< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 19 >
1 ১ পরে কেউ যোয়াবকে বলল, “দেখ, রাজা অবশালোমের জন্য কাঁদছেন ও শোক করছেন৷”
যোয়াবকে বলা হল, “রাজামশাই অবশালোমের জন্য কাঁদছেন ও শোকপ্রকাশ করছেন।”
2 ২ আর সেই দিনের সমস্ত লোকের জন্য বিজয় দুঃখের বিষয় হয়ে উঠলো, কারণ রাজা নিজের ছেলের বিষয়ে দুঃখিত ছিলেন, এটা লোকেরা সেই দিন শুনল৷
আর সমস্ত সৈন্যদলের কাছে সেদিন সেই বিজয় শোকে পরিণত হল, কারণ সেদিন সৈন্যসামন্তরা শুনতে পেয়েছিল, “রাজামশাই তাঁর ছেলের জন্য খুব দুঃখ পেয়েছেন।”
3 ৩ আর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাবার দিন লোকেরা যেমন বিষন্ন হয়ে চোরের মত চলে, তেমন লোকেরা ঐ দিনের চোরের মত নগরে ঢুকল৷
লোকজন সেদিন নিঃশব্দে এমনভাবে নগরে প্রবেশ করল, যে মনে হচ্ছিল একদল লোক যেন লজ্জিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে চুপিচুপি নগরে প্রবেশ করছে।
4 ৪ আর রাজা নিজের মুখ ঢেকে চিত্কার করে কেঁদে বলতে লাগলেন, “হায়৷ আমার ছেলে অবশালোম! হায় অবশালোম! আমার ছেলে৷ আমার ছেলে৷”
রাজামশাই মুখ ঢেকে জোর গলায় কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, “বাছা অবশালোম! হে অবশালোম, আমার ছেলে, আমার ছেলে!”
5 ৫ পরে যোয়াব ঘরের মধ্যে রাজার কাছে এসে বললেন, “যারা আজ আপনার প্রাণ, আপনার ছেলে-মেয়েদের প্রাণ ও আপনার স্ত্রীদের প্রাণ ও আপনার উপপত্নীদের প্রাণ রক্ষা করেছে, আপনার সেই দাসদেরকে আপনি আজ দুঃখিত করলেন৷”
তখন যোয়াব প্রাসাদে রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “আজ আপনি আপনার সেইসব লোকজনকে অপমান করেছেন, যারা এইমাত্র আপনার প্রাণ ও আপনার ছেলেমেয়েদের প্রাণ ও আপনার স্ত্রী ও উপপত্নীদের প্রাণরক্ষা করেছে।
6 ৬ বাস্তবিক আপনি নিজের শত্রুদেরকে প্রেম ও নিজের প্রিয়জনকে ঘৃণা করছেন; ফলে আপনি আজ প্রকাশ করছেন যে, শাসনকর্তারা ও দাসেরা আপনার কাছে কিছুই নয়; কারণ আজ আমি দেখতে পাচ্ছি, যদি অবশালোম বেঁচে থাকত, আর আমরা আজ সকলে আজ মরতাম, তাহলে আপনি সন্তুষ্ট হতেন৷
আপনি তাদেরই ভালোবাসেন যারা আপনাকে ঘৃণা করে ও তাদেরই ঘৃণা করেন যারা আপনাকে ভালোবাসে। আজ আপনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে আপনার কাছে সেনাপতি ও তাদের লোকজন কোনো কিছুই নয়। আমি দেখতে পাচ্ছি আজ যদি অবশালোম জীবিত থাকত ও আমরা সবাই মারা যেতাম, তবেই আপনি খুশি হতেন।
7 ৭ অতএব আপনি এখন উঠে বাইরে গিয়ে নিজের দাসদের সাথে আনন্দদায়ক কথা বলুন৷ আমি সদাপ্রভুর নামে শপথ করছি, যদি আপনি বাইরে না যান, তবে এই রাতে আপনার সঙ্গে একজনও থাকবে না এবং আপনার যুবক অবস্থা থেকে এখন পর্যন্ত যত অমঙ্গল ঘটেছে, সে সব কিছু থেকেও আপনার এই অমঙ্গল বেশি হবে৷
এখন তাই বাইরে গিয়ে আপনার লোকজনকে উৎসাহিত করুন। আমি সদাপ্রভুর নামে শপথ করে বলছি, যদি আপনি বাইরে না যান, তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজনও আপনার সঙ্গে থাকবে না। আপনার যৌবনকাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আপনার উপর যত বিপর্যয় এসেছে, সেসবের তুলনায় এটি আরও মন্দ হবে।”
