< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 20 >

1 বিখ্রির ছেলে বিন্যামীনীয় শেব নামক এক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী লোক সেখানে উপস্থিত ছিল। সে শিঙা বাজিয়ে চিৎকার করে বলল, “দাউদে আমাদের কোনও ভাগ নেই, যিশয়ের ছেলেতে কোনও অংশ নেই! হে ইস্রায়েল, প্রত্যেকে যে যার তাঁবুতে ফিরে যাও!”
ঐ দিনের সেখানে বিন্যামীনীয় বিখ্রির ছেলে শেবঃ নামে একজন নিষ্ঠুর লোক ছিল; সে তূরী বাজিয়ে বলল, “দায়ূদের উপর আমাদের কোন ভাগ নেই, যিশয়ের ছেলের উপরে আমাদের কোন অধিকার নেই; হে ইস্রায়েল তোমরা সবাই নিজেদের তাঁবুতে যাও৷”
2 তাই ইস্রায়েলের সব লোকজন দাউদকে ছেড়ে বিখ্রির ছেলে শেবের অনুগামী হল। কিন্তু যিহূদার লোকজন সেই জর্ডন থেকে জেরুশালেম পর্যন্ত তাদের রাজার সাথেই ছিল।
তাতে সমস্ত ইস্রায়েল দায়ূদের পিছনে গিয়ে বিখ্রির ছেলে শেবের পিছনে পিছনে গেল; কিন্তু যর্দ্দন থেকে যিরূশালেম পর্যন্ত যিহূদার লোকেরা নিজেদের রাজাতে আসক্ত থাকল৷
3 দাউদ যখন জেরুশালেমে তাঁর প্রাসাদে ফিরে এলেন, তখন তিনি যাদের সেই প্রাসাদ দেখাশোনা করার জন্য ছেড়ে গেলেন, সেই দশজন উপপত্নীকে এনে এমন একটি বাসায় রেখেছিলেন, যেখানে পাহারা বসানো ছিল। তিনি তাদের সব প্রয়োজন মিটিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো যৌন সম্পর্ক রাখেননি। বিধবার মতো, আমৃত্যু তাদের বন্দিদশায় দিন কাটাতে হল।
পরে দায়ূদ যিরূশালেমে নিজের ঘরে আসলেন৷ আর রাজা বাড়ি রক্ষার জন্য তাঁর যে দশটি উপপত্নীকে রেখে গিয়েছিলেন, তাদেরকে নিয়ে কারাগারে আটকে রাখলেন এবং রক্ষা করলেন, কিন্তু তাদের কাছে গেলেন না; অতএব তারা মারা যাওয়ার দিন পর্যন্ত বিধবার মত আটকে থাকলো৷
4 পরে রাজামশাই অমাসাকে বললেন, “যিহূদার লোকজনকে তিনদিনের মধ্যে আমার কাছে আসতে বলো, ও তুমি নিজে এখানে থাকো।”
পরে রাজা অমাসাকে বললেন, “তুমি তিন দিনের র মধ্যে যিহূদার লোকদেরকে ডেকে আমার জন্য জড়ো কর, আর তুমিও সেখানে উপস্থিত হও৷”
5 কিন্তু অমাসা যখন যিহূদার লোকজনকে ডাকতে গেলেন, তখন তিনি তাঁর জন্য রাজার নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময়ের থেকে কিছু বেশি সময় নিয়ে ফেলেছিলেন।
তখন অমাসা যিহূদার লোকদেরকে ডেকে জড়ো করতে গেলেন, কিন্তু রাজা যে দিনের নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, সেই নির্দ্দিষ্ট দিনের র থেকে তিনি অনেক বেশি দেরী করলেন৷
6 দাউদ অবীশয়কে বললেন, “অবশালোম আমাদের যত না ক্ষতি করল, এখন বিখ্রির ছেলে শেব তার চেয়েও বেশি ক্ষতি করবে। তোমার মনিবের লোকজনকে নিয়ে তার পিছু ধাওয়া করো, তা না হলে সে সুরক্ষিত কোনো নগর খুঁজে নিয়ে আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে সেখানে চলে যাবে।”
