< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 21 >
1 ১ দায়ূদের দিনের একটানা তিন বছর দূর্ভিক্ষ হয়; তাতে দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করলে সদাপ্রভু উত্তর করলেন, “শৌল ও তার বংশের রক্তপাতের দোষ রয়েছে, কারণ সে গিবিয়োনীয়দেরকে হত্যা করেছিল৷”
দাউদের রাজত্বকালে পরপর তিন বছর দেশে দুর্ভিক্ষ হল; তাই দাউদ সদাপ্রভুর কাছে এর কারণ জানতে চেয়েছিলেন। সদাপ্রভু বললেন, “শৌল ও তার পরিবারে রক্তপাতের দোষ আছে বলেই এমনটি হয়েছে; শৌল যেহেতু গিবিয়োনীয়দের হত্যা করেছিল, তাই এমনটি হয়েছে।”
2 ২ তাতে রাজা গিবিয়োনীয়দেরকে ডেকে তাদের সঙ্গে আলাপ করলেন৷ গিবিয়োনীয়রা ইস্রায়েল সন্তান নয়, এরা ইমোরীয়দের অবশিষ্ট অংশের লোক এবং ইস্রায়েল সন্তানরা তাদের কাছে দিব্যি করেছিল, কিন্তু শৌল ইস্রায়েল ও যিহূদা সন্তানদের পক্ষে উদ্যোগী হয়ে তাদেরকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিলেন৷
রাজামশাই গিবিয়োনীয়দের ডেকে পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললেন। (এদিকে গিবিয়োনীয়রা তো ইস্রায়েল জাতিভুক্ত ছিল না, কিন্তু তারা ছিল ইমোরীয়দের উত্তরজীবী; ইস্রায়েলীরা তাদের রেহাই দেওয়ার বিষয়ে শপথ করল, কিন্তু ইস্রায়েল ও যিহূদার হয়ে উদ্যোগ দেখাতে গিয়ে শৌল তাদের নির্মূল করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন)
3 ৩ দায়ূদ গিবিয়োনীয়দেরকে বললেন, “আমি তোমাদের জন্য কি করব? তোমরা যেন সদাপ্রভুর অধিকারকে আশীর্বাদ কর, এই জন্য আমি কি দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করব?”
দাউদ গিবিয়োনীয়দের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি তোমাদের জন্য কী করতে পারি? আমি কীভাবে ক্ষতিপূরণ করব যে তোমরা সদাপ্রভুর উত্তরাধিকারকে আশীর্বাদ করবে?”
4 ৪ গিবিয়োনীয়েরা তাঁকে বলল, “শৌলের সঙ্গে কিংবা তার বংশের সঙ্গে আমাদের রূপা বা সোনা নিয়ে কোন সমস্যা নেই, আবার ইস্রায়েলের মধ্যে কাউকেও হত্যা করা আমাদের কাজ নয়৷” পরে তিনি বললেন, “তবে তোমরা কি বলছ? আমি তোমাদের জন্য কি করব?”
গিবিয়োনীয়রা তাঁকে উত্তর দিয়েছিল, “শৌল বা তাঁর পরিবারের থেকে রুপো বা সোনা দাবি করার আমাদের কোনও অধিকার নেই, আর না আমাদের এই অধিকার আছে যে আমরা ইস্রায়েলে কাউকে মেরে ফেলতে পারব।” “তোমরা কী চাও, আমি তোমাদের জন্য কী করব?” দাউদ জিজ্ঞাসা করলেন।
5 ৫ তারা রাজাকে বলল, “যে ব্যক্তি আমাদের হত্যা করেছে ও আমরা যেন ইস্রায়েলের সীমার মধ্যে কোথাও টিকতে না পারি, বিনষ্ট হই,
তারা রাজামশাইকে উত্তর দিয়েছিল, “যিনি আমাদের সংহার করলেন এবং যেন আমরা ধ্বংস হয়ে যাই ও ইস্রায়েলে কোথাও আমাদের কোনও স্থান না থাকে, আমাদের বিরুদ্ধে যিনি এই ষড়যন্ত্র রচনা করলেন,
6 ৬ এই জন্য কুপরিকল্পনা করেছিল, তার সন্তানদের মধ্যে সাতজন পুরুষকে আমাদের কাছে সমর্পণ করুক; আমরা সদাপ্রভুর মনোনীত শৌলের গিবিয়াতে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে তাদেরকে ফাঁসি দেব৷”
তাঁর পুরুষ বংশধরদের মধ্যে থেকে সাতজনকে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক, যেন আমরা তাদের হত্যা করে দেহগুলি সদাপ্রভুর মনোনীত লোক—শৌলের নগর গিবিয়াতে সদাপ্রভুর সামনে প্রকাশ্যে টাঙিয়ে দিতে পারি।” রাজা তখন বললেন, “আমি তাদের তোমাদের হাতে তুলে দেব।”