8 ৮ তখন রাজা উঠে নগরের ফটকে বসলেন; আর সমস্ত লোককে বলা হল, “দেখ, রাজা ফটকের কাছে বসে আছেন৷” তাতে সমস্ত লোক রাজার সামনে আসল৷
তাই রাজামশাই উঠে সিংহদুয়ারের কাছে গিয়ে বসেছিলেন। লোকজনকে যখন বলা হল, “মহারাজ সিংহদুয়ারের কাছে বসে আছেন,” তখন তারা সবাই তাঁর সামনে এসেছিল। এদিকে, ইস্রায়েলীরা নিজের নিজের বাসায় পালিয়ে গেল।
9 ৯ ইস্রায়েলের লোকরা প্রত্যেকে নিজের নিজের তাঁবুতে পালিয়ে গিয়েছিল৷ পরে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্যে সমস্ত লোক ঝগড়া করে বলতে লাগল, “রাজা শত্রুদের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন ও পলেষ্টীয়দের হাত থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করেছিলেন; সম্প্রতি তিনি অবশালোমের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন৷
ইস্রায়েলের গোষ্ঠীদের মধ্যে সর্বত্র, সব লোকজন নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কি করে বলাবলি করছিল, “মহারাজ শত্রুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করলেন; তিনিই ফিলিস্তিনীদের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করলেন। কিন্তু এখন তিনি অবশালোমের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন;
10 ১০ আর আমরা যে অবশালোমকে নিজেদের উপরে অভিষিক্ত করেছিলাম, তিনি যুদ্ধে মারা গেছেন; অতএব তোমরা এখন রাজাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে একটি কথাও বলছ না কেন?”
এবং যাকে আমরা আমাদের উপর শাসনকর্তারূপে অভিষিক্ত করলাম, সেই অবশালোমও যুদ্ধে মারা গিয়েছে। তবে তোমরা মহারাজকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনও কথা বলছ না কেন?”
11 ১১ পরে দায়ূদ রাজা সাদোক ও অবিয়াথর এই দুই যাজকের কাছে দূত পঠিয়ে বললেন, “তোমরা যিহূদার প্রাচীনদেরকে বল, ‘রাজাকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে তোমরা কেন সকলের শেষে পড়ছ? রাজাকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে আনবার জন্য সমস্ত ইস্রায়েলের প্রার্থনা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছে৷
রাজা দাউদ যাজকদ্বয় সাদোক ও অবিয়াথরের কাছে এই খবর পাঠালেন: “যিহূদার প্রাচীনদের জিজ্ঞাসা করো, ‘রাজাকে তাঁর প্রাসাদে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আপনারা কেন সবার পিছনে পড়ে থাকবেন, যেহেতু ইস্রায়েলে সর্বত্র যা বলাবলি হচ্ছে তা রাজার সৈন্যশিবিরে তাঁর কানে গিয়েছে?
12 ১২ তোমরাই আমার ভাই, তোমরাই আমার হাড় ও আমার মাংস; অতএব রাজাকে ফিরিয়ে আনতে কেন সকলের শেষে পড়ছ?’
আপনারা তো আমার আত্মীয়স্বজন, আমার নিজের রক্তমাংস। তাই রাজাকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আপনারা কেন পিছিয়ে থাকবেন?’
