< দ্বিতীয় রাজাবলি 17 >

1 যিহূদার রাজা আহসের রাজত্বের বারো বছরের দিন এলার ছেলে হোশেয় রাজত্ব করতে শুরু করেন। তিনি নয় বছর শমরিয়াতে ইস্রায়েলের ওপর রাজত্ব করেছিলেন।
যিহূদার রাজা আহসের রাজত্বকালের দ্বাদশতম বছরে এলার ছেলে হোশেয় শমরিয়ায় ইস্রায়েলের রাজা হলেন, এবং তিনি নয় বছর রাজত্ব করলেন।
2 সদাপ্রভুর চোখে যা কিছু মন্দ তিনি তাই করতেন, কিন্তু তাঁর আগে ইস্রায়েলে যে সব রাজারা ছিলেন, তাদের মত নয়।
সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা যা মন্দ, তিনি তাই করলেন, তবে ইস্রায়েলে তাঁর পূর্বসূরি রাজাদের মতো তা করেননি।
3 অশূর রাজা শল্‌মনেষর হোশেয়কে আক্রমণ করতে আসলেন। তার ফলে হোশেয় তাঁর দাস হলেন এবং তাঁকে উপঢৌকন দিতে লাগলেন।
আসিরিয়ার রাজা শল্‌মনেষর সেই হোশেয়কে আক্রমণ করতে এলেন, যিনি আগে শল্‌মনেষরের কেনা গোলাম ছিলেন এবং তাঁকে রাজকরও দিতেন।
4 কিন্তু অশূরের রাজা জানতে পারলেন যে, হোশেয় তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, কারণ তিনি মিশরের সো রাজার কাছে দূত পাঠিয়েছিলেন এবং অশূরের রাজাকে প্রতি বছরে যে উপঢৌকন দিতেন তা আর পাঠালেন না। সুতরাং শল্‌মনেষর হোশেয়কে বন্দী করে জেলে দিলেন।
কিন্তু আসিরিয়ার রাজা আবিষ্কার করলেন যে হোশেয় একজন বিশ্বাসঘাতক, কারণ তিনি মিশরের রাজা সো-র কাছে দূত পাঠালেন, এবং আগে যেমন বছরের পর বছর তিনি আসিরিয়ার রাজাকে রাজকর দিয়ে যেতেন, এখন তিনি আর তা দিচ্ছিলেন না। তাই শল্‌মনেষর তাঁকে অবরুদ্ধ করে জেলখানায় পুরে দিলেন।
5 অশূরের রাজা সমস্ত দেশটা আক্রমণ করে শমরিয়াতে গেলেন এবং তিন বছর ধরে সেটা ঘেরাও করে রাখলেন।
আসিরিয়ার রাজা গোটা দেশে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছিলেন, শমরিয়ার দিকে কুচকাওয়াজ করে এগিয়ে গেলেন এবং তিন বছর নগরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।
6 হোশেয়ের রাজত্বের নয় বছর কালীন অশূরের রাজা শমরিয়াকে দখল করলেন এবং ইস্রায়েলীয়দের বন্দী করে অশূরে নিয়ে গেলেন। তাদের তিনি হলহে, গোষণের হাবোর নদীর ধারে এবং মাদীয়দের শহরগুলোতে বাস করতে দিলেন।
হোশেয়ের রাজত্বকালের নবম বছরে আসিরিয়ার রাজা শমরিয়া দখল করে নিয়েছিলেন এবং ইস্রায়েলীদের বন্দি করে আসিরিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন। হলহে, হাবোর নদীতীরের গোষণে এবং মাদীয়দের বিভিন্ন নগরে তিনি তাদের উপনিবেশ গড়ে দিলেন।
7 এই সব ঘটনা ঘটেছিল, কারণ যিনি মিশর থেকে, মিশরের রাজা ফরৌণের শাসন থেকে তাদের বের করে এনেছিলেন ইস্রায়েলীয়েরা তাদের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছিল। সেই লোকেরা অন্য দেব দেবতার পূজা করত