7 ৭ তখন রাজা বললেন, “সমর্পণ করব৷ দায়ূদের ও শৌলের ছেলে যোনাথনের মধ্যে সদাপ্রভুর নামে এই শপথ হয়েছিল, তার জন্য রাজা শৌলের নাতি, যোনাথনের ছেলে মফীবোশতের প্রতি দয়া করলেন৷”
রাজা দাউদ সদাপ্রভুর সামনে তাঁর ও শৌলের ছেলে যোনাথনের মধ্যে করা শপথের খাতিরে শৌলের নাতি ও যোনাথনের ছেলে মফীবোশৎকে রেহাই দিলেন।
8 ৮ কিন্তু অয়ার মেয়ে রিস্পা শৌলের জন্য অম্মোনি ও মফীবোশৎ নামে দুটি ছেলের জন্ম দিয়েছিল এবং মহোলাতীয় বর্সিল্লয়ের ছেলে অদ্রীয়েলের জন্য শৌলের মেয়ে মীখল যে পাঁচটি ছেলের জন্ম দিয়েছিল, তাদেরকে নিয়ে রাজা গিবিয়োনীয়দের হাতে তুলে দিলেন;
কিন্তু রাজামশাই অয়ার মেয়ে রিস্পার গর্ভজাত শৌলের দুই ছেলে অর্মোণি ও মফীবোশৎকে, এবং শৌলের মেয়ে মীখলের সেই পাঁচ ছেলেকে, যাদের সে মহোলাতীয় বর্সিল্লয়ের ছেলে অদ্রীয়েলের জন্য জন্ম দিয়েছিল, তুলে এনেছিলেন।
9 ৯ যারা ঐ পর্বতে সদাপ্রভুর সামনে তাদেরকে ফাঁসি দিল৷ সে সাতজন একেবারে মারা পড়ল; তারা প্রথম ফসল কাটার দিনের অর্থাৎ যব কাটার শুরুতে নিহত হল৷
তিনি তাদের গিবিয়োনীয়দের হাতে তুলে দিলেন, এবং তারা তাদের হত্যা করে দেহগুলি সদাপ্রভুর সামনে একটি পাহাড়ের চূড়ায় প্রকাশ্যে টাঙিয়ে দিয়েছিল। সাতজনের প্রত্যেকে একইসাথে মারা গেল; ফসল কাটার দিন আরম্ভ হওয়ামাত্র, যব কাটা মাত্র শুরু হতে চলেছে, ঠিক তখনই তাদের মেরে ফেলা হল।
10 ১০ পরে অয়ার মেয়ে রিস্পা চট নিয়ে যব কাটার শুরু থেকে যে পর্যন্ত আকাশ থেকে তাদের উপরে জল না পড়ল, সে পর্যন্ত পাষাণের উপরে নিজের বিছানার মত সেই চটটি পেতে রাখল এবং দিনের আকাশের পাখিকে ও রাতে বনের পশুদেরকে তাদের উপরে বিশ্রাম করতে দিত না৷
অয়ার মেয়ে রিস্পা একটি বড়ো পাথরের উপর নিজের জন্য একটি চট বিছিয়েছিল। ফসল কাটার দিন শুরু হওয়া থেকে আরম্ভ করে যতদিন না আকাশ থেকে বৃষ্টি এসে সেই দেহগুলি ভিজিয়ে দিয়েছিল, সে না দিনে পাখিদের, না রাতে বুনো পশুদের সেগুলি স্পর্শ করতে দিয়েছিল
11 ১১ পরে অয়ার মেয়ে রিস্পা, শৌলের উপপত্নী, সেই যে কাজ করল, সেটা দায়ূদ রাজাকে জানানো হল৷
অয়ার মেয়ে তথা শৌলের উপপত্নী রিস্পা কী করল, তা যখন দাউদকে বলা হল,
12 ১২ তখন দায়ূদ গিয়ে যাবেশ গিলিয়দের লোকেদের কাছ থেকে শৌলের হাড় ও তাঁর ছেলে যোনাথনের হাড় গ্রহণ করলেন; কারণ গিলবোয়ে পলেষ্টীয়দের দ্বারা শৌলের নিহত হবার দিনের তাঁদের দুজনের মৃতদেহ পলেষ্টীয়দের দ্বারা বৈৎ-শানের চকে টাঙ্গানোর পর তারা সেখান থেকে তা চুরি করে এনেছিল৷
তখন তিনি গিয়ে যাবেশ-গিলিয়দের নগরবাসীদের কাছ থেকে শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনের অস্থি নিয়ে এলেন। (ফিলিস্তিনীরা গিলবোয়ে শৌলকে আঘাত করে মেরে ফেলে দেওয়ার পর যখন তাদের দেহগুলি বেথ-শানের খোলা চকে টাঙিয়ে রেখেছিল, তারা সেখান থেকে দেহগুলি চুরি করে এনেছিল)
13 ১৩ তিনি সেখান থেকে শৌলের হাড় ও তাঁর ছেলে যোনাথনের হাড় আনলেন এবং লোকেরা সেই ফাঁশি দেওয়া লোকদের হাড় সংগ্রহ করল৷
দাউদ সেখান থেকে শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনের অস্থি জোগাড় করে এনেছিলেন, এবং তাদেরও অস্থি সংগ্রহ করা হল, যাদের হত্যা করে টাঙিয়ে দেওয়া হল।
14 ১৪ পরে তারা শৌলের ও তাঁর ছেলে যোনাথনের হাড় বিন্যামীন দেশের সেলাতে, তাঁর বাবা কীশের কবরের মধ্যে রাখল৷ তারা রাজার আদেশ অনুসারে সমস্ত কাজ করল৷ তারপরে দেশের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হলে তিনি সন্তুষ্ট হলেন৷
