প্রথম রাজাবলি 5
1 ১ সোরের রাজা হীরম যখন শুনলেন যে, শলোমনকে তাঁর বাবার জায়গায় রাজপদে অভিষেক করা হয়েছে তখন তাঁর দাসদের তিনি শলোমনের কাছে পাঠালেন, কারণ দায়ূদের সঙ্গে হীরমের সব দিন ই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।
সোরের রাজা হীরম যখন শুনেছিলেন যে শলোমন তাঁর বাবার স্থানে রাজপদে অভিষিক্ত হয়েছেন, তখন শলোমনের কাছে তিনি তাঁর প্রতিনিধিদের পাঠালেন, কারণ দাউদের সঙ্গে সবসময় তাঁর এক সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
শলোমন হীরমের কাছে এই খবর দিয়ে পাঠালেন:
3 ৩ “আমার বাবা দায়ূদের বিরুদ্ধে চারদিক থেকে যুদ্ধ হয়েছিল, তাই যতদিন সদাপ্রভু তাঁর শত্রুদের তাঁর পায়ের তলায় না আনলেন ততদিন তিনি তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে কোনো উপাসনা ঘর তৈরী করতে পারেন নি। আপনি তো এই সব কথা জানেন।
“আপনি জানেন, যেহেতু সবদিক থেকেই আমার বাবা দাউদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো হল, তাই যতদিন না সদাপ্রভু তাঁর শত্রুদের তাঁর পদতলে এনেছিলেন, তিনি তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এক মন্দির নির্মাণ করতে পারেননি।
4 ৪ কিন্তু এখন আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু সব দিক থেকেই আমাকে বিশ্রাম দিয়েছেন। এখন আমার কোনো শত্রু নেই এবং কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি।
কিন্তু এখন আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু সবদিক থেকেই আমাকে বিশ্রাম দিয়েছেন, এবং এখন আর কোনও প্রতিপক্ষ বা দুর্বিপাক নেই।
5 ৫ সেইজন্য আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে একটা উপাসনা ঘর তৈরী করতে চাই। যেমন সদাপ্রভু আমার বাবা দায়ূদকে বলেছিলেন, ‘তোমার যে ছেলেকে আমি সিংহাসনে তোমার জায়গায় বসাব সেই আমার উদ্দেশ্যে উপাসনা ঘর তৈরী করবে।’
তাই আমি সংকল্প করেছি, সদাপ্রভু আমার বাবা দাউদকে যা বললেন, সেই অনুসারেই আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে একটি মন্দির নির্মাণ করব। কারণ সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, ‘যাকে আমি তোমার স্থানে সিংহাসনে বসাব, তোমার সেই ছেলেই আমার নামের উদ্দেশে মন্দির নির্মাণ করবে।’
6 ৬ কাজেই আপনি হুকুম করুন যাতে আমার জন্য লিবানোন দেশের এরস গাছ কাটা হয়। অবশ্য আমার লোকেরা আপনার লোকদের সঙ্গে থাকবে এবং আপনি যে মজুরী ঠিক করে দেবেন আমি সেই মজুরিই আপনার লোকদের দেব। আপনার তো জানা আছে যে, গাছ কাটবার জন্য সীদোনীয়দের মত পাকা লোক আমাদের মধ্যে কেউ নেই।”
“তাই আদেশ দিন, যেন আমার জন্য লেবাননের দেবদারু গাছগুলি কাটা হয়। আমার লোকজন আপনার লোকজনের সঙ্গে থেকে কাজ করবে, এবং আপনার ঠিক করে দেওয়া বেতনই আমি আপনার লোকজনকে দেব। আপনি তো জানেনই যে সীদোনীয়দের মতো আমাদের কাছে কাঠ কাটার কাজে এত নিপুণ কোনও লোক নেই।”
7 ৭ শলোমনের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে হীরম খুব খুশী হয়ে বললেন, “আজ সদাপ্রভুর গৌরব হোক, কারণ এই মহান জাতির উপরে রাজত্ব করবার জন্য দায়ূদকে তিনি এমন একটি জ্ঞানী ছেলে দান করেছেন।”
শলোমনের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে হীরম খুব খুশি হয়ে বললেন, “আজ সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক, কারণ তিনি দাউদকে এই বিশাল দেশটি শাসন করার জন্য বিচক্ষণ এক ছেলে দিয়েছেন।”