যিনি ইস্রায়েলীদের মিশর থেকে, ও মিশরের রাজা ফরৌণের অধীনতা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন, তাদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে যেহেতু তারা পাপ করল, তাই এসব ঘটনা ঘটেছিল। তারা অন্যান্য দেবতাদের পুজো করল
8 এবং যাদেরকে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের মতই চলাফেরা করত। এছাড়া ইস্রায়েলের রাজাদের রীতিনীতি অনুসারে তারা চলত।
এবং তাদের সামনে থেকে সদাপ্রভু যেসব জাতিকে দূর করে দিলেন, তারা তাদের লোকাচার তথা ইস্রায়েলের রাজাদের শুরু করা লোকাচার অনুসারে চলেছিল।
9 ইস্রায়েলীয়েরা গোপনে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে যা কিছু ঠিক নয় সেই সব খারাপ কাজ করত। তারা প্রহরীদের উঁচু ঘর থেকে বড় দেওয়ালে ঘেরা শহর পর্যন্ত সব জায়গায় নিজেদের জন্য পূজার উঁচু স্থান তৈরী করে নিয়েছিল।
ইস্রায়েলীরা গোপনে তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে এমন সব কাজ করল, যা আদৌ ঠিক নয়। নজরমিনার থেকে শুরু করে সুরক্ষিত দুর্গ পর্যন্ত সর্বত্র তারা তাদের সব নগরে প্রতিমাপুজোর উঁচু উঁচু স্থানগুলি তৈরি করল।
10 ১০ তারা প্রত্যেকটি উঁচু পাহাড়ের উপরে এবং প্রত্যেকটি সবুজ গাছের নীচে পূজার পাথর ও আশেরা মূর্ত্তি স্থাপন করেছিল।
প্রত্যেকটি উঁচু উঁচু পাহাড়ের উপর ও ডালপালা ছড়ানো গাছের তলায় তারা পবিত্র পাথর ও আশেরার খুঁটি খাড়া করল।
11 ১১ যে সব জাতিকে সদাপ্রভু তাদের সামনে থেকে বের করে দিয়েছিলেন তাদের মত তারাও প্রত্যেকটি উঁচু স্থানে ধূপ জ্বালাত। এছাড়া ইস্রায়েলীয়রা আরও খারাপ কাজ করে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করত।
প্রতিমাপুজোর উঁচু উঁচু স্থানগুলিতে তারা সেইসব পরজাতি লোকজনের মতো ধূপ জ্বালাতো, যাদের সদাপ্রভু তাদের সামনে থেকে দূর করে দিলেন। তারা এমন সব মন্দ কাজ করল, যা সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিল।
12 ১২ তারা মূর্ত্তি পূজা করত, যার বিষয়ে সদাপ্রভু তাদের বলেছিলেন “তোমরা এই কাজগুলি করবে না।”
তারা প্রতিমাপুজো করল, যদিও সদাপ্রভু বললেন, “তোমরা এরকম করবে না।”
13 ১৩ যদিও সদাপ্রভু তাঁর সমস্ত ভাববাদী ও দর্শকদের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েল ও যিহূদাকে সাবধান করে বলেছিলেন, “তোমরা তোমাদের খারাপ পথ থেকে ফেরো এবং সমস্ত আইন কানুন যা আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনের জন্য দিয়েছিলাম আর আমার দাসদের অর্থাৎ ভাববাদীদের মধ্য দিয়ে তোমাদের জানিয়েছিলাম তোমরা সেই অনুযায়ী আমার সব আদেশ ও নিয়ম পালন কর।”
