< দ্বিতীয় রাজাবলি 20 >

1 সেই দিনের হিষ্কিয় খুব অসুস্থ হয়েছিলেন। তখন আমোসের ছেলে যিশাইয় ভাববাদী তাঁর কাছে গেলেন এবং তাঁকে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন যে, ‘তুমি তোমার বাড়ির ব্যবস্থা করে রাখ, কারণ তোমার মৃত্যু হবে, বাঁচবে না’।”
সেই সময় হিষ্কিয় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং তা মৃত্যুজনক হয়ে গেল। আমোষের ছেলে ভাববাদী যিশাইয় তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু একথাই বলেন: তুমি বাড়ির সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক করে রাখো, কারণ তুমি মরতে চলেছ; তুমি আর সেরে উঠবে না।”
2 তখন হিষ্কিয় দেয়ালের দিকে মুখ ফেরালেন এবং সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন,
হিষ্কিয় দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলেন,
3 “হে সদাপ্রভু, তুমি স্মরণ করে দেখ আমি তোমার সামনে কেমন বিশ্বস্তভাবে ও সমস্ত হৃদয় দিয়ে চলেছি এবং তোমার চোখে যা কিছু ভালো তাই করেছি।” এবং হিষ্কিয় খুব কাঁদলেন।
“হে সদাপ্রভু, স্মরণ করো, আমি কীভাবে তোমার সামনে বিশ্বস্ততায় ও সম্পূর্ণ হৃদয়ে ভক্তি প্রকাশ করেছি। তোমার দৃষ্টিতে যা কিছু মঙ্গলজনক, আমি তাই করেছি।” এই বলে হিষ্কিয় অত্যন্ত রোদন করতে লাগলেন।
4 যিশাইয় বের হয়ে রাজবাড়ীর মাঝখানের উঠান পার হয়ে যাওয়ার আগেই সদাপ্রভুর বাক্য তাঁর কাছে প্রকাশিত হল, বললেন,
মাঝখানের প্রাঙ্গণ ছেড়ে যাওয়ার আগেই সদাপ্রভুর বাণী যিশাইয়ের কাছে উপস্থিত হল:
5 “তুমি ফিরে যাও এবং আমার লোকদের নেতা হিষ্কিয়কে বল যে, তার পূর্বপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলেছেন, ‘আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি ও তোমার চোখের জল দেখেছি। আমি তোমাকে তৃতীয় দিনের সুস্থ করব এবং তুমি সদাপ্রভুর গৃহে যাবে।
“তুমি ফিরে গিয়ে আমার প্রজাদের শাসনকর্তা হিষ্কিয়কে এই কথা বলো, ‘সদাপ্রভু, তোমার পিতৃপুরুষ দাউদের ঈশ্বর এই কথা বলেন: আমি তোমার প্রার্থনা শ্রবণ করেছি ও তোমার অশ্রু দেখেছি; আমি তোমাকে সুস্থ করব। আজ থেকে তৃতীয় দিনের মাথায় তুমি সদাপ্রভুর মন্দিরে যাবে।
6 আমি তোমার আয়ু আরও পনেরো বছর বাড়িয়ে দেব এবং আমি অশূর রাজার হাত থেকে তোমাকে এবং এই শহরকে উদ্ধার করব। আমার জন্য ও আমার দাস দায়ূদের জন্য আমি এই শহরকে রক্ষা করব’।”
আমি তোমার জীবনের আয়ুর সঙ্গে আরও পনেরো বছর যোগ করব। এছাড়াও আমি তোমাকে ও এই নগরটিকে আসিরীয় রাজার হাত থেকে উদ্ধার করব। আমার স্বার্থে ও আমার দাস দাউদের স্বার্থেই আমি এই নগরকে রক্ষা করব।’”
7 ফলে যিশাইয় বললেন, “ডুমুর ফলের একটা চাক নিয়ে এস।” লোকেরা তা এনে হিষ্কিয়ের ফোড়ার উপরে দিল এবং তিনি সুস্থ হলেন।
পরে যিশাইয় বললেন, “ডুমুরফল ছেঁচে একটি প্রলেপ তৈরি করে নাও।” লোকেরা সেরকমই করল এবং সেই বিষফোড়ার উপর সেটি লাগিয়ে দিয়েছিল, ও তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।
8 হিষ্কিয় যিশাইয়কে বলেছিলেন যে, “সদাপ্রভু আমাকে সুস্থ করবেন এবং এখন থেকে তৃতীয় দিনের আমি যে সদাপ্রভুর গৃহে যাব তার চিহ্ন কি?”