তাতে দায়ূদ অবীশয়কে বললেন, “অবশালোম যা করেছিল, তার থেকে বিখ্রির ছেলে শেবঃ এখন আমাদের বেশি ক্ষতি করবে; তুমি নিজের প্রভুর দাসদেরকে নিয়ে তার পিছন পিছন তাড়া কর, নাহলে সে প্রাচীরে ঘেরা কোন কোন নগর দখল করে আমাদের নজর এড়াবে৷”
7 তাই যোয়াবের লোকজন এবং করেথীয়রা ও পলেথীয়রা এবং সব বীর যোদ্ধা অবীশয়ের নেতৃত্বাধীন হয়ে বের হল। বিখ্রির ছেলে শেবের পশ্চাদ্ধাবন করার জন্য তারা জেরুশালেম থেকে কুচকাওয়াজ শুরু করল।
তাতে যোয়াবের লোকজন, আর করেথীয় ও পলেথীয়রা এবং সমস্ত বীর তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে এল; তারা বিখ্রির ছেলে শেবের পিছন পিছন তাড়া করার জন্য যিরূশালেম থেকে চলে গেল৷
8 তারা যখন গিবিয়োনে বিশাল সেই পাথরটির কাছে ছিল, অমাসা তাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। যোয়াবের পরনে ছিল সামরিক পোশাক, এবং তাঁর কোমরে বাঁধা ছিল একটি কোমরবন্ধ, ও সেখানে ঝুলছিল খাপে পোরা একটি ছোরা। তিনি সামনে এগিয়ে গেলে ছোরাটি খাপ থেকে খুলে পড়ে গেল।
তারা গিবিয়োনের বড় পাথরের কাছে উপস্থিত হলে অমাসা তাদের সামনে এলেন৷ তখন যোয়াবের সৈনিক বেশ কোমরবন্ধনীর নিয়ে তৈরী ছিলেন, তার উপরে তলোয়ারের কোমরবন্ধনী ছিল; খোলা তলোয়ারটি তাঁর কোমরে বাঁধা ছিল, পরে যখন তিনি বাইরে যাচ্ছিলেন তখন তলোয়ারটি খুলে পড়তে দিলেন৷
9 যোয়াব অমাসাকে বললেন, “ভাই, তুমি কেমন আছ?” পরে যোয়াব ডান হাতে অমাসার দাড়ি টেনে ধরে তাঁকে চুম্বন করতে গেলেন।
আর যোয়াব অমাসাকে বললেন, “হে আমার ভাই, তোমার খবর ভালো তো?” পরে যোয়াব অমাসাকে চুমু দেওয়ার জন্য ডান হাত দিয়ে তাঁর দাড়ি ধরলেন৷
10 অমাসা যোয়াবের হাতে থাকা ছোরার কথা খেয়াল করেননি, আর যোয়াব সেটি অমাসার পেটে ঢুকিয়ে দিলেন, ও তাঁর পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। দ্বিতীয়বার আর যন্ত্রণা করতে হয়নি, অমাসা মারা গেলেন। পরে যোয়াব ও তাঁর ভাই অবীশয় বিখ্রির ছেলে শেবের পশ্চাদ্ধাবন করে গেলেন।
১০কিন্তু যোয়াবের হাতের তলোয়ারের দিকে অমাসার লক্ষ্য না থাকাতে তিনি সেটা দিয়ে তার পেটে আঘাত করলেন, তাঁর ভূঁড়ি বেরিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ল; যোয়াব দ্বিতীয় বার তাঁকে আঘাত করলেন না, তিনি মারা গেলেন৷ পরে যোয়াব ও তাঁর ভাই অবীশয় বিখ্রির ছেলে শেবের পিছন পিছন তাড়া করলেন৷
11 যোয়াবের লোকজনের মধ্যে একজন অমাসার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “যে কেউ যোয়াবকে পছন্দ করে, ও দাউদের পক্ষে আছে, সে যোয়াবের অনুগামী হোক!”