সদাপ্রভু তাঁর সব ভাববাদী ও ভবিষ্যৎদ্রষ্টার মাধ্যমে ইস্রায়েল ও যিহূদাকে এই বলে সতর্ক করে দিলেন: “তোমরা তোমাদের কুপথ থেকে ফিরে এসো। আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনীয় সম্পূর্ণ যে বিধান দিয়েছিলাম ও আমার দাস সেই ভাববাদীদের মাধ্যমে তোমাদের কাছে যা সঁপে দিয়েছিলাম, সেগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমার সব আদেশ ও বিধিবিধান পালন করো।”
14 ১৪ কিন্তু তারা সেই কথা শোনেনি; তার পরিবর্তে তারা তাদের পূর্বপুরুষেরা যারা নিজেদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করত না, তাদের মতই তারা চলত।
কিন্তু তারা তা শোনেওনি এবং তাদের সেই পূর্বপুরুষদের মতো তারাও একগুঁয়েমি করল, যারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করতে ব্যর্থ হল।
15 ১৫ তারা তাঁর সব নিয়ম, তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য স্থাপন করা তাঁর ব্যবস্থা এবং তাদের কাছে তাঁর দেওয়া সমস্ত সাক্ষ্য মানতে অস্বীকার করেছিল। তারা অসার বস্তুর অনুগামী হয়ে নিজেরাও অসার অকেজো হয়ে পড়েছিল। আর সদাপ্রভু যাদের মত চলতে তাদেরকে নিষেধ করেছিলেন তারা তাদের চারদিকের সেই জাতিগুলোরই অনুসরণ করে চলত।
তাঁর সেই বিধিবিধান ও পবিত্র নিয়ম তারা প্রত্যাখ্যান করল, যা তিনি তাদের পূর্বপুরুষদের দিলেন এবং সেই ঐশ্বরিক বিধানও তারা অগ্রাহ্য করল, যা পালন করার জন্য তিনি তাদের সতর্ক করে দিলেন। তারা অযোগ্য সব প্রতিমার অনুগামী হল এবং নিজেরাও অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। তারা তাদের চারপাশে থাকা জাতিদের অনুকরণ করল, যদিও সদাপ্রভু তাদের আদেশ দিলেন, “তোমরা তাদের মতো কাজকর্ম কোরো না।”
16 ১৬ তারা নিজেদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আদেশ ত্যাগ করে নিজেদের জন্য ছাঁচ দিয়ে বানানো ধাতু দিয়ে দুইটি বাছুরের মূর্ত্তি তৈরী করে পূজা করত। একটা আশেরা মূর্তিও তৈরী করেছিল এবং তারা আকাশের সমস্ত বাহিনীরপূজো করত এবং বাল দেবতার পূজা করত।
তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সব আদেশ ত্যাগ করল এবং নিজেদের জন্য বাছুরের আকৃতিবিশিষ্ট দুটি প্রতিমার মূর্তি ও আশেরার একটি খুঁটি তৈরি করে নিয়েছিল। তারা আকাশের সব তারকাদলের কাছে মাথা নত করত, ও বায়ালদেবেরও পুজো করত।
17 ১৭ তারা নিজেদের ছেলে মেয়েদের আগুনে পুড়িয়ে হোমবলি হিসাবে উৎসর্গ করত। তারা মন্ত্র ও মায়াজালের ব্যবহার করত এবং সদাপ্রভুর চোখে যা কিছু মন্দ সেই সব কাজ করবার জন্য নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছিল এবং এইরূপে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করেছিল।
