই পাপ করেছি, আমিই অপরাধ করেছি, কিন্তু এই মেষেরা কি করল? অনুরোধ করি, আমারই বিরুদ্ধে ও আমার বাবার বংশের বিরুদ্ধে হাত তোলো৷”
যিনি লোকজনকে আঘাত করছিলেন, সেই স্বর্গদূতকে দাউদ যখন দেখতে পেয়েছিলেন, তখন তিনি সদাপ্রভুকে বললেন, “আমি পাপ করেছি; আমিই, এই পালক, অন্যায় করেছি। এরা তো সব মেষের মতো। এরা কী করেছে? তোমার হাত আমার ও আমার পরিবারের উপরেই এসে পড়ুক।”
18 ১৮ সেই দিন গাদ দায়ূদের কাছে এসে তাঁকে বললেন, “আপনি উঠে গিয়ে যিবুষীয় অরৌণার খামারে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে এক যজ্ঞবেদী স্থাপন করুন৷”
সেদিনই গাদ দাউদের কাছে গিয়ে তাঁকে বললেন, “যান, যিবূষীয় অরৌণার খামারে গিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটি যজ্ঞবেদি নির্মাণ করুন।”
19 ১৯ অতএব দায়ূদ সদাপ্রভুর আদেশ মত গাদের বাক্য অনুসারে উঠে গেলেন৷
অতএব সদাপ্রভু গাদের মাধ্যমে যে আদেশ দিলেন, তা পালন করতে দাউদ উঠে চলে গেলেন।
20 ২০ তখন অরৌণা চোখ তুলে দেখতে পেল যে, রাজা ও তাঁর দাসেরা তাঁর কাছে আসছেন; তাতে অরৌণা বাইরে এসে রাজার সামনে মাটিতে উপুড় হয়ে প্রণাম করল৷
অরৌণা যখন চোখ তুলে চেয়ে দেখেছিলেন যে রাজামশাই ও তাঁর কর্মচারীরা তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন, তখন তিনি বাইরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে রাজাকে প্রণাম করলেন।
21 ২১ আর অরৌণা বলল, “আমার প্রভু মহারাজ নিজের দাসের কাছে কি জন্য এসেছেন?” দায়ূদ বললেন, “লোকেদের উপর থেকে মহামারী যেন দূর হয়, এই জন্য সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে এক যজ্ঞবেদী তৈরী করব বলে আমি তোমার কাছে এই খামার কিনতে এসেছি৷”
অরৌণা বললেন, “আমার প্রভু মহারাজ কেন তাঁর দাসের কাছে এসেছেন?” “তোমার খামারটি কেনার জন্য,” দাউদ উত্তর দিলেন, “যেন আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটি যজ্ঞবেদি নির্মাণ করতে পারি, ও লোকজনের উপর ছড়িয়ে পড়া এই মহামারি থেমে যায়।”
22 ২২ তখন অরৌণা দায়ূদকে বলল, “আমার প্রভু মহারাজের চোখে যা ভাল মনে হয়, তাই নিয়ে উত্সর্গ করুন; দেখুন, হোমবলির জন্য এই ষাঁড়গুলি এবং কাঠের জন্য এই মারাই করা যন্ত্র ও ষাঁড়দের সজ্জা আছে;
অরৌণা দাউদকে বললেন, “আমার প্রভু মহারাজের যা ইচ্ছা তাই নিয়ে বলি উৎসর্গ করুন। হোমবলির জন্য এখানে বলদগুলি রাখা আছে, এবং জ্বালানি কাঠের জন্য এখানে শস্য মাড়াই কল ও বলদের জোয়ালও রাখা আছে।
23 ২৩ হে রাজা, অরৌণা রাজাকে এই সমস্ত দিচ্ছে৷” অরৌণা রাজাকে আরও বলল, “সদাপ্রভু আপনার ঈশ্বর আপনাকে গ্রহণ করুন৷”
হে মহারাজ, অরৌণা এসব কিছুই মহারাজকে দিচ্ছে।” এছাড়াও অরৌণা তাঁকে বললেন, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনাকে গ্রাহ্য করুন।”
24 ২৪ কিন্তু রাজা অরৌণাকে বললেন, “তা নয়, আমি অবশ্যই মূল্য দিয়ে তোমার কাছে থেকে এই সমস্ত কিনব; আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে হোমবলি উত্সর্গ করব না৷” পরে দায়ূদ পঞ্চাশ শেকল রূপা দিয়ে সেই খামার ও ষাঁড়গুলি কিনে নিলেন৷
কিন্তু রাজামশাই অরৌণাকে উত্তর দিলেন, “তা হবে না, আমি অবশ্যই তোমাকে এর দাম দেব। আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে এমন কোনও হোমবলি উৎসর্গ করব না, যার জন্য আমাকে কোনও দাম দিতে হয়নি।” অতএব দাউদ সেই খামারটি ও বলদগুলি কিনে নিয়েছিলেন এবং সেগুলির জন্য পঞ্চাশ শেকল রুপো দাম দিলেন।
25 ২৫ আর দায়ূদ সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে এক যজ্ঞবেদী নির্মাণ করে হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উত্সর্গ করলেন৷ এই ভাবে দেশের জন্য সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলে তিনি সন্তুষ্ট হলেন এবং ইস্রায়েলের উপর থেকে মহামারী দূর হল৷
দাউদ সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটি যজ্ঞবেদি নির্মাণ করে হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করলেন। তখন সদাপ্রভু দেশের হয়ে করা তাঁর প্রার্থনাটির উত্তর দিলেন, এবং ইস্রায়েলের উপর চলতে থাকা মহামারি থেমে গেল।

< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 24 >