১১ইতিমধ্যে শেবের কাছে যোয়াবের একজন যুবক দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, “যে যোয়াবকে ভালবাসে ও দায়ূদের পক্ষে, সে যোয়াবকে অনুসরণ করুক৷”
12 পথের মাঝখানে অমাসার দেহটি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল, ও সেই লোকটি দেখেছিল, যেসব সৈন্যসামন্ত সেখানে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। সে যখন বুঝেছিল যে প্রত্যেকেই অমাসার দেহটির কাছে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, তখন সে তাঁর দেহটি পথের মাঝখান থেকে টেনে ক্ষেতে নিয়ে গেল ও সেটির উপর একটি কাপড় বিছিয়ে দিয়েছিল।
১২তখনও অমাসা রাজপথের মধ্যে নিজের রক্তে গড়াগড়ি দিচ্ছিলেন; অতএব সমস্ত লোক দাঁড়িয়ে আছে দেখে ঐ ব্যক্তি অমাসাকে রাজপথ থেকে ক্ষেতে সরিয়ে দিয়ে তাঁর উপরে একটি কাপড় ফেলে দিল; কারণ সে দেখল, যে কেউ তাঁর কাছ দিয়ে যায়, সে দাঁড়িয়ে থাকে৷
13 অমাসার দেহটি পথ থেকে সরিয়ে ফেলার পর প্রত্যেকেই বিখ্রির ছেলে শেবের পশ্চাদ্ধাবন করার জন্য যোয়াবের সাথে চলে গেল।
১৩তখন অমাসাকে রাজপথ থেকে সরান হলে সমস্ত লোক বিখ্রির ছেলে শেবের পিছন পিছন তাড়া করার জন্য যোয়াবের অনুগামী হল৷
14 শেব ইস্রায়েলের সব গোষ্ঠীভুক্ত এলাকার মধ্যে দিয়ে ও বিখ্রিয়দের গোটা অঞ্চল দিয়ে গিয়ে আবেল-বৈৎমাখায় পৌঁছেছিল, ও বিখ্রিয়রা একত্রিত হয়ে শেবের অনুগামী হল।
১৪আর তিনি ইস্রায়েলের সব বংশের মধ্যে দিয়ে আবেল ও বৈৎমাখায় এবং বেরীয়দের সমস্ত অঞ্চল পর্যন্ত গেলেন, তাতে লোকেরা জড়ো হয়ে শেবের পিছন পিছন চলল৷
15 যোয়াবের সব সৈন্যসামন্ত এসে আবেল বেথ-মাখায় শেবকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছিল। নগর পর্যন্ত তারা অবরোধকারী এক খাড়া বেষ্টন-পথ তৈরি করল, ও সেটি বাইরের দিকের প্রাচীরে উঠে গেল। তারা যখন প্রাচীর ভেঙে ফেলার জন্য বারবার সেখানে সজোরে যন্ত্রণা করছিল,
১৫পরে তারা আবেল ও বৈৎমাখাতে এসে তাকে ঘিরে ধরে নগরের কাছে ঢিবি প্রস্তুত করল এবং সেটা প্রাচীরের সমান হল; আর যোয়াবের সঙ্গী সমস্ত লোক প্রাচীর ধ্বংস করার জন্য সেটা ভাঙ্গতে লাগল৷
16 নগর থেকে একজন বুদ্ধিমতী মহিলা বলে উঠেছিল, “শোনো! শোনো! যোয়াবকে এখানে আসতে বলো, যেন আমি তাঁর সাথে কথা বলতে পারি।”
১৬পরে নগরের মধ্যে থেকে একটি বুদ্ধিমতি মহিলা চিত্কার করে বলল, “শোন, অনুগ্রহ করে যোয়াবকে এখান পর্যন্ত আসতে বল, আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলব৷”
17 তিনি মহিলাটির দিকে এগিয়ে গেলেন, ও সে জিজ্ঞাসা করল, “আপনিই কি যোয়াব?” “হ্যাঁ, আমিই,” তিনি উত্তর দিলেন। মহিলাটি বলল, “আপনার দাসীর যা বলার আছে, তা একটু শুনুন।” “আমি শুনছি,” তিনি বললেন।
১৭পরে যোয়াব তার কাছে গেলে সে মহিলাটি জিজ্ঞাসা করল, “আপনি কি যোয়াব?” তিনি উত্তর করলেন, “আমি যোয়াব৷” সে মহিলাটি বলল, “আপনার দাসীর কথা শুনুন;” তিনি উত্তর দিলেন, “শুনছি৷”
18 সে বলে যাচ্ছিল, “বহুকাল আগে লোকে বলত, ‘আবেলে গিয়ে উত্তরটি জেনে এসো,’ এবং সেভাবেই মামলার নিষ্পত্তি হত।
১৮পরে মহিলাটি এই কথা বলল, “আগেকার দিনের লোকে বলত, তারা আবেলে পরিকল্পনা জানতে চাইবেই চাইবে, এই ভাবে তারা কাজ শেষ করত৷
19 ইস্রায়েলে আমরাই শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বস্ত গোষ্ঠী। আপনি এমন এক নগরকে ধ্বংস করতে চাইছেন, যা ইস্রায়েলে এক মাতৃস্থানীয় নগর। আপনি কেন সদাপ্রভুর উত্তরাধিকার গ্রাস করতে চাইছেন?”
