< শমূয়েলের প্রথম বই 24 >
1 ১ পরে শৌল পলেষ্টীয়দের আর তাড়া না করে ফিরে এলে লোকে তাঁকে এই খবর দিল, “দেখুন, দায়ূদ ঐন-গদীর উপত্যকায় আছে৷”
ফিলিস্তিনীদের পশ্চাদ্ধাবন করে ফিরে আসার পর শৌলকে বলা হল, “দাউদ ঐন-গদীর মরুভূমিতে আছেন।”
2 ২ তাতে শৌল সমস্ত ইস্রায়েল থেকে নির্বাচিত তিন হাজার লোক নিয়ে বন্য ছাগলের শৈলের উপরে দায়ূদের ও তাঁর লোকদের খোঁজে গেলেন৷
অতএব শৌল সমস্ত ইস্রায়েল থেকে 3,000 দক্ষ যুবক সংগ্রহ করে দাউদ ও তাঁর লোকজনের খোঁজে জংলী ছাগলদের পাহাড়ের চুড়োয় উঠে গেলেন।
3 ৩ পথের মধ্যে তিনি মেষবাথানে উপস্থিত হলেন; সেখানে এক গুহা ছিল; আর শৌল পা ঢাকবার জন্য তার মধ্যে প্রবেশ করলেন; কিন্তু দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা সেই গুহার একদম ভেতরে বসেছিলেন৷
পথিমধ্যে তিনি মেষের খোঁয়াড়ে পৌঁছে গেলেন; সেখানে একটি গুহা ছিল, ও শৌল মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য সেটির মধ্যে প্রবেশ করলেন। দাউদ ও তাঁর লোকজন গুহার একদম ভিতরের দিকে বসেছিলেন।
4 ৪ তখন দায়ূদের লোকেরা তাঁকে বলল, “দেখুন, এ সেই দিন, যে দিনের র কথা সদাপ্রভু আপনাকে বলেছেন, দেখ, আমিই তোমার শত্রুকে তোমার হাতে সমর্পণ করব, তখন তুমি তার প্রতি যা ভালো বুঝবে, তাই করবে৷” তাতে দায়ূদ উঠে চুপিচুপি শৌলের কাপড়ের সামনের অংশ কেটে নিলেন৷
লোকেরা বলল, “সদাপ্রভু এই দিনটির বিষয়েই আপনাকে বললেন, ‘আমি তোমার শত্রুকে তোমার হাতে তুলে দেব, যেন তুমি তার প্রতি যা ইচ্ছা হয় তাই করতে পারো।’” তখন দাউদ সবার অলক্ষ্যে সেখানে ঢুকে শৌলের আলখাল্লার এক কোনা কেটে নিয়ে এলেন।
5 ৫ তারপরে, শৌলের কাপড়ের অংশ কাটাতে দায়ূদের হৃদয় ধুকধুক করতে লাগল;
পরে, শৌলের পোশাকের এক কোনা কেটে নেওয়াতে দাউদ বিবেকের দংশনে বিদ্ধ হচ্ছিলেন।
6 ৬ আর তিনি নিজের লোকদেরকে বললেন, “আমার প্রভুর প্রতি, সদাপ্রভুর অভিষিক্তের প্রতি এমন কাজ করতে, তাঁর বিরুদ্ধে আমার হাত তুলতে সদাপ্রভু আমাকে না দিন; কারণ তিনি সদাপ্রভুর অভিষিক্ত৷”
তিনি তাঁর লোকজনকে বললেন, “সদাপ্রভু না করুন! আমি যেন আমার প্রভুর—সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরকম কাজ না করি, বা তাঁর উপর হাত না তুলি; কারণ তিনি তো সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তি।”
7 ৭ এইরকম কথা বলে দায়ূদ নিজের লোকদেরকে শাসন করলেন, শৌলের বিরুদ্ধে যেতে দিলেন না৷ পরে শৌল উঠে গুহা থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের পথে চললেন৷
একথা বলে দাউদ তাঁর লোকজনকে জোরালো ভাষায় ধমক দিলেন ও শৌলকে আক্রমণ করার সুযোগই তাদের দেননি। শৌলও গুহা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
8 ৮ তারপরে দায়ূদও উঠে গুহা থেকে বেরিয়ে এলেন এবং শৌলকে পিছন থেকে ডেকে বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ,” আর শৌল পিছনের দিকে তাকালে দায়ূদ ভূমিতে মাথা নিচু করে প্রণাম করলেন৷
তখন দাউদ গুহা থেকে বেরিয়ে এসে শৌলকে ডেকে বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ!” শৌল যখন পিছনে ফিরে তাকিয়েছিলেন, দাউদ তখন মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁকে প্রণাম জানিয়েছিলেন।
9 ৯ আর দায়ূদ শৌলকে বললেন, “মানুষের এমন কথা আপনি কেন শোনেন যে, ‘দেখুন, দায়ূদ আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে?’