13 ১৩ তোমরা অমাসাকে বল, ‘তুমি কি আমার হাড় ও আমার মাংস নও? যদি তুমি সর্বদা আমার সামনে যোয়াবের পদে সৈন্যদলের সেনাপতি না হও, তবে ঈশ্বর আমাকে সেই রকম ও তার থেকে বেশি শাস্তি দিন ৷’”
অমাসাকেও বোলো, ‘তুমি কি আমার নিজের রক্তমাংস নও? যদি যোয়াবের স্থানে তুমি সারা জীবনের জন্য আমার সৈন্যদলের সেনাপতি না হও, তবে ঈশ্বর যেন আমাকে কঠোর দণ্ড দেন।’”
14 ১৪ এই ভাবে তিনি যিহূদার সমস্ত লোকের হৃদয়কে এক জনের হৃদয়ের মত নত করলেন, তাতে তারা লোক পাঠিয়ে রাজাকে বলল, “আপনি ও আপনার সব দাস পুনরায় ফিরে আসুন৷”
তিনি যিহূদার লোকজনের মন এমনভাবে জিতে নিয়েছিলেন যে তারা সকলে একমত হল। তারা রাজামশাইকে খবর দিয়ে পাঠিয়েছিল, “আপনি ও আপনার সব লোকজন ফিরে আসুন।”
15 ১৫ পরে রাজা পুনরায় ফিরে যর্দ্দন পর্যন্ত আসলেন৷ আর যিহূদার লোকেরা রাজার সঙ্গে দেখা করতে ও তাঁকে যর্দ্দন পার করে আনতে গিলগলে গেল৷
তখন রাজামশাই ফিরে এলেন ও জর্ডন নদী পর্যন্ত চলে গেলেন। এদিকে যিহূদার লোকজন রাজার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জর্ডন নদী পার করিয়ে আনার জন্য গিল্গলে গেল।
16 ১৬ তখন দায়ূদ রাজার সঙ্গে দেখা করতে বহুরীমের অধিবাসী গেরার ছেলে বিন্যামীনীয় শিমিয়ি তাড়াতাড়ি করে যিহূদার লোকেদের সঙ্গে আসল৷
বহুরীমের অধিবাসী গেরার ছেলে বিন্যামীনীয় শিমিয়ি রাজা দাউদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তড়িঘড়ি যিহূদার লোকজনের সাথে মিলে সেখানে এসেছিল।
17 ১৭ আর বিন্যামীন বংশের এক হাজার লোক তার সঙ্গে ছিল এবং শৌলের বংশের দাস সীবঃ ও তার পনেরোটি ছেলে ও কুড়িটি দাস তার সঙ্গে ছিল, তারা রাজার সামনে জলের মধ্য দিয়ে যর্দ্দন পার হল৷
তার সঙ্গে ছিল এক হাজার জন বিন্যামীনীয় লোক, শৌলের পারিবারিক দাস সীব, এবং সীবের পনেরোজন ছেলে ও কুড়ি জন দাস। রাজামশাই যেখানে ছিলেন, তারা জর্ডন নদীর সেই পারে দৌড়ে গেল।
18 ১৮ তখন ফেরির নৌকা রাজার আত্মীয়দেরকে পার করতে ও তাঁর ইচ্ছামত কাজ করতে অন্য পারে গিয়েছিল৷ রাজার যর্দ্দন পার হবার দিনের গেরার ছেলে শিমিয়ি রাজার সামনে উপুড় হয়ে পড়ল৷
রাজার পরিবারকে আনার ও তাঁর ইচ্ছামতো সবকিছু করার জন্য তারা নদীর অগভীর স্থানটি পার হয়ে গেল। গেরার ছেলে শিমিয়ি জর্ডন নদী পার করে উবুড় হয়ে রাজামশাইকে প্রণাম করল
19 ১৯ সে রাজাকে বলল, “আমার প্রভু আমার অপরাধ নেবেন না; যে দিন আমার প্রভু মহারাজ যিরূশালেম থেকে বের হন, সেই দিন আপনার দাস আমি যে খারাপ কাজ করেছিলাম, তা মনে রাখবেন না, মহারাজ কিছু মনে করবেন না৷
ও তাঁকে বলল, “মহারাজ যেন আমায় দোষী সাব্যস্ত না করলেন। আমার প্রভু মহারাজ যেদিন জেরুশালেম ছেড়ে গেলেন, সেদিন আপনার দাস যে অপরাধ করেছিল, তা মনে রাখবেন না। মহারাজ যেন তা মন থেকে বের করে ফেলেন।
20 ২০ আপনার দাস আমি জানি, আমি পাপ করেছি, এই জন্য দেখুন, যোষেফের সমস্ত বংশের মধ্যে প্রথমে আমিই আজ আমার প্রভু মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে নেমে এসেছি৷”
কারণ আপনার দাস আমি জানি যে আমি পাপ করেছি, কিন্তু আজ আমিই যোষেফের বংশ থেকে প্রথমজন হয়ে এখানে আমার প্রভু মহারাজের সঙ্গে দেখা করার জন্য নেমে এসেছি।”
21 ২১ কিন্তু সরূয়ার ছেলে অবীশয় উত্তর করলেন, “এজন্য কি শিমিয়ির প্রাণদণ্ড হবে না যে, সে সদাপ্রভুর অভিষিক্তকে ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছিল?”