১৯আমি ইস্রায়েলের শান্তিপ্রিয় ও বিশ্বাসী লোকদের একজন, কিন্তু আপনি ইস্রায়েলে মায়ের মত একটি নগর বিনাশ করতে চেষ্টা করছেন; আপনি কেন সদাপ্রভুর অধিকার গ্রাস করবেন?”
20 “এ কাজ আমার কাছ থেকে দূরে থাকুক!” যোয়াব উত্তর দিলেন, “গ্রাস করার বা ধ্বংস করার বিষয়টি আমার কাছ থেকে দূরে থাকুক!
২০যোয়াব উত্তর করলেন, “গ্রাস করা কিংবা বিনাশ করা আমার থেকে দূরে থাকুক, দূরে থাকুক৷ ব্যাপার এইরকম নয়৷
21 ব্যাপারটি এরকম নয়। ইফ্রয়িমের পার্বত্য এলাকা থেকে একজন লোক, বিখ্রির ছেলে শেব—মহারাজের বিরুদ্ধে, দাউদের বিরুদ্ধে হাত উঠিয়েছে। এই একটি লোককে আমার হাতে তুলে দাও, আর আমি নগর ছেড়ে চলে যাব।” মহিলাটি যোয়াবকে বলল, “প্রাচীরের উপর থেকেই তার মুণ্ডুটি আপনার কাছে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে।”
২১কিন্তু বিখ্রির ছেলে শেবঃ নামে পর্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের একজন লোক রাজার বিরুদ্ধে, দায়ূদের বিরুদ্ধে হাত তুলেছে; তোমরা শুধু তাকে সমর্পণ কর, তাতে আমি এই নগর থেকে চলে যাব৷” তখন সেই মহিলা যোয়াবকে বলল, “দেখুন, প্রাচীরের উপর দিয়ে তার মাথা আপনার কাছে ছোঁড়া হবে৷”
22 পরে সেই মহিলাটি তার বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন পরামর্শ নিয়ে সব লোকজনের কাছে গেল, ও তারা বিখ্রির ছেলে শেবের মুণ্ডু কেটে সেটি যোয়াবের কাছে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। তিনি তখন শিঙা বাজিয়েছিলেন, ও তাঁর লোকজন সেই নগরটি ছেড়ে নিজের নিজের বাসায় ফিরে গেল। যোয়াবও জেরুশালেমে রাজার কাছে ফিরে গেলেন।
২২পরে সেই মহিলা বুদ্ধি করে সব লোকের কাছে গেল৷ তাতে লোকেরা বিখ্রির ছেলে শেবের মাথা কেটে যোয়াবের কাছে বাইরে ফেলে দিল৷ তখন তিনি তূরী বাজালে লোকেরা নগর থেকে ছিন্নভিন্ন হয়ে নিজের তাঁবুতে গেল এবং যোয়াব যিরূশালেমে রাজার কাছে ফিরে গেলেন৷
23 যোয়াব ছিলেন ইস্রায়েলের সমগ্র সৈন্যদলের প্রধান সেনাপতি; যিহোয়াদার ছেলে বনায় ছিলেন করেথীয় ও পলেথীয়দের প্রধান;
২৩ঐ দিনের যোয়াব ইস্রায়েলের সমস্ত সেনার শাসনকর্ত্তা ছিলেন এবং যিহোয়াদার ছেলে বনায় করেথীয় ও পলেথীয়দের শাসনকর্ত্তা ছিলেন;
24 অদোনীরাম বেগার শ্রমিকদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন; অহীলূদের ছেলে যিহোশাফট ছিলেন লিপিকার;
২৪আর অদোরাম রাজার কাজে নিযুক্ত দাসদের শাসনকর্ত্তা এবং অহীলূদের ছেলে যিহোশাফট ইতহাসকর্তা,
25 শবা ছিলেন সচিব; সাদোক ও অবিয়াথর ছিলেন যাজক;
২৫আর শবা লেখক ছিলেন এবং সাদোক ও অবীয়াথর যাজক ছিলেন৷
26 এবং যায়ীরীয় ঈরা ছিলেন দাউদের ব্যক্তিগত যাজক।
২৬আর যায়ীরীয় ঈরাও দায়ূদের যাজক (রাজমন্ত্রী) ছিলেন৷

< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 20 >