তারা তাদের ছেলেমেয়েদের আগুনে উৎসর্গ করত। তারা দৈববিচার প্রয়োগ করত এবং মঙ্গল বা অমঙ্গলসূচক লক্ষণ খুঁজে বেড়াত ও সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তুলে তাঁর দৃষ্টিতে কুকাজ করার জন্য নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছিল।
18 ১৮ সেই জন্য ইস্রায়েলের লোকদের উপর সদাপ্রভু ভীষণ রেগে গিয়ে তাঁর সামনে থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে দিলেন। সেখানে কেবল যিহূদা গোষ্ঠী ছাড়া আর কেউ ছিল না।
তাই সদাপ্রভু ইস্রায়েলের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন এবং তাঁর উপস্থিতি থেকে তাদের দূর করে দিলেন। একমাত্র যিহূদা বংশ অবশিষ্ট ছিল,
19 ১৯ এমনকি যিহূদা গোষ্ঠীও তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ পালন করলো না কিন্তু তার পরিবর্তে ইস্রায়েল যা করত সেই বিধি অনুযায়ী চলতে লাগল।
এবং এমনকি যিহূদাও তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ পালন করেননি। ইস্রায়েলের শুরু করা প্রথা তারাও অনুসরণ করল।
20 ২০ সে কারণে সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েললের বংশকে বাতিল করে দিলেন। তিনি তাদের কষ্ট দিলেন এবং লুটেরাদের হাতে তুলে দিলেন এবং শেষে নিজের সামনে থেকে তাদের দূরে সরিয়ে দিলেন।
তাই সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সব লোকজনকে প্রত্যাখ্যান করলেন; তিনি তাদের কষ্ট দিলেন এবং তাঁর উপস্থিতি থেকে তাদের ধাক্কা মেরে দূর করে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি তাদের লুঠেরাদের হাতে সঁপে দিলেন।
21 ২১ সদাপ্রভু দায়ূদের বংশ থেকে যখন ইস্রায়েলকে ছিঁড়ে আলাদা করলেন, তখন তারা নবাটের ছেলে যারবিয়ামকে তাদের রাজা করেছিল। যারবিয়াম ইস্রায়েলকে সদাপ্রভুর পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের দিয়ে মহাপাপ করিয়েছিলেন।
যখন তিনি ইস্রায়েলকে দাউদের কুল থেকে ছিঁড়ে আলাদা করলেন, তখন তারা নবাটের ছেলে যারবিয়ামকে তাদের রাজা করল। যারবিয়াম সদাপ্রভুর পথ থেকে সরে যেতে ইস্রায়েলকে প্রলুব্ধ করল এবং তাদের দিয়ে মহাপাপ করিয়েছিল।
22 ২২ ইস্রায়েলের লোকেরা যারবিয়ামের সমস্ত পাপের পথ অনুসরণ করেছিল। তারা সে সব থেকে ফিরে আসে নি।
ইস্রায়েলীরা নাছোড়বান্দা মনোভাব নিয়ে যারবিয়ামের করা সব পাপে লিপ্ত হল এবং সেগুলি থেকে ততদিন ফিরে আসেনি
23 ২৩ শেষে সদাপ্রভু তাঁর সমস্ত দাসদের অর্থাৎ ভাববাদীদের মধ্য দিয়ে যেমন বলেছিলেন সেই অনুসারে তাঁর সামনে থেকে ইস্রায়েলকে দূরে ফেলে দিলেন। সে কারণে ইস্রায়েলের লোকদের তাদের নিজেদের দেশ থেকে বন্দী করে অশূর দেশে নিয়ে যাওয়া হল এবং আজও তারা সেই জায়গায় আছে।