তিনি শৌলকে বললেন, “লোকে যখন আপনাকে বলে, ‘দাউদ আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তখন আপনি তাদের কথা শোনেন কেন’?
10 ১০ দেখুন, আপনি আজ নিজের চোখে দেখছেন, আজ এই গুহার মধ্যে সদাপ্রভু আপনাকে আমার হাতে সমর্পণ করেছিলেন এবং কেউ আপনাকে হত্যা করবার পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু আপনার উপরে মমতা হল, আমি বললাম, ‘আমার প্রভুর বিরুদ্ধে হাত তুলব না, কারণ তিনি সদাপ্রভুর অভিষিক্ত৷’
আজ তো আপনি নিজের চোখেই দেখলেন কীভাবে সদাপ্রভু সেই গুহার মধ্যে আপনাকে আমার হাতে সমর্পণ করে দিয়েছিলেন। কয়েকজন তো আমাকে পীড়াপীড়িও করল যেন আমি আপনাকে হত্যা করি, কিন্তু আমি আপনাকে অব্যাহতি দিয়েছিলাম; আমি বললাম, ‘আমি আমার প্রভুর উপর হাত তুলব না, কারণ তিনি সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তি।’
11 ১১ আর হে আমার পিতা, দেখুন; হ্যাঁ, আমার হাতে আপনার কাপড়ের এই অংশ দেখুন; কারণ আমি আপনার কাপড়ের সামনের অংশ কেটে নিয়েছি, তবুও আপনাকে হত্যা করি নি, এতে আপনি বিচার করে দেখবেন, আমি হিংসায় কি অধর্মে হাত তুলি না এবং আপনার বিরুদ্ধে পাপ করি নি; তবুও আপনি আমার প্রাণ কেড়ে নেবার জন্য [শিকার] মৃগয়া করছেন৷
দেখুন, হে আমার বাবা, আমার হাতে আপনার পোশাকের এই কাটা টুকরোটি দেখুন! আমি আপনার পোশাকের কোনাটি কেটে নিয়েছিলাম কিন্তু আপনাকে হত্যা করিনি। দেখুন আমার হাতে এমন কিছু নেই যা দিয়ে বোঝা যায় আমি অপরাধ বা বিদ্রোহের দোষে দোষী। আমি আপনার বিরুদ্ধে কোনও অন্যায় করিনি, কিন্তু আপনি আমার প্রাণনাশ করার জন্য আমার পিছু পিছু তাড়া করে বেড়াচ্ছেন।
12 ১২ সদাপ্রভু আমার ও আপনার মধ্যে বিচার করবেন, আপনার করা অন্যায় থেকে আমাকে উদ্ধার করবেন, কিন্তু আমার হাত আপনার বিরুদ্ধে উঠবে না৷
সদাপ্রভুই আপনার ও আমার বিচার করুন। সদাপ্রভুই আমার প্রতি করা আপনার অন্যায়ের প্রতিফল দিন, কিন্তু আমার হাত আপনাকে স্পর্শ করবে না।
13 ১৩ প্রাচীনদের প্রবাদে বলে, ‘দুষ্টদের থেকেই দুষ্টতা জন্মায়,’ কিন্তু আমার হাত আপনার বিরুদ্ধ হবে না৷
প্রাচীন প্রবাদবাক্যে যেমন বলা হয়েছে, ‘পাষণ্ডরাই অনিষ্ট সাধন করে,’ তাই আমার হাত আপনাকে স্পর্শ করবে না।
14 ১৪ ইস্রায়েলের রাজা কার পিছনে বেরিয়ে এসেছেন? আপনি কার পিছনে পিছনে তাড়া করছেন? একটা মৃত কুকুরের পিছনে, একটা মাছির পিছনে৷
“ইস্রায়েলের রাজা কার বিরুদ্ধে উঠে এসেছেন? আপনি কার পশ্চাদ্ধাবন করছেন? একটি মৃত কুকুরের? একটি মাছির?