হিষ্কিয় এর আগে যিশাইয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “সদাপ্রভু যে আমাকে সুস্থ করবেন ও আজ থেকে তৃতীয় দিনের মাথায় আমি যে সদাপ্রভুর মন্দিরে যাব, তার চিহ্ন কী হবে?”
9 যিশাইয় উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, “সদাপ্রভু যে তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন তার জন্য তিনি আপনাকে জন্য একটি চিহ্ন দেবেন। ছায়া কি দশ ধাপ এগিয়ে যাবে, না দশ ধাপ পিছিয়ে যাবে?”
যিশাইয় উত্তর দিলেন, “সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞানুসারেই যে সবকিছু করবেন, তোমার কাছে সদাপ্রভুর এই চিহ্নই হবে তার প্রমাণ: সূর্য-ঘড়িতে ছায়াটি কি দশ ধাপ এগিয়ে যাবে, না দশ ধাপ পিছিয়ে যাবে?”
10 ১০ হিষ্কিয় উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, “ছায়াটি দশ ধাপ এগিয়ে যাওয়াটাই সহজ ব্যাপার। না, ছায়াটি দশ ধাপ পিছিয়ে যাক।”
“ছায়াটি দশ ধাপ এগিয়ে যাওয়া তো মামুলি এক ব্যাপার,” হিষ্কিয় বললেন। “বরং, সেটি দশ ধাপ পিছিয়েই যাক।”
11 ১১ তখন যিশাইয় ভাববাদী সদাপ্রভুকে চীত্কার করে ডাকলেন। এবং তাতে আহসের সিঁড়ি থেকে ছায়াটা যেখানে ছিল সেখান থেকে দশ ধাপ পিছিয়ে পড়েছিল।
তখন ভাববাদী যিশাইয় সদাপ্রভুকে ডেকেছিলেন, এবং সদাপ্রভু আহসের সূর্য-ঘড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া সেই ছায়াটিকে দশ ধাপ পিছিয়ে দিলেন।
12 ১২ সেই দিনের বলদনের ছেলে বাবিলের রাজা বরোদক্‌বলদন্‌ হিষ্কিয়ের কাছে চিঠি ও উপহার পাঠিয়ে দিলেন, কারণ তিনি শুনেছিলেন যে হিষ্কিয় অসুস্থ ছিলেন।
সেই সময় বলদনের পুত্র, ব্যাবিলনের রাজা মরোদক-বলদন হিষ্কিয়ের কাছে পত্র ও উপহার পাঠালেন, কারণ তিনি হিষ্কিয়ের অসুস্থতার কথা শুনেছিলেন।
13 ১৩ হিষ্কিয় সেই চিঠিগুলি গ্রহণ করলেন এবং তাঁর সব ভান্ডারগুলোতে যা মূল্যবান বস্তু ছিল, অর্থাৎ সোনা, রূপা, সুগন্ধি মশলা, দামী তেল এবং তাঁর অস্ত্রশস্ত্রের ভান্ডার ও ধনভান্ডারে যা কিছু ছিল সব সেই দূতদের দেখালেন। হিষ্কিয়ের রাজবাড়ীতে কিম্বা তাঁর সারা রাজ্যে এমন কিছু ছিল না যা তিনি তাদের দেখান নি।
হিষ্কিয় আনন্দের সঙ্গে ওইসব প্রতিনিধিকে গ্রহণ করলেন। তিনি তাঁর ভাণ্ডারগৃহের সবকিছুই তাদের দেখালেন—রুপো, সোনা, সুগন্ধি মশলা ও বহুমূল্য তেল, তাঁর অস্ত্রশস্ত্র ও তাঁর ধনসম্পদের সমস্ত কিছু তাদের দেখালেন। তাঁর রাজপ্রাসাদে বা তাঁর সমস্ত রাজ্যের মধ্যে এমন কিছুই ছিল না, যা হিষ্কিয় তাদের দেখাননি।
14 ১৪ তখন যিশাইয় ভাববাদী রাজা হিষ্কিয়ের কাছে আসলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই লোকগুলি আপনাকে কি বলল? কোথা থেকেই বা তারা আপনার কাছে এসেছিল?” হিষ্কিয় বললেন, “ওরা দূর দেশ থেকে, বাবিল থেকে এসেছিল।”
তখন ভাববাদী যিশাইয় রাজা হিষ্কিয়ের কাছে গেলেন ও তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ওই লোকেরা কী বলল এবং ওরা কোথা থেকে এসেছিল?” হিষ্কিয় উত্তর দিলেন, “বহু দূরের এক দেশ থেকে। ওরা ব্যাবিলন থেকে এসেছিল।”