যতদিন না সদাপ্রভু তাঁর উপস্থিতি থেকে তাদের দূর করে দিলেন, যে বিষয়ে তিনি তাঁর সব দাস ভাববাদীদের মাধ্যমে তাদের আগেই সতর্ক করে দিলেন। অতএব ইস্রায়েলী প্রজারা তাদের স্বদেশ থেকে আসিরিয়ায় নির্বাসিত হল, এবং আজও পর্যন্ত তারা সেখানেই আছে।
24 ২৪ অশূরের রাজা ইস্রায়েলের লোকদের বদলে বাবিল, কূথা, অব্বা, হমাৎ ও সফর্বয়িম থেকে লোক নিয়ে এসে শমরিয়ার নগরগুলিতে বসিয়ে দিলেন। তারা শমরিয়া অধিকার করে সেই সব জায়গায় বসবাস করতে লাগল।
আসিরিয়ার রাজা ব্যাবিলন, কূথা, অব্বা, হমাৎ ও সফর্বয়িম থেকে লোকজন এনে ইস্রায়েলীদের পরিবর্তে শমরিয়ার বিভিন্ন নগরে তাদের বসিয়ে দিলেন। তারা শমরিয়া দখল করে সেখানকার নগরগুলিতে বসবাস করতে শুরু করল।
25 ২৫ সেখানে তারা বসবাস করবার প্রথম দিকের দিনের তারা সদাপ্রভুর সম্মান করত না, তাই সদাপ্রভু তাদের মধ্যে সিংহ পাঠিয়ে দিলেন, যেগুলি তাদের কিছু লোককে মেরে ফেলল।
প্রথম প্রথম সেখানে থাকার সময় তারা সদাপ্রভুর আরাধনা করেননি; তাই তিনি তাদের মধ্যে কয়েকটি সিংহ পাঠিয়ে দিলেন এবং সিংহগুলি লোকদের মধ্যে কয়েকজনকে মেরে ফেলেছিল।
26 ২৬ তখন তারা অশূরের রাজার কাছে গিয়ে এইরকম বলল, “যে সমস্ত জাতিদের আপনি বন্দী করে শমরিয়ায় সব জায়গায় বাস করবার জন্য বসিয়ে দিয়েছেন, তারা সেই দেশের ঈশ্বরের নিয়ম জানে না সেই দেশের ঈশ্বরকে কিভাবে সন্তুষ্ট করতে হয়। সে কারণে ঈশ্বর তাদের মধ্যে সিংহ পাঠিয়ে দিয়েছেন, আর দেখো, সিংহগুলি তাদের মেরে ফেলছে কারণ তারা সেই দেশের ঈশ্বরের বিধি জানে না।”
আসিরিয়ার রাজাকে সেই খবর দেওয়া হল: “যে লোকজনকে আপনি শমরিয়ায় পাঠিয়ে সেখানে তাদের পুনর্বাসন দিয়েছেন, তারা জানে না, সেই দেশের দেবতা ঠিক কী চান। তিনি তাদের মধ্যে কয়েকটি সিংহ পাঠিয়েছেন, যারা লোকজনকে মেরে ফেলছে, কারণ লোকেরা তো জানেই না, তিনি ঠিক কী চান।”
27 ২৭ তখন অশূরের রাজা এই বলে আদেশ দিলেন, “যে সব যাজকদের আপনারা এনেছিলেন তাদের মধ্য থেকে এক জনকে আপনারা সেখানে পাঠিয়ে দিন যাতে সে সেখানে গিয়ে বাস করে এবং সেই দেশের ঈশ্বরের নিয়ম কানুন সম্পর্কে তাদের শিক্ষা দেয়।”
তখন আসিরিয়ার রাজা এই আদেশ দিলেন: “তোমরা শমরিয়া থেকে যেসব যাজককে বন্দি করে নিয়ে এসেছ, তাদের মধ্যে একজনকে সেখানে ফিরে যেতে দাও। সে সেখানে থেকে লোকজনকে শিক্ষা দেবে, সেই দেশের দেবতা ঠিক কী চান।”
28 ২৮ সুতরাং শমরিয়া থেকে নিয়ে যাওয়া যাজকদের মধ্য থেকে এক জনকে নিয়ে বৈথেলে গেলেন এবং সেখানে বাস করতে লাগলেন এবং তিনিই তাদের শিক্ষা দিলেন কিভাবে সদাপ্রভুর উপাসনা করতে হয়।