তখন সরূয়ার ছেলে অবীশয় বলল, “এজন্য কি শিমিয়িকে মেরে ফেলা হবে না? সে তো সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছিল।”
22 ২২ দায়ূদ বললেন, “হে সরূয়ার ছেলেরা৷ তোমাদের সঙ্গে আমার বিষয় কি যে, তোমরা আজ আমার বিপক্ষ হচ্ছো? আজ কি ইস্রায়েলের মধ্যে কারও প্রাণদন্ড হতে পারে? কারণ আমি কি জানি না যে, আজ আমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা?”
দাউদ উত্তর দিলেন, “হে সরূয়ার ছেলেরা, এতে তোমাদের কী? তোমাদের কি অনধিকারচর্চা করার কোনও অধিকার আছে? আজ কি ইস্রায়েলে কাউকে মেরে ফেলা উচিত হবে? আমি কি জানি না যে আজ আমি ইস্রায়েলের রাজা?”
23 ২৩ পরে রাজা শিমিয়িকে বললেন, “তোমার প্রাণদন্ড হবে না;” তার ফলে রাজা তার কাছে শপথ করলেন৷
তাই রাজামশাই শিমিয়িকে বললেন, “তুমি মরবে না।” রাজামশাই শপথ করে তার কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন।
24 ২৪ পরে শৌলের নাতি মফীবোশৎ রাজার সঙ্গে দেখা করতে নেমে আসলেন; রাজার ভালো ভাবে ফিরে আসার দিন পর্যন্ত তিনি নিজের পায়ের প্রতি যত্ন নেননি, দাড়ি পরিষ্কার করেননি ও পোশাক পরিষ্কার করেননি৷
শৌলের নাতি মফীবোশৎও রাজার সঙ্গে দেখা করতে নেমে গেলেন। যেদিন রাজামশাই চলে গেলেন, সেদিন থেকে শুরু করে নিরাপদে তাঁর ফিরে আসার দিন পর্যন্ত মফীবোশৎ তাঁর পায়ের যত্ন নেননি বা তাঁর দাড়ি-গোঁফ ছাঁটেননি বা তাঁর কাপড়চোপড়ও ধোয়াধুয়ি করেননি।
25 ২৫ আর যখন তিনি যিরূশালেমের রাজার সঙ্গে দেখা করতে আসলেন, তখন রাজা তাঁকে বললেন, “হে মফীবোশৎ, তুমি কেন আমার সঙ্গে যাও নি?”
জেরুশালেম থেকে যখন তিনি রাজার সঙ্গে দেখা করতে এলেন, রাজামশাই তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মফীবোশৎ, তুমি কেন আমার সঙ্গে যাওনি?”