15 ১৫ যিশাইয় জিজ্ঞাসা করলেন, “তারা আপনার রাজবাড়ীর মধ্যে কি কি দেখেছে?” হিষ্কিয় উত্তর দিয়ে বললেন, “তারা আমার রাজবাড়ীর সব কিছুই দেখেছে। আমার ধনভান্ডারের এমন কিছু মূল্যবান জিনিস নেই যা আমি তাদের দেখায়নি।”
ভাববাদী জিজ্ঞাসা করলেন, “ওরা আপনার প্রাসাদে কী কী দেখল?” হিষ্কিয় বললেন, “ওরা আমার প্রাসাদের সবকিছুই দেখেছে। আমার ঐশ্বর্যভাণ্ডারে এমন কিছুই নেই, যা আমি ওদের দেখাইনি।”
16 ১৬ অতএব যিশাইয় হিষ্কিয়কে বললেন, “সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন।
তখন যিশাইয় হিষ্কিয়কে বললেন, “আপনি সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণ করুন:
17 ১৭ দেখো, এমন দিন আসছে যে, যখন আপনার রাজবাড়ীর সব কিছু এবং আপনার পূর্বপুরুষরা যা কিছু আজ পর্যন্ত জমিয়ে রেখেছে সবই বাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে, কিছুই পড়ে থাকবে না, এটি সদাপ্রভু বলেন।
সেই সময় অবশ্যই উপস্থিত হবে, যখন আপনার প্রাসাদে যা কিছু আছে এবং আপনার পিতৃপুরুষেরা এ পর্যন্ত যা কিছু সঞ্চয় করেছেন, সে সমস্তই ব্যাবিলনে বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে। কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, বলেন সদাপ্রভু।
18 ১৮ এবং আপনার নিজের সন্তান, কয়েকজন বংশধর, যাদের আপনি জন্ম দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তারা বাবিলের রাজাবাড়ীতে নপুংসক হয়ে থাকবে।”
আর আপনার কিছু সংখ্যক বংশধর, যারা আপনারই রক্তমাংস, যাদের আপনি জন্ম দেবেন, তাদেরও সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা ব্যাবিলনের রাজপ্রাসাদে নপুংসক হয়ে সেবা করবে।”
19 ১৯ তখন উত্তর দিয়ে হিষ্কিয় যিশাইয়কে বললেন, “সদাপ্রভুর কথা যা আপনি বললেন, তা ভাল।” কারণ তিনি ভেবেছিলেন যে, যদি আমার দিনের শান্তি ও সত্য হয়, তবে সেটা কি ভাল নয়?
হিষ্কিয় উত্তর দিলেন, “সদাপ্রভুর যে বাক্য আপনি বললেন, তা ভালোই।” কারণ তিনি ভাবলেন, তাঁর নিজের জীবনকালে তো শান্তি আর নিরাপত্তা থাকবে!
20 ২০ হিষ্কিয়ের অন্যান্য বাকি সমস্ত কাজের কথা এবং সব শক্তি এবং কেমন করে তিনি পুকুর ও সুড়ঙ্গ কেটেছিলেন ও শহরে জল নিয়ে এসেছিলেন সেগুলি কি যিহূদার রাজাদের ইতিহাস নামে বইটিতে লেখা নেই?
হিষ্কিয়ের রাজত্বকালের অন্যান্য সব ঘটনা, তাঁর সব কীর্তি এবং তিনি কীভাবে পুকুর ও সুরঙ্গ খুঁড়ে নগরে জল এনেছিলেন, তার বিবরণ কি যিহূদার রাজাদের ইতিহাস-গ্রন্থে লেখা নেই?
21 ২১ হিষ্কিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে নিদ্রাগত হলেন এবং তাঁর ছেলে মনঃশি তাঁর জায়গায় রাজা হলেন।
হিষ্কিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের সাথে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। তাঁর ছেলে মনঃশি রাজারূপে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন।

< দ্বিতীয় রাজাবলি 20 >