অতএব শমরিয়া থেকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া যাজকদের মধ্যে একজন বেথেলে বসবাস করার জন্য ফিরে এলেন এবং তিনি তাদের শিক্ষা দিলেন, কীভাবে সদাপ্রভুর আরাধনা করতে হয়।
29 ২৯ তবুও প্রত্যেক জাতির লোকেরা নিজের নিজের দেবতা তৈরী করে নিল এবং শহরে যেখানে তারা বাস করত সেখানে শমরিয়েরা উঁচু স্থানগুলিতে যে সমস্ত ঘর তৈরী করেছিল, তার মধ্যে প্রত্যেক জাতি তাদের নগরে তাদের দেবতাকে স্থাপন করলেন।
তা সত্ত্বেও, বিভিন্ন নগরে উপনিবেশ গড়ে বসবাস করতে থাকা প্রত্যেকটি জাতিভিত্তিক দল সেই নগরগুলিতে নিজের নিজের দেবতা গড়ে নিয়েছিল, এবং শমরিয়ার লোকেরা আগে উঁচু উঁচু স্থানে যেসব প্রতিমাপুজোর পীঠস্থান তৈরি করল, সেখানেই তাদের দেবতাদের প্রতিষ্ঠিত করল।
30 ৩০ এই ভাবে বাবিলের লোকেরা তৈরী করল সুক্কোৎ-বনোৎ, কূথের লোকেরা নের্গল তৈরী করলেন, হমাতের লোকেরা অশীমার মূর্ত্তি তৈরী করলেন,
ব্যাবিলন থেকে আসা লোকেরা সুক্কোৎ-বনোৎ তৈরি করল, কূথা থেকে আসা লোকেরা নের্গল, এবং হমাৎ থেকে আসা লোকেরা অশীমা;
31 ৩১ আর অব্বীয়েরা তৈরী করল নিভস ও তর্ত্তক আর সফর্বীয়দের দেবতা অদ্রম্মেলক ও অনম্মেলকের উদ্দেশ্যে তাদের নিজেদের ছেলে মেয়েদের আগুনে পুড়িয়ে হোম উৎসর্গ করল।
অব্বীয়রা নিভস ও তর্ত্তক তৈরি করল, এবং সফর্বীয়রা তাদের ছেলেমেয়েদের বলিরূপে সফর্বয়িমের দেবতা অদ্রম্মেলক ও অনম্মেলকের কাছে আগুনে পোড়াতো।
32 ৩২ তারা সদাপ্রভুকে ভয় করত এবং উঁচু স্থানগুলিতে যাজকদের কাজ করবার জন্য নিজেদের মধ্য থেকে লোক নিযুক্ত করত এবং তারাই তাদের জন্য উচ্চ স্থানের গৃহে বলি উত্সর্গ করত।
তারা সদাপ্রভুর আরাধনা করত, কিন্তু এছাড়াও তারা নিজেদের সব ধরনের লোকজনকে উঁচু উঁচু স্থানগুলিতে দেবতার পীঠস্থানে পূজারির কাজে নিযুক্ত করল।
33 ৩৩ তারা সদাপ্রভুকে ভয় করত এবং সেই সঙ্গে যে সব দেশ থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল সেই সব দেশের নিয়ম অনুসারে তারা তাদের দেবতাদেরও পূজা করত।
তারা সদাপ্রভুর আরাধনা করত, কিন্তু একইসাথে যেসব দেশ থেকে তাদের আনা হল, সেইসব দেশের লোকাচার অনুসারে তারা নিজেদের দেবতাদেরও সেবা করত।
34 ৩৪ আজ পর্যন্ত তারা সেই পুরানো নিয়ম মেনে চলছে। তারা আসলে সদাপ্রভুর উপাসনা করে না, এমন কি সদাপ্রভু যে যাকোবের নাম ইস্রায়েল রেখেছিলেন সেই যাকোবের লোকদের কাছে সদাপ্রভুর দেওয়া ব্যবস্থা, আদেশ অনুযায়ী চলে না।
আজও পর্যন্ত তারা তাদের আগেকার প্রথাই পালন করে আসছে। তারা না তো ঠিকঠাক সদাপ্রভুর আরাধনা করে, না তারা সদাপ্রভুর সেইসব বিধি ও নিয়মকানুন, বিধান ও আদেশের প্রতি অনুরক্ত থাকে, যেগুলি তিনি সেই যাকোবের বংশধরদের দিয়েছিলেন, যাঁর নাম তিনি ইস্রায়েল রেখেছিলেন।