তারা বিন্যামীনের সেলায় শৌলের বাবা কীশের কবরে শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনের অস্থি কবর দিয়েছিল, এবং সবকিছুই রাজার আদেশমতোই করল। পরেই, ঈশ্বর দেশের জন্য করা প্রার্থনার উত্তর দিলেন।
15 ১৫ পলেষ্টীয়দের সঙ্গে ইস্রায়েলের আবার যুদ্ধ বাঁধলো; তাতে দায়ূদ নিজের দাসদের সঙ্গে গিয়ে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন; আর দায়ূদ ক্লান্ত হলেন৷
আরও একবার ফিলিস্তিনী ও ইস্রায়েলীদের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেল। দাউদ তাঁর লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নেমে গেলেন, ও তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন
16 ১৬ তখন তিনি তিনশো শেকল পরিমাপের পিতলের বর্শাধারী যিশবী-বনোব নামে রফার এক সন্তান নতুন সাজে সেজে দায়ূদকে আঘাত করবে ঠিক করলেন৷
ইত্যবসরে রফার বংশধরদের মধ্যে একজন, সেই যিশবী-বনোব, যার বর্শার ফলাটি ব্রোঞ্জের ছিল ও যেটির ওজন ছিল তিনশো শেকল এবং নতুন এক তরোয়ালে যে সুসজ্জিত ছিল, সে বলল দাউদকে সে হত্যা করবে।
17 ১৭ কিন্তু সরূয়ার ছেলে অবীশয় তাঁর সাহায্য করে সেই পলেষ্টীয়কে আঘাত ও হত্যা করলেন৷ তখন দায়ূদের লোকেরা তাঁর কাছে দিব্যি করে বলল, “আপনি আর আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে যাবেন না, ইস্রায়েলের প্রদীপ নেভাবেন না৷”
কিন্তু সরূয়ার ছেলে অবীশয় দাউদকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন; তিনি সেই ফিলিস্তিনীকে আঘাত করে মেরে ফেলেছিলেন। পরে দাউদের লোকজন শপথ করে তাঁকে বলল, “আপনি আর কখনও আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে যাবেন না, যেন ইস্রায়েলের প্রদীপ কখনও না নেভে।”
18 ১৮ তারপরে আর একবার গোবে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ হল; তখন হূশাতীয় সিব্বখয় রফার সন্তান সফকে হত্যা করল৷
কালক্রমে, গোবে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে তাদের অন্য একটি যুদ্ধ হল। সেই সময় হূশাতীয় সিব্বখয় সেই সফকে হত্যা করল, যে ছিল রফার বংশধরদের মধ্যে একজন।
19 ১৯ আবার পলেষ্টীয়দের সঙ্গে গোবে যুদ্ধ হল; আর যারেওরগীমের ছেলে বৈৎলেহমীয় ইলহানন তাঁতের নরাজের মত বর্শাধারী গাতীয় শত্রু গলিয়াত ভ্রাতা কে হত্যা করল, ওর বর্শা তাঁতের মত ছিল৷
ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে গোবে অন্য একটি যুদ্ধে বেথলেহেমীয় যায়ীরের ছেলে ইলহানন গাতীয় গলিয়াতের সেই ভাইকে হত্যা করল, যার বর্শার হাতলটি ছিল তাঁতির দণ্ডের মতো।
20 ২০ আর একবার গাতে যুদ্ধ হল; আর সেখানে খুব লম্বা একজন ছিল, প্রতি হাত পায়ে তার ছটি করে আঙ্গুল, মোট চব্বিশ আঙ্গুল ছিল, সেও রফার সন্তান৷
গাতে সম্পন্ন অন্য আর একটি যুদ্ধে, এক-একটি হাতে ছয়টি করে ও এক-একটি পায়ে ছয়টি করে, মোট চব্বিশটি আঙুল-বিশিষ্ট দৈত্যাকার একজন লোক যুদ্ধ করছিল। সেও রফারই বংশধর ছিল।
21 ২১ সে ইস্রায়েলকে টিটকারী দিলে দায়ূদের ভাই শিমিয়ের ছেলে যোনাথন তাকে হত্যা করল৷
সে যখন ইস্রায়েলকে বিদ্রুপের খোঁচা দিয়েছিল, তখন দাউদের ভাই শিমিয়ের ছেলে যোনাথন তাকে হত্যা করল।
22 ২২ রফার এই চার সন্তান গাতে জন্মেছিল, এরা দায়ূদ ও তাঁর দাসেদের হাতে বিনষ্ট হল৷
গাতের এই চারজনই রফার বংশধর ছিল, এবং তারা দাউদ ও তাঁর লোকজনের হাতে মারা গেল।