15 ১৫ কিন্তু সদাপ্রভু বিচারকর্ত্তা হন, তিনি আমার ও আপনার মধ্যে বিচার করুন; আর তিনি দৃষ্টিপাত করে আমার বিবাদ শেষ করুন এবং আপনার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন৷”
সদাপ্রভুই যেন আমাদের বিচার করে আমাদের মধ্যে একজনের স্বপক্ষে সিদ্ধান্ত নেন। তিনিই যেন আমার উদ্দেশ্য বিবেচনা করে তা অনুমোদন করলেন; আপনার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করে তিনি যেন আমার পক্ষসমর্থন করলেন।”
16 ১৬ দায়ূদ শৌলের কাছে এই সব কথা শেষ করলে শৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আমার সন্তান দায়ূদ, এ কি তোমার স্বর?” আর শৌল খুব জোরে কাঁদলেন৷
দাউদের কথা বলা শেষ হওয়ার পর শৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “বাছা দাউদ, এ কি তোমার কণ্ঠস্বর?” একথা বলে তিনি সজোরে কেঁদে ফেলেছিলেন।
17 ১৭ পরে তিনি দায়ূদকে বললেন, “আমার থেকে তুমি ধার্মিক, কারণ তুমি আমার উপকার করেছ, কিন্তু আমি তোমার অপকার করেছি৷
“তুমি আমার তুলনায় বেশি ধার্মিক,” তিনি বললেন। “তুমি আমার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করলে, কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি।
18 ১৮ তুমি আমার প্রতি কেমন ভালো ব্যবহার করে আসছ, তা আজ দেখালে; সদাপ্রভু আমাকে তোমার হাতে সমর্পণ করলেও তুমি আমাকে হত্যা করনি৷
এইমাত্র তুমি আমাকে বলেছ, তুমি আমার প্রতি কত ভালো ব্যবহার করেছ; সদাপ্রভু আমাকে তোমার হাতে সমর্পণ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তুমি আমাকে হত্যা করোনি।
19 ১৯ মানুষ নিজের শত্রুকে পেলে কি তাকে ভালোর পথে ছেড়ে দেয়? আজ তুমি আমার প্রতি যা করলে, তার প্রতিশোধে সদাপ্রভু তোমার মঙ্গল করুন৷
যখন কেউ তার শত্রুকে হাতের নাগালে পায়, সে কি তাকে অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দেয়? আজ আমার প্রতি তুমি যে ব্যবহার করেছ, সেজন্য সদাপ্রভু তোমাকে যেন যথাযথভাবে পুরস্কৃত করেন।
20 ২০ এখন দেখ, আমি জানি, তুমি অবশ্যই রাজা হবে, আর ইস্রায়েলের রাজ্য তোমার হাতে স্থির থাকবে৷
আমি জানি তুমি অবশ্যই রাজা হবে ও ইস্রায়েলের রাজত্ব তোমার হাতেই সুস্থির হবে।
21 ২১ অতএব এখন সদাপ্রভুর নামে আমার কাছে দিব্যি কর যে, তুমি আমার পরে আমার বংশ বিনাশ করবে না ও আমার বাবার বংশ থেকে আমার নাম লোপ করবে না৷”
এখন সদাপ্রভুর নামে আমার কাছে শপথ করো যে তুমি আমার বংশধরদের হত্যা করবে না বা আমার বাবার বংশ থেকে আমার নাম মুছে ফেলবে না।”
22 ২২ তখন দায়ূদ শৌলের কাছে দিব্যি করলেন৷ পরে শৌল বাড়ি চলে গেলেন, কিন্তু দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা সুরক্ষিত জায়গায় উঠে গেলেন৷
অতএব দাউদ শৌলের কাছে শপথ করলেন। পরে শৌল ঘরে ফিরে গেলেন, কিন্তু দাউদ ও তাঁর লোকজন ঘাঁটিতে চলে গেলেন।