35 ৩৫ এবং তাদের সঙ্গে ব্যবস্থা স্থাপন করবার দিন সদাপ্রভু এই আদেশ দিয়েছিলেন, “তোমরা অন্য কোন দেব দেবতার ভয় করবে না কিম্বা তাদের কাছে মাথা নীচু করবে না এবং তাদের সেবা করবে না বা তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলিদান করবে না।
ইস্রায়েলীদের সাথে সদাপ্রভু পবিত্র এক নিয়ম স্থাপন করার সময় তাদের আদেশ দিলেন: “অন্য কোনও দেবতার আরাধনা করবে না অথবা তাদের কাছে মাথা নত করবে না, তাদের সেবা করবে না বা তাদের কাছে বলি উৎসর্গ করবে না।
36 ৩৬ কিন্তু সদাপ্রভু, যিনি মহাশক্তিতে মিশর থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন তোমরা সেই একজনকেই সম্মান করবে, তাঁর কাছেই মাথা নীচু করবে ও তাঁর উদ্দেশ্যেই সব বলিদান দেবে।
কিন্তু সেই সদাপ্রভুরই আরাধনা তোমাদের করতে হবে, যিনি মহাশক্তি দেখিয়ে ও প্রসারিত হাত বাড়িয়ে দিয়ে তোমাদের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন। তাঁরই কাছে তোমরা মাথা নত করবে ও তাঁরই কাছে বলি উৎসর্গ করবে।
37 ৩৭ তিনি যে সব বিধি, নির্দেশ, ব্যবস্থা ও আদেশ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছিলেন তা যত্নের সঙ্গে পালন করবে। তোমরা অন্য দেব দেবতার ভয় করবে না।
তিনি তোমাদের জন্য যেসব বিধি ও নিয়ম, তথা বিধান ও আদেশ লিখে রেখে গিয়েছেন, সেগুলি পালন করার জন্য তোমাদের সবসময় সতর্ক হয়ে থাকতেই হবে। অন্যান্য দেবদেবীর আরাধনা কোরো না।
38 ৩৮ এবং তোমাদের সঙ্গে যে ব্যবস্থা আমি তৈরী করেছি তোমরা তা ভুলে যাবে না; না অন্য কোন দেব দেবতাকেভয় করবে না।
আমি তোমাদের সাথে যে পবিত্র নিয়ম স্থাপন করেছি, তা তোমরা ভুলো না, এবং অন্যান্য দেবদেবীর আরাধনা কোরো না।
39 ৩৯ কিন্তু সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বরকেই সম্মান করবে। তিনিই তোমাদের সব শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করবেন।”
বরং, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আরাধনা কোরো; তিনিই তোমাদের সব শত্রুর হাত থেকে তোমাদের মুক্ত করবেন।”
40 ৪০ তবুও তারা সেই কথা শুনল না, কারণ তারা আগে যা করেছিল সেই মতই চলতে লাগল।
তারা অবশ্য তাঁর কথা শোনেনি, কিন্তু তাদের পুরোনো প্রথাই পালন করে গেল।
41 ৪১ এই ভাবে সেই জাতিরা সদাপ্রভুর ভয়ও করত আবার তাদের খোদাই করা মূর্তির পূজাও করত। আজও তাদের ছেলেমেয়ে ও নাতিপুতিরা তাদের পূর্বপুরুষরা যা করেছিল সেই মতই করছে।
এমনকি এইসব লোকজন সদাপ্রভুর আরাধনা করছিল, আবার তাদের প্রতিমাগুলিরও পুজো করছিল। আজও পর্যন্ত তাদের ছেলেমেয়ে ও নাতিপুতিরা তাদের পূর্বপুরুষদের মতোই এরকম করে চলেছে।

< দ্বিতীয় রাজাবলি 17 >