8 ৮ হীরম শলোমনকে এই খবর পাঠালেন, “আপনার পাঠানো খবর আমি পেয়েছি। এরস ও দেবদারু কাঠের ব্যাপারে আপনার সব ইচ্ছাই আমি পূর্ণ করব।
তাই হীরম শলোমনের কাছে এই খবর পাঠালেন: “আপনি আমায় যে খবর পাঠিয়েছেন, তা আমি পেয়েছি এবং দেবদারু ও চিরহরিৎ গাছের কাঠ জোগানোর সম্বন্ধে আপনি আমার কাছে যা যা চেয়েছেন, আমি সেসবকিছু করব।
9 ৯ আমার লোকেরা সেগুলো লিবানোন থেকে নামিয়ে সমুদ্রে আনবে। তারপর আমি সেগুলো দিয়ে ভেলা তৈরী করে সমুদ্রে ভাসিয়ে আপনার নির্দিষ্ট করা জায়গায় পাঠিয়ে দেব। সেখানে তারা সেগুলো খুলে ফেলবে আর তখন আপনি সেগুলো নিয়ে যেতে পারবেন। আমার রাজবাড়ীর লোকদের জন্য খাবার দেওয়ার মাধ্যমে আপনি আমার ইচ্ছা পূরণ করবেন।”
আমার লোকজন লেবানন থেকে সেগুলি ভূমধ্যসাগরে টেনে নামাবে, এবং আমি সমুদ্রের জলে সেগুলি ভেলার মতো করে ভাসিয়ে ঠিক সেখানেই পৌঁছে দেব, আপনি যে স্থানটি নির্দিষ্ট করে দেবেন। সেখানে আমি সেগুলির বাঁধন খুলিয়ে দেব এবং আপনাকেও আমার রাজপরিবারের জন্য খাবারদাবারের জোগান দেওয়ার মাধ্যমে আমার ইচ্ছা পূরণ করতে হবে।”
এইভাবে হীরম শলোমনের চাহিদানুসারে তাঁকে দেবদারু ও চিরহরিৎ গাছের কাঠ সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন,
11 ১১ আর শলোমন হীরমকে তাঁর রাজবাড়ীর লোকদের খাবারের জন্য তিন হাজার ছশো টন গম ও চার হাজার আটশো লিটার খাঁটি তেল দিলেন। শলোমন বছরের পর বছর তা দিতে থাকলেন।
এবং শলোমন হীরমের পরিবারের জন্য খাদ্যসম্ভাররূপে 20,000 বাত মাড়াই করা জলপাই তেলের পাশাপাশি 20,000 কোর গম তাঁকে দিলেন। বছরের পর বছর শলোমন হীরমের জন্য এমনটি করে গেলেন।
12 ১২ সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে শলোমনকে জ্ঞান দিলেন। হীরম ও শলোমনের মধ্যে শান্তির সম্বন্ধ ছিল এবং তাঁরা দুজনে একটা চুক্তি করলেন।
সদাপ্রভু তাঁর নিজের করা প্রতিজ্ঞানুসারে শলোমনকে সুবিবেচনা দিলেন। হীরম ও শলোমনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, এবং তারা দুজন এক চুক্তি স্বাক্ষরিত করলেন।
রাজা শলোমন সমস্ত ইস্রায়েল থেকে ত্রিশ হাজার লোককে বাধ্যতামূলকভাবে কাজে লাগালেন।
14 ১৪ প্রতি মাসে পালা পালা করে তাদের মধ্য থেকে তিনি দশ হাজার লোককে লেবাননে পাঠাতেন। তারা একমাস লেবাননে থাকত আর দু মাস থাকত নিজের বাড়িতে। তাদের এই কাজের দেখাশোনার ভার ছিল অদোনীরামের উপর।
প্রতি মাসে পালা করে দশ-দশ হাজার লোককে তিনি লেবাননে পাঠাতেন, ফলস্বরূপ এক মাস তারা লেবাননে ও দুই মাস ঘরে কাটাত। অদোনীরাম বেগার শ্রমিকদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন।
শলোমনের কাছে সত্তর হাজার ভারবহনকারী ও পাহাড়ে আশি হাজার পাথর ভাঙার লোক ছিল,
এছাড়াও শলোমনের 33,000 সর্দার-শ্রমিকও ছিল, যারা প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করত ও শ্রমিকদের পরিচালনা করত।
রাজার আদেশে তারা পাথর খাদান থেকে উৎকৃষ্ট মানের বড়ো বড়ো পাথরের চাঙড় কেটে তুলত, যা দিয়ে মন্দিরের জন্য আকর্ষণীয় ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি হতে যাচ্ছিল।
18 ১৮ শলোমন ও হীরমের মিস্ত্রিরা ও গিব্লীয়েরা সেই পাথরগুলো সুন্দর করে কেটে উপাসনা ঘরটি তৈরী করবার জন্য কাঠ ও পাথর তৈরী করল।
শলোমনের ও হীরমের কারিগররা এবং গিব্লীয় শ্রমিকেরা মন্দির নির্মাণের জন্য কাঠ ও পাথর কেটে সেগুলি তৈরি করে রাখত।