26 ২৬ তিনি উত্তর দিলেন, “হে আমার প্রভু, হে রাজা, আমার দাস আমাকে ঠকিয়েছিল; কারণ আপনার দাস আমি বলেছিলাম, ‘আমি গাধা সাজিয়ে তার উপরে চড়ে মহারাজের সঙ্গে যাব,’ কারণ আপনার দাস আমি খোঁড়া৷
তিনি বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, যেহেতু আপনার দাস—আমি খঞ্জ, তাই আমি বললাম, ‘আমার গাধায় জিন চাপিয়ে, আমি তাতে চড়ে যাব, যেন আমি মহারাজের সঙ্গেই যেতে পারি।’ কিন্তু আমার দাস সীব আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
27 ২৭ সে আমার প্রভু মহারাজের কাছে আপনার এই দাসের নিন্দা করেছে; কিন্তু আমার প্রভু মহারাজ ঈশ্বরের দূতের সমান; অতএব আপনার চোখে যা ভাল মনে হয়, তাই করুন৷
সে আমার প্রভু মহারাজের কাছে আমার বদনামও করেছে। আমার প্রভু মহারাজ এক স্বর্গদূতের মতো মানুষ; তাই আপনার যা ইচ্ছা তাই করুন।
28 ২৮ আমার প্রভু মহারাজের সামনে আমার সমস্ত বাবার বংশ একদম মৃত্যুর যোগ্য ছিল, তবুও যারা আপনার টেবিলে আহার করে, আপনি তাদের সঙ্গে বসতে আপনার এই দাসকে জায়গা দিয়েছিলেন; অতএব আমার আর কি অধিকার আছে যে, মহারাজের কাছে পুনরায় কাঁদবো?”
আমার ঠাকুরদাদার সব বংশধরই আমার প্রভু মহারাজের কাছ থেকে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই পাওয়ার যোগ্য নয়, কিন্তু আপনি সেইসব লোকের মাঝখানে আপনার দাসকে এক স্থান করে দিয়েছেন, যারা আপনার টেবিলে বসে ভোজনপান করে। তাই মহারাজের কাছে আর কোনও আবেদন জানানোর অধিকার কি আমার আছে?”
29 ২৯ রাজা তাকে বললেন, “তোমার বিষয়ে বেশি কথার কি প্রয়োজন? আমি বলছি, তুমি ও সীবঃ উভয়ে সেই জমি ভাগ করে নাও৷”
রাজামশাই তাঁকে বললেন, “আর কিছু বলবেই বা কেন? আমি তো তোমাকে ও সীবকে জমি ভাগাভাগি করে নেওয়ার আদেশ দিয়েই দিয়েছি।”
30 ৩০ তখন মফীবোশৎ রাজাকে বললেন, “সে সমস্তই নিয়ে নিক, কারণ আমার প্রভু মহারাজ ভালো ভাবে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন৷”
মফীবোশৎ রাজাকে বললেন, “এখন যখন আমার প্রভু মহারাজ নিরাপদে বাসায় ফিরে এসেছেন, তখন সেই সবকিছু নিয়ে নিক।”
31 ৩১ আর গিলিয়দীয় বর্সিল্লয় রোগলীম থেকে নেমে এসেছিলেন, তিনি রাজাকে যর্দ্দনের পারে রেখে যাবার জন্য তাঁর সঙ্গে যর্দ্দন পার হয়েছিলেন৷
গিলিয়দীয় বর্সিল্লয়ও রোগলীম থেকে রাজার সঙ্গী হয়ে জর্ডন নদী পার করে সেখান থেকে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য নেমে এলেন।
32 ৩২ বর্সিল্লয় খুব বৃদ্ধ, তাঁর আশী বছর বয়স ছিল; আর মহনয়িমে রাজার থাকার দিনের তিনি রাজার খাদ্য যোগাচ্ছিলেন, কারণ তিনি একজন খুব বড় মানুষ ছিলেন৷
বর্সিল্লয় বয়সে বৃদ্ধ ছিলেন, তাঁর বয়স তখন আশি বছর। রাজামশাই যখন মহনয়িমে ছিলেন, তখন বর্সিল্লয় তাঁর জন্য খাবারদাবারের ব্যবস্থা করলেন, কারণ তিনি খুব ধনী লোক ছিলেন।
33 ৩৩ রাজা বর্সিল্লয়কে বললেন, “তুমি আমার সঙ্গে পার হয়ে এসো, আমি তোমাকে যিরূশালেমে আমার সঙ্গে লালনপালন করব৷”
রাজামশাই বর্সিল্লয়কে বললেন, “নদী পার হয়ে আমার সঙ্গে গিয়ে জেরুশালেমে থাকুন, আর আমি আপনার জন্য সব ব্যবস্থা করব।”
34 ৩৪ কিন্তু বর্সিল্লয় রাজাকে বললেন, “আমার আয়ুর আর কতদিন আছে যে, আমি মহারাজের সঙ্গে যিরূশালেমে উঠে যাব?
কিন্তু বর্সিল্লয় রাজাকে উত্তর দিলেন, “আর কয়বছরই বা আমি বাঁচব যে মহারাজের সঙ্গে আমি জেরুশালেমে গিয়ে থাকব?
35 ৩৫ আজ আমার বয়স আশী বছর; এখন কি ভাল মন্দের বিশেষ বুঝতে পারি? যা খাই বা যা পান করি, আপনার দাস আমি কি তার স্বাদ বুঝতে পারি? এখন কি আর গায়ক ও গায়িকাদের গানের শব্দ শুনতে পাই? তবে কেন আপনার এই দাস আমার প্রভু মহারাজের বোঝা হবে?
আমার বয়স এখন আশি বছর। কী উপভোগ্য আর কী নয়, তার পার্থক্য কি এখন আমি করতে পারি? আপনার এই দাস কি খাদ্য বা পানীয়র স্বাদ বুঝতে পারে? আমি কি এখন আর গায়ক ও গায়িকার সুর শুনতে পারি? আপনার এই দাস কেনই বা আমার প্রভু মহারাজের কাছে অতিরিক্ত এক বোঝা হয়ে থাকবে?
36 ৩৬ আপনার দাস মহারাজের সঙ্গে কেবল যর্দ্দন পার হয়ে যাব, এই মাত্র; মহারাজ কেন এমন পুরস্কারে আমাকে পুরষ্কৃত করবেন?
আপনার এই দাস জর্ডন নদী পার হয়ে অল্প কিছু দূর মহারাজের সঙ্গে যাবে, কিন্তু কেনই বা মহারাজ এভাবে আমাকে পুরস্কৃত করবেন?
37 ৩৭ অনুগ্রহ করে আপনার এই দাসকে ফিরে যেতে দিন; আমি নিজের নগরে নিজের বাবা মার কবরের কাছে মরব৷ কিন্তু দেখুন, এই আপনার দাস কিমহম; এ আমার প্রভু মহারাজের সঙ্গে পার হয়ে যাক; আপনার যা ভাল বোধ হয়, এর প্রতি করবেন৷”
আপনার দাসকে ফিরে যেতে দিন, যেন আমি আমার নিজের নগরে আমার মা-বাবার কবরের কাছেই মরতে পারি। কিন্তু এই দেখুন আপনার দাস কিম্হম। একেই আমার প্রভু মহারাজের সঙ্গে নদী পার হয়ে যেতে দিন। আপনার যা ইচ্ছা, আপনি এর জন্য তাই করুন।”
38 ৩৮ রাজা উত্তর দিলেন, কিমহম আমার সঙ্গে পার হয়ে যাবে; তোমার যা ভাল মনে হয়, আমি তার প্রতি তাই করব এবং তুমি আমাকে যা করতে বলবে, তোমার জন্য আমি তাই করব৷
রাজামশাই বললেন, “কিম্হম তো আমার সঙ্গে নদী পার হয়ে যাবে, এবং আপনি আমার কাছে যা চান, আমি আপনার জন্য তাই করব।”
39 ৩৯ পরে সমস্ত লোক যর্দ্দন পার হল, রাজাও পার হলেন এবং রাজা বর্সিল্লয়কে চুমু করলেন ও আশীর্বাদ করলেন; পরে তিনি নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন৷
অতএব সব লোকজন জর্ডন নদী পার হয়ে গেল, এবং পরে রাজা নিজে পার হলেন। রাজা বর্সিল্লয়কে চুম্বন করলেন ও তাঁকে বিদায় জানিয়েছিলেন, এবং বর্সিল্লয় নিজের ঘরে ফিরে গেলেন।
40 ৪০ আর রাজা পার হয়ে গিলগলে গেলেন এবং কিমহম তাঁর সঙ্গে গেল৷ এবং যিহূদার সমস্ত লোক ও ইস্রায়েলের অর্ধেক লোক গিয়ে রাজাকে পার করে নিয়ে এসেছিল৷
রাজামশাই যখন নদী পার হয়ে গিল্গলে গেলেন, কিমহমও তাঁর সঙ্গে নদী পার হল। যিহূদার সৈন্যদলের সমস্ত সৈন্যসামন্ত ও ইস্রায়েলের সৈন্যদলের অর্ধেক সৈন্যসামন্ত রাজামশাইকে নিয়ে এসেছিল।
41 ৪১ আর দেখ, ইস্রায়েলের সব লোক রাজার কাছে এসে রাজাকে বলল, “আমাদের ভাই যিহূদার লোকেরা কেন আপনাকে চুরি করে আনল? মহারাজাকে, তাঁর আত্মীয়দেরকে ও দায়ূদের সঙ্গে তাঁর সমস্ত লোককে, যর্দ্দন পার করে কেন আনল?”
অচিরেই ইস্রায়েলের সব লোকজন রাজার কাছে এসে তাঁকে বলল, “আমাদের ভাইরা, যিহূদার লোকজন কেন মহারাজকে চুরি করে নিয়ে গিয়ে আবার তাঁকে ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের তাঁর সব লোকজন সমেত জর্ডন নদী পার করে নিয়ে এসেছে?”
42 ৪২ তখন যিহূদার সব লোক ইস্রায়েলের লোকদেরকে উত্তর করল, “রাজা তো আমাদের কাছে আত্মীয়, তবে তোমরা এ বিষয়ে কেন রেগে যাও? আমরা কি রাজার কিছু খেয়েছি? অথবা তিনি কি আমাদেরকে কিছু উপহার দিয়েছেন?”
যিহূদার সব লোকজন ইস্রায়েলের লোকজনকে বলল, “আমরা এরকম করেছি, কারণ মহারাজ আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তোমরা এতে রাগ করছ কেন? আমরা কি মহারাজের কিছু খেয়েছি? আমরা কি নিজেদের জন্য কিছু নিয়েছি?”
43 ৪৩ তখন ইস্রায়েলের লোকেরা উত্তর দিয়ে যিহূদার লোকদেরকে বলল, “রাজার ওপর আমাদের দশ ভাগ অধিকার আছে, আরও দায়ূদের ওপর তোমাদের থেকে আমাদের অধিকার বেশি৷ অতএব আমাদেরকে কেন তুচ্ছ মনে করলে? আর আমাদের রাজাকে ফিরিয়ে আনবার প্রস্তাব কি প্রথমে আমরাই করি নি?” তখন ইস্রায়েল লোকেদের কথার থেকে যিহূদার লোকেদের কথা বেশি কঠিন হল৷
তখন ইস্রায়েলের লোকজন যিহূদার লোকজনকে উত্তর দিয়েছিল, “মহারাজের উপর আমাদের দশ ভাগ অধিকার আছে; তাই দাউদের উপর তোমাদের তুলনায় আমাদের বেশি দাবি আছে। তোমরা কেন তবে আমাদের অবজ্ঞার চোখে দেখছ? আমরাই কি প্রথমে আমাদের মহারাজকে ফিরিয়ে আনার কথা বলিনি?” কিন্তু যিহূদার লোকজন তাদের দাবিটি ইস্রায়েলের লোকজনের তুলনায় বেশি জোরালোভাবে পেশ করল।